শোক দিবস থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারী
মতিয়ার চৌধুরী
২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।১৯৯৯ খৃষ্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় শোকদিবস ২১শে ফেব্র“য়ারীকে ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষনা করার পর থেকে দিনটি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পলিত হয়ে আসছে।বিশ্বের সকল ভাষাভাষী মানুষ এদিনটিকে যার-যার মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করছেন।হোক ভাষাটি বাংলা-সিলেটী গুজরাটি,হিন্দি, ইংরেজী কিংবা আরবী।আমাদের জন্যে দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যময় কেননা আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। আর এই বাংলাভাষাকে তৎকালীন পূর্বপাকিস্থানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে কত প্রাণের আত্যাহুতি দিতে হয়েছে।
রাষ্ট্রভাষা আর মার্তৃভাষা একজিনিষ নয়, ভাষাবিজ্ঞানীরা এভাবেই এর সজ্ঞা নির্ধারণ করেছেন মানুষ জন্মের পর মায়ের কাছ থেকে শুনে যে ভাষায় কথা বলতে শেখে তার নাম মাতৃভাষা। রাষ্ট্র পরিচালনার সুবিধার জন্যে সকলের বোধগম্য এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ট জনসংখ্যার ব্যবহৃত ভাষাকে সকলের মতামতের উপর গুরুত্ব প্রদান করে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যে শিক্ষা,অফিস-আদালত সহ রাষ্ট্রীয় কাজে যেভাষার প্রচলন করা হয় তার নাম রাষ্ট্রভাষা। বিশ্বের অনেক দেশেই একাধিক রাষ্ট্রভাষার প্রচলন রয়েছে । যেমন ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিন্দি ও ইংরেজী, আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা, গ্রেটব্রিটেনে ইংরেজী এবং ওয়েলস।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি হলো মাতৃভাষার কোন বিকল্প নেই । পৃথিবীর যে কোন ভাষাকে আয়ত্ব করতে হলে প্রয়োজন মাতৃভাষার। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে মাতৃভাষার বিকল্প নেই। ২০০০ সালের পূর্বপর্যন্ত আমরা বাঙ্গালীরা এ দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে আসছি। ভাষার জন্যে বাংলাদেশ এবং ভারতের আসমে রক্তপাতের ঘটনা ঘটেছে। তাই বিশ্ববাঙ্গালীর কাছে এ দিবসটির গুরুত্ব অসীম। কেননা ভাষার জন্যে বাঙ্গালীর আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরুপ পৃথিবীর সকল মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইউনেস্কো কর্তৃক ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ২১ ফেব্র“য়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষনা করা হয়। এর পর থেকে বিশ্বব্যাপী দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বাংলাভাষী মানুষের কাছে এ দিনটি আনন্দ এবং বেদনার, অত্যন্ত দুঃখ জনক হলেও সত্যি যে ইদানিং লক্ষ্যকরা যাচ্ছে কোন কোন ইতিহাসবিদ এর আসল সত্যকে আড়াল করে মনগড়া ভাবে লিখে ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্ঠায় লিপ্ত। আমাদের উচিত ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস ভবিষৎ প্রজন্মকে জানানো। যদি আমরা এর আসল সত্য তুলে ধরতে ব্যর্থ হই তাহলে ভাষা শহীদের আত্মা যেমন কষ্ট পাবে অন্যদিকে আগামী প্রজন্ম এর সঠিক ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হবে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি আদায় করতেও আমাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে, লবিং কুঠনৈতিক প্রচেষ্টা ছাড়া তা এমনে এমনে আসেনি। এখানেই শেষ নয়, আছে আরো অনেক