২ আসামির মৃত্যুদন্ডের সাজা কমে যাবজ্জীবন
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ হবিগঞ্জের বাহুবলে ৪ শিশু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৩ আসামির সাজা কমিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৩ আসামির মধ্যে ২ জনকে যাবজ্জীবন ও ১ জনকে খালাস দেয়া হয়েছে।
বাহুবল থেকে সংবাদদাতা জানান, ১৬ অক্টোবর সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি এমদাদুল হক ও বিচারপতি কেএম জাহিদ সারওয়ার কাজলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত রুবেল মিয়া, আরজু মিয়ার সাজা কমানো হয়। খালাস পান পলাতক উস্তার মিয়া। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ আহমেদ হিরো বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে রাষ্ট্রপক্ষ। এর পুর্বে ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই রুবেল মিয়া, আরজু মিয়া এবং উস্তার মিয়া প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানাসহ মৃত্যুদন্ড দেন সিলেটের দ্রুত বিচার আদালত।
মামলা সুত্রে জানা গেছে, বাহুবলের সুন্দ্রাটিকি গ্রামের আবদাল মিয়ার ছেলে মনির মিয়া (৭), ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), আব্দুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০) ও আব্দুল কাদিরের ছেলে ইসমাইল হোসেন (১০) ২০১৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। ৫ দিনের মাথায় ১৭ ফেব্রুয়ারি সুন্দ্রাটিকি গ্রামের পার্শ্ববর্তী একটি বালুর ছড়ার মাটির নিচ থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মনির সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে, তার ২ চাচাতো ভাই শুভ ও তাজেল একই স্কুলে দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তো। আর তাদের প্রতিবেশি ইসমাইল পড়তো সুন্দ্রাটিকি মাদরাসায়।
নিখোঁজের ৫ দিন পর মরদেহ উদ্ধার হলে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নিখোঁজের পর মনিরের বাবা আবদাল মিয়া একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে মরদেহ উদ্ধার হলে আবদাল মিয়া অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। ঘটনার পরপরই সন্দেহভাজন ৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে বাহুবল থানায় এই ৪ জনসহ মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মনির মিয়ার বাবা আবদাল মিয়া। ২০১৬ সালের ২৯ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির তৎকালীন ওসি মোক্তাদির হোসেন ৯ জনের বিরুদ্ধেই আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
পুলিশ গ্রেফতার করে গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান আব্দুল আলী বাগাল ও তার ২ ছেলেসহ ৬ জনকে। এর মধ্যে আসামি বাচ্চু মিয়া কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান। কারাগারে রয়েছেন, হাবিবুর রহমান আরজু (৪০), শাহেদ মিয়া (৩২), আব্দুল আলী বাগাল (৬০), তার ২ ছেলে জুয়েল মিয়া ও রুবেল মিয়া (১৮)। আর উস্তার মিয়া (৪৮), বাবুল মিয়া (৪৫) ও বিল্লাল মিয়া (৩৫) এখনও পলাতক। গ্রেফতার হওয়া ৫ জনের মধ্যে ৪ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সুন্দ্রাটিকি গ্রামের ২ পঞ্চায়েত প্রধান আবদাল মিয়া তালুকদার ও আব্দুল আলী বাগালের মধ্যে পারিবারিক বিরোধের জেরে এই হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয় বলে মামলার তদন্তকালে বিষয়টি ও আসামিদের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে আসে। হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ বছরের ৭ সেপ্টেম্বর মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। ওইদিন মামলার চার্জ গঠন হয়। পরে চলতি বছরের ১৫ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে মামলাটি সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।