১৫ আগস্টের কালরাতে শহীদ হয়েছিলেন যারা
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ সময়টা ছিল ১৫ আগষ্ট, ১৯৭৫। সেদিন ঘাতকদের মূল টার্গেট ছিল বঙ্গবন্ধুসহ তার পুরো পরিবার ও নিকট আত্মীয়রা। ঘাতকরা তাদের কাউকেই পৃথিবীতে জীবিত রাখবে না এটাই ছিল তাদের মূল পরিকল্পনা। সেই অনুযায়ী তারা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ীসহ আশেপাশের একাধিক বাড়ীতে হত্যার জঘন্য উল্লাসে মেতে ওঠে।বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সর্বাধিনায়ক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলতুন্নেছা মুজিব ছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্য এবং বঙ্গবন্ধুর নিকট আত্মীয় সহ মোট ২৬ জন সেদিন শহীদ হন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় পশ্চিম জার্মানীতে অবস্থান করার কারণে তারা প্রাণে বেঁচে যান। তবে সে সময় তাদের বাংলাদেশে ফিরে আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
সেই কালো রাতে শহীদ হয়েছিলেন যারা
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের কালরাতে ঘাতকের হাতে নিহত হন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুননেছা, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কর্ণেল জামিল, সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক, প্রায় একই সময়ে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণির বাসায় হামলা চালিয়ে শেখ ফজলুল হক মণি, তাঁর অন্ত:সত্তা স্ত্রী আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াতের বাসায় হামলা করে সেরনিয়াবাত ও তার কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় বেন্টু খান।
কয়েক জনের সংক্ষিপ্ত পরিচয়-
শেখ কামাল (বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে)
জন্ম : টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, ৫ই আগস্ট, ১৯৪৯ সাল।
বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল ঢাকার শাহীন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বি. এ. (অনার্স) পাস করেন। ছায়ানটে সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি। নাটক, মঞ্চ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের একনিষ্ঠ সংগঠক ছিলেন। ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে ছিলেন প্রতিষ্ঠিত। শৈশব থেকেই খেলাধুলায় ছিলো তার প্রচণ্ড উৎসাহ। আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
বিশেষ করে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার মানোন্নয়নে তার শ্রম ও অবদান ছিল অপরিসীম। নতুন খেলোয়াড় তৈরির জন্য যথেষ্ট সময় দিয়ে নিজেই মাঠে অনুশীলন করতেন। ১৯৭৫ সালের ১৮ জুলাই সুলতানা খুকুর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ছাত্রলীগের একজন সংগঠক হিসেবে ’৬৬-এর স্বাধিকার আন্দোলন, ’৬৯-এর গণআন্দোলন ও ’৭১- এর অসহযোগ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাতেই বাড়ি থেকে চলে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। লেফটেন্যান্ট হিসেবে কর্নেল ওসমানীর এডিসি ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হওয়ার সময় তিনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এম.এ. শেষ পর্বের পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ওই দিন ভোরে বাড়ি ঘেরাওয়ের কথা শুনে নিচে নেমে এলে ঘাতকরা সবার আগে তাকে গুলি করে হত্যা করে।
শেখ জামাল (বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় ছেলে)
জন্ম : টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, ২৮ এপ্রিল, ১৯৫৪ সাল।
বঙ্গবন্ধুর মেজো ছেলে শেখ জামাল শৈশবে শাহীন স্কুল ও পরে রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন। একটি সঙ্গীত শিক্ষাকেন্দ্রে গিটার বাজানো শিখতেন। ক্রিকেট খেলতেন আবাহনী মাঠে। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ধানমণ্ডি ১৮ নং রোডের বাড়িতে মায়ের সঙ্গে বন্দি অবস্থায় থাকাকালে একদিন গোপনে বের হয়ে কালীগঞ্জ হয়ে মুক্তাঞ্চলে চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
ঢাকা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে থাকাকালে যুগোশ্লভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল জোসেফ টিটোর আমন্ত্রণে সেদেশে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ নিতে যান। তার পর লন্ডনের স্যান্ডহার্স্ট আর্মি একাডেমি থেকে সেনা প্রশিক্ষণ নেন। দেশে ফিরে তিনি দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট র্যাং কে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালের ১৭ই জুলাই ফুফাতো বোন রোজীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ১৫ আগস্ট তাদের এক সঙ্গে গুলি করে হত্যা করা হয়।
শেখ রাসেল (বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র)
জন্ম : ঢাকা, ১৮ অক্টোবর ১৯৬৪ সাল।