কথা। কানাডা প্রবাসী অব্দুস সালাম ও আবুল বরকত নামের দুই প্রবাসী বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার দাবী তুললে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়। তারা বাংলাদেশ সরকারের সাথে যোগাযোগ করলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবিষয়ে এগিয়ে আসেন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালায়ের উপাচার্য পরবর্তিতে লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার জনাব সাইদুর রহমান খান সহ ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইউনেস্কতে প্রেরণ করেন এই প্রতিনিধি দল ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে দুইসপ্তাহ অবস্থান করে বিভিন্ন দেশের কুটনীতিকদের সাথে লবিং শুরু করেন। বাংলাদেশ সরকারের লবিংয়ের কারনে দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ করে। লবিষ্টদের ভাষ্যমতে যে পাকিস্তান আন্দোলনকারীদের উপর ৫২সালে গুলি চালিয়েছিল সেই পাকিস্তানও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার পক্ষে ভোট দেয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগী নাহলে এটিও সম্ভব হতনা আর এর কৃতিত্বের দাবীদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকার ক্ষমতায় না থাকলে হয়তোবা দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা পেতোনা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যারা সেদিন বিশ্বব্যাপী লবিং করেছিলেন সেই প্রতিনিধি দলের সদস্য ড. সাইদুর রহমান খান রাজশাহী বিশ্বদিব্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, পরবর্তিতে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে হাইকমিশনার হিসেবে লন্ডনে প্রেরণ করে, তিনি যখন লন্ডনে হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তখন আমি ড. সাইদুর রহমানের একটি সাক্ষাৎকার গ্রহন করি। তার মতে সেসময় যদি বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক ভাবে লবিং না করতো তাহলে কোন অবস্থাতেই ২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পেতনা, তার মতে এর একক কৃতিত্বের দাবীদার শেখ হাসিনা। এখানে শেষ নয় শেখ হাসিনাই প্রথম বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ভাষা ইন্সটিটিউট প্রতিষ্টা করেন,এই ইন্সটিটিউটের মাধ্যমে বাংলা‘র সঠিক ইতিহাস যেমন গবেষণা হচ্ছে ঠিক তেমনি ভাবে বাংলাদেশে অন্যান্য ভাষার বিকাশেও কাজ হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্টীর মানুষেরা তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের সুযোগ পাচ্ছে। শুধু তাই নয় শেখ হাসিনা ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সিটিউিট প্রতিষ্টার মাধ্যমে বিশ্বের সকল ভাষার গবেষণার সুযোগ করে দিয়েছেন।
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্ত হলে আজকের বাংলাদেশ পূর্বপাকিস্তান হিসেবে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তরর্ভূক্ত হয়।তখন বর্তমান সিলেট বিভাগের একটি অংশ গণভোটে আসাম প্রদেশ থেকে পূর্বপাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয়।ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যার উপর সকল দেশের রাষ্ট্রভাষা নির্ধারিত হয়। জন্মলগ্নে নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের পূর্ব এবং পশ্চিম মিলিয়ে বাংলাভাষা ব্যবহার কারীর সংখ্যাই ছিল বেশী। সেই দিক বিবেচনায় বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র্রভাষা করাই ছিল যুক্তিযুক্ত। কিন্তু তা নাকরে পশ্চিমারা চাইলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হউক উর্দু। এমনকি জোর করে হলেও তারা চাইলেন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র্রভাষা করতে। যা ছিল সম্পুর্ণ অন্যায় এবং অযৌক্তিক। কেননা আজও পাকিস্তানের মানুষ উর্দুতে কথা বলে না।
অধিকাংশ পাকিস্তানী পাঞ্জাবী-পুস্তু-বেলুচ এবং হিন্দি ভাষাতে কথা বলতে অভ্যস্থ। সর্বশেষ ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান মতে ৮% পাকিস্তানী উর্দুতে কথা বলে। তাদের যুক্তি ছিল যেহেতু পাকিস্তান মুসলিম রাষ্ট্র সে কারনে রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত উর্দু। একই সময়ে স্বাধীন হওয়া ভারতের রাষ্ট্রভাষা করা হয় হিন্দি ও ইংরেজী। ধর্মান্ধ পাকিস্তানপন্থীদের অনেকেরই ধারনা হিন্দি বলতে হিন্দুদের ভাষা বুঝায়। এখানেই শেষ নয় ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্র“য়ারী পাকিস্তানের সংবিধান তৈরীর জন্য গণপরিষদের বৈঠকে ব্রাম্মনবাড়ীয়ার বাবু শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (পরবর্তিতে ১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর হাতে শহীদ) ইংরেজী ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে সাংবিধানিক ভাষা হিসেবে অর্ন্তভুক্তির দাবী জানান, সেখানে তার দাবী প্রত্যাখ্যাত হয়। একই সনের ১১ মার্চ তৎকালীন ছাত্র সমাজ ঢাকা শহরে প্রথম রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করে। পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবি মহলে এ নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠে। কিন্তু কোন ধরনের মতামতের তোয়াক্কা না-করেই পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা কায়দে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্না ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকায় এসে ঘোষনা করলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। রমনা মাঠের জনসভায় তার মুখ থেকে উচ্চারিত হলো (উর্দু উইল বি দি ষ্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ অব পাকিস্তান।) ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আবার একই কথা উচ্চারণ করেন তিনি।
জিন্নার এ বক্তব্যে বাংলার জনগণ খুবই মর্মাহত হন। বাঙ্গালীরা মেনে নিতে পারেননি জিন্নার অযৌক্তিক মন্তব্যকে। সর্বাধিক বিবেচনায় যেহেতু পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের মাতৃভাষা বাংলা সুতরাং বাংলাকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। যেহেতু পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল সা¤্রদায়িকতার ভিত্তিতে একারণেই তারা কোন অবস্থাতেই বাংলাকে পূর্বপাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মানতে রাজি ছিলেন না। রাষ্ট্রভাষা ইস্যু নিয়ে মনোমালিন্য চলতে থাকে। ভাষা নিয়ে কায়দে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নার মন্তব্য পূর্ববাংলার জনসাধারণকে হতাশ করে। সমগ্র ঢাকা জুড়ে অনুষ্ঠিত হয় বিক্ষোভ কর্মসুচী। পরবর্তিতে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির সাথে খাজা নাজিম উদ্দিনের একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এ নিয়ে সচেতন মহলে শুরু হয় চিন্তা-ভাবনা।