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিল। বাড়ির ছোট্ট ছেলে হিসেবে সবার আদরের ছিল। রাজনৈতিক পরিবেশ ও সঙ্কটের মধ্যেও সে চির সঙ্গী সাইকেল নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতো। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালীন দীর্ঘ নয়মাস পিতার অদর্শন তাকে এমনই ভাবপ্রবণ করে রাখে যে, পরে সব সময় পিতার কাছাকাছি থাকতে জেদ করতো। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবাইকে হত্যা করে তাদের লাশ দেখিয়ে তারপর রাসেলকে হত্যা করা হয়। তাকে কাজের লোকজন পেছনের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নিয়ে যায়। কিন্তু ঘাতকরা তাকে দেখে ফেলে। বুলেটবিদ্ধ করার পূর্বে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে অনুমতি নেওয়া হয়। রাসেল প্রথমে মায়ের কাছে যেতে চায়। মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মিনতি করেছিল ‘আমাকে হাসু আপার ( শেখ হাসিনা) কাছে পাঠিয়ে দিন’।
শেখ আবু নাসের (বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই)
জন্ম : টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, সেপ্টেম্বর, ১৯২৮ সাল।
শেখ আবু নাসের টুঙ্গিপাড়া ও গোপালগঞ্জে লেখাপড়া করেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে এবং বড়ভাই রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অল্প বয়সেই তাকে পিতার সঙ্গে পারিবারিক কাজকর্ম ও ব্যবসায় জড়িয়ে পড়তে হয়। এজন্য খুলনা শহরে বসবাস করতে হত। পরবর্তী সময়ে তিনি খুলনায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। ১৯৭৫-এ নিহত হওয়ার সময় বড় ভাইয়ের বাড়িতে ছিলেন। তিনি অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী এবং ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে যান।
সুলতানা কামাল খুকু (শেখ কামালের স্ত্রী)
জন্ম : ঢাকা, ১৯৫১ সাল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দবির উদ্দিন আহমেদের ছোট মেয়ে। মুসলিম গার্লস স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স পাস করেন। ১৯৭৫ সালে এম. এ পরীক্ষা দেন। স্কুল থেকে আন্তঃখেলাধুলায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন বিভাগে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। বিশেষ করে লংজাম্পে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক ক্রীড়ায় চ্যাম্পিয়ন হন।
মোহামেডান ক্লাবের পক্ষে ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান অলিম্পিকে লংজাম্পে দ্বিতীয়, ১৯৬৮ সালে ঢাকার মাঠে পাকিস্তান অলিম্পিকে লং জাম্পে ১৬ ফুট দূরত্ব অতিক্রমের রেকর্ডসহ স্বর্ণপদক পান। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯-৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করে জাতীয় ক্রীড়ায় অংশ নিয়ে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। ১৯৭০ সালে নিখিল পাকিস্তান মহিলা এথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় তিনি রেকর্ডসহ স্বর্ণ পদক পান। ১৯৭৩-এ লংজাম্পে স্বর্ণ পান। ১৯৭৪ এ লংজাম্প ছাড়াও সুলতানা ১০০ মিটার হার্ডলসে রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। বাংলাদেশের একজন শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বিয়ের আগে তাকে দেখে আশীর্বাদ করেছিলেন। বাড়ির বড় বউ হিসাবে তার বিপুল সমাদর হয়েছিল।
পারভীন জামাল রোজী (শেখ জামালের স্ত্রী)
জন্ম : সিলেট, ১৯৫৬ সাল।
বঙ্গবন্ধুর ছোট্ট বোন খাদেজা হোসেনের মেয়ে। পিতা সৈয়দ হোসেন বঙ্গবন্ধু সরকারের সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। ধানমণ্ডি গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে বদরুন্নেসা আহমেদ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলেন। মাত্র ৩০ দিনের বিবাহিত জীবন ছিল তার। মেহেদির রং তখনও তার দু’হাতে ছিল। বেগম মুজিবকে হত্যা করে ঘাতকরা জামালের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রোজী ও সুলতানাকে এক সঙ্গে গুলি ছুঁড়ে হত্যা করে। ওই বাড়িতে দু’বধুর শুভাগমন যেমন এক সঙ্গে তেমনি শোকাহত বিদায়ও ছিলো একসঙ্গে।
আবদুর রব সেরনিয়াবাত (বঙ্গবন্ধুর সেজ বোনের স্বামী)
জন্ম : বরিশাল, ১৪ই চৈত্র ১৩২৭ বাংলা।
বরিশাল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী ছিলেন। বেকার হোস্টেলেও এক সঙ্গে থাকতেন। বঙ্গবন্ধুর সেজ বোন আমেনা বেগমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কলকাতায় আই. এ. ও বি. এ পাস করার পরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাস করে বরিশালে আইনজীবী ও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হয়ে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১- এর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭২ সালের ১২ই এপ্রিল কৃষিমন্ত্রী হন। ১৯৭৩ এর নির্বাচনেও জয়লাভ করেন এবং বঙ্গবন্ধু তাকে সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী নিয়োগ করেন। বঙ্গবন্ধু সরকারের কৃষিক্ষেত্রে সংস্কার ও উৎপাদনে এবং কৃষকদের সহায়তা দেওয়ায় তার ভূমিকা ছিল যথেষ্ট জোরালো। একজন সৎ আদর্শবান ব্যক্তি হিসেবে তিনি সব মহলে প্রশংসিত ছিলেন।
শেখ ফজলুল হক মনি (বঙ্গবন্ধুর মেজো বোনের বড় ছেলে)