১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত বাংলার মানুষ প্রতিবছর ১১ মার্চকে রাষ্ট্রভাষা দিবস হিসেবে পালন করেন। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন মুসলিমলীগের ঢাকা অধিবেশেনে আবার উচ্চারণ করেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। তার এই বক্তব্যের পর বাংলার মানুষ একই দাবীর পক্ষে সংগঠিত হতে থাকে। এর সূত্র ধরে ৪টা ফেব্র“য়ারী ঢাকা শহরে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। ১১ ও ১৩ ফেব্রুয়ারী কাল পতাকা দিবস পালিত হয়। ২০ ফেব্রƒয়ারী দেশব্যাপী ডাক দেয়া হয় সাধারণ ধর্মঘটের। ঐ দিন কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন ও প্রাদেশিক সরকারের মূখ্যমন্ত্রী ময়মনসিংহের নূরুল আমিন সারাদেশে ১৪৪ ধারা জারি করেন। ২১ ফেব্র“য়ারী ১৪৪ ধারা অমান্য করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবীতে পাকিস্তানী পুলিশের গুলিতে শহিদ হন আব্দুল জব্বার, আবুল বরকত, রফিক উদ্দিন সহ কয়েকজন। ২২ ফেব্র“য়ারী সারাদেশর মানুষ ভিক্ষোবে ফেটে পড়ে। ঢাকায় পুলিশ অবারও মিছিরের উপর গুলি চালালে ঘটনাস্থলে শহীদ হন শফিউর রহমান, আব্দুল আউয়াল ও আব্দুর রহিম। ২৩ ফেব্র“য়ারী ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা সাঈদ হায়দারের নকশানুযায়ী ১১ ফুট দৈর্ঘ প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। ২৪ ফেব্র“য়ারী শহীদ শফিউর রহমানের পিতা এর উদ্ভোধন করেন।
এখন আসা যাক ভাষা আন্দোলনের সূচনা প্রসঙ্গে, কিভাবে ১৯২৭ সালে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয় সেই সাথে ভাষা আন্দোলনে সিলেটসহ বাংলার অন্যান্য অঞ্চলের অবদান সম্পর্কে। অনেকেই একথাটি জানেন না, আধুনিক ইতিহাসবিদদের কেউ কেউ আবার সুকৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চান। কেন তাদের এই হীনমন্যতা? বাংলাদেশের বাইরে যত শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা হয়েছে তা-ও প্রবাসী সিলেটেীদের দ্বারা গ্রেটব্রিটেনের শহীদ মিনার গুলোর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বিলেত প্রবাসী ব্রিটিশ সিলেটীদের পরিশ্রমেই এগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । কোন আন্দোলনই হঠাৎ করে গজিয়ে উঠেনা। এর পেছনে সুনিদৃষ্ট কিছু কারণ চিন্তা চেতনা জনমত গঠন এবং কর্মের প্রয়োজন হয়। প্রাথমিক পর্যায় যারা কোন একটি আন্দোলনের বীজ বপন করেন নিঃসন্দেহে তারা দুরদৃষ্টি সম্পন্ন। একটা প্রবাদ আছে ‘শ্রীহট্টে মধ্যমা নাস্তি’ সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে এ সত্যটি প্রত্যক্ষ করা যায় । ভাষা আন্দোলন শুধু ঢাকা বা সিলেটেই সীমাবদ্ধ রয়নি এর বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছিল। ভাষা আন্দোলনে সিলেটের অবদানকে সাংবাদিক গবেষক আব্দুল হামিদ মানিক তিন ভাগে ভাগ করেছেন। সেটা হলো ১৯৪৮ পূর্ববর্তি ১৯৪৮ এবং ১৯৪৮ পরবর্তি ১৯৫২ সালের মার্চ পর্যন্ত। আর এই তিন পর্যায়েই সিলেট অঞ্চলের মানুষের ভূমিকা ছিল অগ্রণী।
প্রকৃত সত্য ঘটনাটি উদ্ধারের জন্যে আমি এখানে বিষয়টা পরিস্কার করতে চাই। সাম্প্রতিক সময়ে কোন কোন লেখক ভাষা আন্দোনের ইতিহাস লিখছেন সুকৌশলে তারা আসল সত্যটাকে আড়াল করতে চাইছেন। সে যাক চলে আসি মূল প্রসঙ্গে ঃ ব্রিটিশ শাসন, সমগ্র ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন সময়টা ১৯২৩ সাল। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ গ্রামের মখফুর আলী আমিন নামে একজন খেলাফত কর্মী ছিলেন। ব্রিটিশ বিরোধী ভূমিকার কারণে তার বাড়ীতে পুলিশী অভিযান চালানো হয়। আর যে পুলিশ কর্মকর্তা অভিযান পরিচালনা করেন তার নাম ছিল আব্দুল হামিদ আখন্দ। পুলিশ মখফুর আলীর বাড়ী তল্লাশী করতে গিয়ে পবিত্র কোরআন শরীফের অবমাননা করে। এমনকি মাটিতে ফেলে পবিত্র কোরআন ছিঁড়ে ফেলে। এই কোরআন অবমাননার
সংবাদটি সিলেট থেকে প্রকাশিত নিকুঞ্জ বিহারী গোস্বামী সম্পাদিত সাপ্তাহিক জনশক্তি পত্রিকায় ছবি সহকারে ছাপা হয়। ঘটনার তিন বছর পর গোলাপগঞ্জের রণকেলি গ্রামের সন্তান তৎকালীন আসাম ব্যবস্থাপক সভার সদস্য আব্দুল হামিদ চৌধুরী (সোনা মিয়া) আসাম ব্যবস্থাপক সভায় বিষযটি উত্থাপন করেন। তখনকার সময়ে আসাম ব্যবস্থাপক সভায় ইংরেজীতে কথা বলার রেওয়াজ ছিল। ব্যবস্থাপক সভার সদস্য আব্দুল হামিদ চৌধুরী (সোনা মিয়া) যখন শুদ্ধ বাংলায় বক্তব্য রাখছিলেন স্পীকার তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ইংরেজীতে বলার পরামর্শ দেন। তখন ব্যবস্থাপক সভার অন্যান্য সিলেটী সদস্যরা একযোগে উঠে স্পীকারে কথার প্রতিবাদ করে বলেন এই অঞ্চলের মানুষের মাতৃভাষা সিলেটী হলেও অফিস-আদালত সহ রাষ্ট্রীয় কাজে বাংলা ব্যবহার করেন। সুতরাং তাঁকে শুদ্ধ বাংলাতে কথা বলার অনুমতি দেয়া হউক। অনেক যুক্তি তর্কের পর স্পীকার তাঁকে বাংলায় কথা বলার অনুমতি দেন। এর পর থেকে আসাম ব্যবস্থাপক সভার সিলেটী সদস্যরা বাংলাতেই কথা বলতেন। সেদিন যেসব সিলেটী সদস্য ব্যবস্থাপক সভায় উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য আব্দুর রশিদ চৌধুরী, দেওয়ান আব্দুল বাসিত, ব্রজেন্দ্র নারায়ন চৌধুরী, বিপীন চন্দ্র পাল, মোদাব্দির হোসেন চৌধুরী, আব্দুল হমিদ চৌধুরী প্রমুখ। দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা যুক্তিতর্কের পর আসাম ব্যবস্থাপক সভায় আইন পাশ হয় ইংরেজীর পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় কাজে বাংলা ব্যাবহার করা হবে। এদিন থেকে আসাম প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভায় বাংলা স্বীকৃতি লাভ করে।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর সিলেট থেকেই প্রথম ভাষা আন্দোলনের সূচনা করা হয়। এখানে আরেকটা কারণ ছিল যখন ভারত বিভক্ত হয় তখন গণভোটের মাধ্যমে সিলেটের একটি অংশ আসাম থেকে তৎকালীন পূর্বপাস্তিানের সাথে যুক্ত করা হয়। যা বর্তমান সিলেট বিভাগ। এমনকি এই গণভোট নিয়েও অভিযোগ রয়েছে প্রচুর। কংগ্রেস এবং জমিয়তে উলামায়েহিন্দ এর সমর্থকরা সিলেটকে পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্তি মেনে নিতে পারেননি। তাদের অভিযোগ ছিল ভোট ডাকাতির মাধ্যমে সিলেটকে পূর্বপাকিস্থানের অন্তরর্ভূক্ত করা হয়। শুধু ভোট কারচুপিই নয় গণভোটের রায়কে উপেক্ষা করে রেটক্লিপের মাধ্যমে উভয় দেশের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। তৎকালীন (মৌলভীবাজার মহকুমা) দক্ষিন সিলেটের মানুষ ভোট দেয় অবিভক্ত ভারতের পক্ষে আর কমিরগঞ্জ মহকুমার মানুষ ভোট দেয় পাকিস্তানের পক্ষে, করিমগঞ্জকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয় আর দক্ষিন সিলেটকে করা হয় পুর্বপাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত।
বিবেকবান মুসলীমলীগ কর্মীরাও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে মেনে নিতে পারেননি। তাদের যুক্তি ছিল পাকিস্তান সরকার সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের ভাষার প্রতি সম্মান না দেখিয়ে সাম্প্রদায়িক ভাবে উর্দৃূকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। সিলেটর সাংবাদিক সাহিত্যক সচেতন ছাত্র সমাজ গোড়াতেই সোচ্চার হয়ে উঠেন। সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ নুরুল হক সম্পাদিত মাসিক আল-ইসলাহ, দার্শনিক দেওয়ান আজরফ ও রাজনীতিবিদ মাহমুদ আলীর পরিচালনাধীন ( দক্ষিন সুনাম সুনামগঞ্জের হাঁসকুড়ি গ্রামের জনাব মাহমুদ আলী ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ায় স্বাধীনতার