জন্ম : টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ ৪ঠা ডিসেম্বর, ১৯৩৯ সাল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একনিষ্ঠ অনুসারী, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সাংবাদিক, দৈনিক বাংলার বাণী ও বাংলাদেশ টাইমস-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, সাপ্তাহিক ‘সিনেমা’ ও মধুমতি মুদ্রণালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণি ১৯৫৬ সালে ঢাকা নবকুমার স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৫৮ সালে ঢাকা জগন্নাথ কলেজ থেকে আই.এ. ১৯৬০ সালে বরিশাল বি. এম. কলেজ থেকে বি. এ. এবং ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ. বং পরবর্তী সময়ে এলএলবি পাস করেন।
১৯৬৬ সালে শেখ ফজলুল হক মণি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত বাঙালির স্বাধিকারের সনদ ঐতিহাসিক ছয়দফার পক্ষে আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ছয় দফা আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণীকে সংগঠিত করা এবং ঐতিহাসিক ৭ জুনের হরতাল সর্বাত্মক সফল করার ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। ওই সময় সরকার শেখ মনির বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে। ১৯৬৬ সালের জুলাই মাসে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর মুক্তিযোদ্ধা ও যুব সমাজকে সংগঠিত করে দেশগড়ার কাজে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে শেখ মনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি ছিলেন আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তেজগাঁও আঞ্চলিক শ্রমিক লীগের সভাপতি হিসেবে মনি শ্রমিক লীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করলে শেখ মনি অন্যতম সম্পাদক নিযুক্ত হন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মনি ঘাতকের হাতে নিহত হন। সেই রাতে শেখ মনির জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ ফজলে শামস পরশ ও কনিষ্ঠপুত্র শেখ ফজলে নূর তাপস অলৌকিকভাবে রক্ষা পায়। পরশের বয়স ছিল পাঁচ বছর এবং তাপসের মাত্র তিন বছর।
বেগম আরজু মনি (শেখ ফজলুল হক মনির স্ত্রী)
জন্ম : বরিশাল, ১৫ মার্চ ১৯৪৭ সাল।
বরিশাল সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং বিএম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও বি. এ. পাস করেন। আবদুর রব সেরনিয়াবাতের জ্যেষ্ঠ কন্যা ছিলেন। ১৯৭০ সালে খালাত ভাই শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিয়ে হয়। দু’সন্তানের মা আরজুকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বামীর সঙ্গে গুলি করে হত্যা করে ঘাতকরা। ১৯৭৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এ পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
কর্ণেল জামিল উদ্দিন আহমেদ (বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার)
জন্ম : গোপালগঞ্জ, ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩ সাল।
১৯৫২ সালে ক্যাডেট হিসেবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৯৫৫ সালে কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তান থেকে ফিরে আসার পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সচিবালয়ে যোগ দেন এবং বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে ভোর ৫টায় বঙ্গবন্ধু লাল টেলিফোনে তাকে সেনাবাহিনীর বাসভবন ঘেরাওয়ের কথা জানালে সঙ্গে সঙ্গে রওনা হন তিনি। কিন্তু সোবহানবাগ মসজিদের সামনে ঘাতকরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
বেবী সেরনিয়াবাত (আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ছোট মেয়ে)
জন্ম : বরিশাল, ২০ মে ১৯৬০ সাল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরী হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। নিহত হবার সময় পিতার কাছে ছিল।
আরিফ সেরনিয়াবাত (আবদুর রব সেরনিয়াবাতের কনিষ্ঠ পুত্র)
জন্ম : ২৭ মার্চ, ১৯৬৪ সাল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরী উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিল। নিহত হওয়ার সময় ঢাকায় পিতার কাছে ছিল।
সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু (আবদুর রব সেরনিয়াবাতের নাতি)
জন্ম : গৌরনদী, বরিশাল, ২২ জুন ১৯৭১ সাল।
আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ছেলে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর জ্যেষ্ঠ পুত্র বাবু নিহত হওয়ার সময় বয়স ছিল ৪ বছর এবং ঢাকায় দাদার বাসায় বেড়াতে এসেছিল।
শহীদ সেরনিয়াবাত (আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ভাইয়ের ছেলে)
জন্ম : বরিশাল, ২৬ মার্চ ১৯৪০ সাল।
বরিশাল বি এম স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, কলেজ থেকে আই. এ. ও বি. এ. পাস করেন। ঢাকা থেকে আইন পাস করে বরিশালে কোর্টে আইনজীবী ছিলেন। তিনি দৈনিক বাংলা পত্রিকার বরিশালের সংবাদদাতা ছিলেন। ১৫ আগস্ট চাচার বাসায় অবস্থানকালে নিহত হন।
আবদুল নঈম খান রিন্টু (আওয়ামী লীগ নেতা আমীর হোসেন আমুর খালাতো ভাই)
জন্ম : বরিশাল, ১ ডিসেম্বর ১৯৫৭ সাল।
বরিশাল জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন। বরিশালের একটি সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে ঢাকায় এসেছিলেন এবং তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় অবস্থান কালে নিহত হন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট কালোরাতে ঘাতকের বুলেটে নির্মমভাবে নিহত সকল শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।