পর পাড়ি জমান পাকিস্তানে সেখানেই মৃত্যু বরন করেন।) সাপ্তাহিক নওবেলাল সে সময় বাংলার পক্ষে সাহসী এবং স্পষ্ট ভূমিকা পালন করে। ১৯৪৮ সালে নওবেলাল যে সময় বাংলার পক্ষে জোর আওয়াজ তুলে তখনও ঢাকা থেকে কোন দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ হয়নি। বলতে গেলে ১৯৪৮ সনে পূর্ববঙ্গে ভাষা আন্দোলনের একমাত্র মুখপত্র হয়ে উঠে ছিল সিলেটের নওবেলাল। এর প্রভাব সিলেট সহ সারা বঙ্গেই পড়েছিল। ১৯৪৮ সালের পূর্বে নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভাষা কি হবে সেটা নিয়ে কেউ ভাবেননি। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ জিয়া উদ্দিন দৈনিক আজাদে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ করলে ডঃ মুহম্মদ শহিদুল্লা জিয়া উদ্দিনের যুক্তিকে খন্ডন করে একটি নিবন্ধ লিখেন। ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার সন্তান অধ্যাপক সাহেদ আলীর পরিচালনাধীন ঢাকার তমদ্দুন মজলিশ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু নামক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে। একই সনের ৯ই নভেম্বর সিলেট আলীয়া মাদ্রাসা হলে সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের বার্ষিক সভায় সুনামগঞ্জের ছাতকের ছৈলা
গ্রামের সন্তান তৎকালীক শিক্ষা অফিসার মুসলিম চৌধুরী রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ঐ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজারের কৃতিপুরুষ সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী। সেদিন মুসলীমলীগ পন্থীরা অনুষ্ঠান বানচালের চেষ্ঠা করে ব্যর্থ হন। সৈয়দ মুজতবা আলী অত্যন্ত সাহসিক ভূমিকা পালন করেন। সভাস্থলে একজন অধ্যাপক পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা আরবী করার পক্ষে বার বার শ্লোগান দিয়ে অনুষ্ঠান পন্ড করার চেষ্ঠা করেন। একদিকে সরকারী চাকুরী অন্যদিকে শাসক দলের হুমকি সব রকম ভয়ভীতি উপেক্ষা করে মুসলিম চৌধুরী যে প্রবন্ধটি সমাবেশে পড়েন তা পরবর্তিতে মাসিক আল-ইসলায় প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধটি এখনও স্বযতনে মুসলিম সাহিত্য সংসদে রক্ষিত আছে। পরবর্তিতে এ প্রবন্ধটি ভিলেজ ডাইজেস্ট পত্রিকায় পূনঃমুদ্রণ করা হয়। আল-ইসলাহ সম্পাদক জনাব নূরুল হক সাহেব সারা বাংলাদেশে পত্রযোগাযোগ অব্যাহত রাখেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর সিলেটের সর্বত্র গ্রামে-গঞ্জে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে মিছিল মিটিং অব্যাহত থাকে। প্রতিটিতি সভা-সমাবেশের সংবাদ আল-ইসলাহ পত্রিকায় ছাপা হয়। যা এখনও মুসলিম সাহিত্য সংসদে রক্ষিত রয়েছে। এই আন্দোলনে সে সময়কার রাজনৈতিক এবং ছাত্র নেতাদের যাদের প্রশংসনীয় ভূমিকা রয়েছে তাদের অনেকেই আজ আর ইহজগতে নেই। তাদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্যরা হলেন সাহিত্যিক মতিন উদ্দিন আহমদ, ডঃ সৈয়দ মুজতবা আলী, মৌলানা ইব্রাহিম চতুলী, মৌলানা শাখাওয়াতুল আম্বিয়া, সাবেক
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ, সাবেক মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজী, কমরেড আসাদ্দর আলী, পীর হবিবুর রহমান, এ এইচ সাআদাত খান, বেগম জোবেদা রহিম চৌধুরী, সৈয়দা সাহেরা ভানু, সৈয়দা লুৎফুন্নেছা খাতুন, মাহবুব আলী, আব্দুল হাই (সুনামগঞ্জ) দেওয়ান মুজিবুর রহমান চৌধুরী, মৌলভী আব্দুর রশিদ চৌধুরী, রফিকুল হক চৌধুরী, আব্দুর নূর চৌধুরী, মৌলানা রেদওয়ান উদ্দিন চৌধুরী, আব্দুল বারী চৌধুরী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মোহিত, বেগম হাজেরা মাহমুদ, দেওয়ান ওহিদুর রেজা, প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে ঢাকাতে ১৯৫১ সালের ২৩ ফেব্র“য়ারী ডঃ শহিদ উল্লা, ইব্রাহিম খা সহ দেশের শ্রেষ্ট বুদ্দিজীবিরা পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রীর কাছে স্মারক লিপি প্রদান করেন। ১৯৫১ সালের ১৬ থেকে ১৯ মার্চ চট্রগ্রামে পূর্বপাকিস্থান সাংস্কৃতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এই সম্মেলনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে দাবী তোলা হয়। ১৯৫১ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার পলটন ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ। ৭ ফেব্রƒয়ারী গঠিত হয় সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ। সরকারীভাবে ভাষা আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ এবং বাস্তব ইতিহাস রচনার উদ্যোগ নেয়া হউক। যারা ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন তাদের অনেকেই আজ ইহজগতে নেই। যারা জীবিত আছেন তাদেরকে দলমতের উর্ধে থেকে মূল্যায়ন করা উচিত। সেটাই হবে আমাদের জন্য সুন্দর ও স্বার্থক।
বাংলাদেশ ছাড়াও আফ্রিকার একটি দেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা, দেশটির নাম সিরিলিওন। সিরিলিওন সরকার তাদের ভাষার পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষনা করেছে। এর কৃতিত্বের দাবীদার আন্তর্জাতিক শান্তিমিশনে অংশ নেয়া বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। সিরিলিওনে শান্তি মিশনে অংশ নেয়া বাংলাদেশের সেনা সদস্যরা ভালবাসা দিয়ে সিরিলিওনের মানুষকে আপন করে নিয়েছেন। বাংলাদেশের সেনা সদস্যদের সেবা আন্তরিকতা ও ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে সেদেশের সাধারন মানুষ আমাদের ভাষাও সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যায়। সিরিরিওনরা স্বেচ্চায় বাংলাভাষা শিখতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের সেনা সদস্যরা সিরিলিওনে শান্তি ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে। সিরিলিওনের জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষ এখন সিরিলিয়নী ভাষার পাপাশি বাংলায় কথা বলতে অভ্যস্ত।
ভাষা শহীদদের জন্যে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে প্রার্থনা জানাই। আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস অমর হউক। সেই সাথে জীবন্ত কিংবদন্তি ভাষাসৈনিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর একুশের গানের একটি লাইন উদৃত করে লেখার সমাপ্তি টানতে চাই ‘‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্র“য়ারী আমি কি তুমায় ভূলিতে পারি’’।
(তথ্য সূত্র ঃ ধারাবাহিক নিবন্ধ ইতিহাস-বেত্তা মনির উদ্দিন চৌধুরী সিলেট সমাচার ১৯৮০, মতিয়ার রাহমান চৌধুরী ২১ফেব্র“য়ারী সংখ্যা সাপ্তাহিক চিত্রকল্প ঢাকা ১৯৮১, রফিকুর রহমান লজু ২১ সংখ্যা দৈনিক সিলেটের ডাক সিলেট ২০০৩, মৌলভীবাজার জেলার ইতিহাস রব্বানী চৌধুরী আগামী প্রকাশনী ঢাকা ২০০০, মাসিক আল ইসলাহ মরহুম নুরুল হক স¤াদিত ১৯৫৪ ফেব্র“য়ারী সংখ্যা, আব্দুল হামিদ চৌধুরী সোনামিয়া লেখক রফিক আহমদ চৌধুরী সিলেট ১৯৮৭, সিলেট ডিস্ট্রিক গেজিটিয়ার ১৯৭৪, ভাষা আন্দোলনে সিলেটর অবদান আব্দুল হামিদ মানিক ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঢাকা-১৯৮৩ ড.সাইদুর রহমান খান সাবেক হাইকমিশনার লন্ডন যুক্তরাজ্য।
লেখক: বিলেতের প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক।