৫ প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব সিলেট সিটিতে বর্জ্য থেকে তৈরি হবে বিদ্যুৎ
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) এলাকায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রস্তাব দিয়েছে ৫টি কোম্পানি। তাদের প্রস্তাবের বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগকে জানিয়েছে সিসিক কর্তৃপক্ষ। পরে এ নিয়ে বৈঠক করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।বৈঠকে কিছু অসঙ্গতির খোঁজ মিলেছে। পরে সুস্পষ্ট প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে সিসিকের কাছে।
সিসিক সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রস্তাবনা দিয়েছে বারাকা পাওয়ার প্ল্যান্ট, ঝারবিজ ইন্টারন্যাশনাল, সৌদিয়া-জার্মান পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড, ডিপি ক্লিন টেক বিডি ও এনডুরিং এনার্জি লিঃ।
কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন সিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. রুহুল আলম।স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিসিক থেকে যেসব প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, এরসঙ্গে কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবে কিছুটা অসঙ্গতি আছে। ফলে স্থানীয় সরকার বিভাগের যাচাই-বাছাই কমিটি প্রস্তাবগুলো বিদ্যুৎ বিভাগে না পাঠিয়ে অসঙ্গতি দূর করে সুস্পষ্ট প্রস্তাব দিতে বলেছে সিসিককে।জানা গেছে, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সিসিক থেকে পাঠানো ৫টি কোম্পানির প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য গত ৬ ফেব্রুয়ারি বৈঠক করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত যাচাই-বাছাই কমিটি। এই বৈঠকের বিস্তারিত গত ১২ মার্চ সিনিয়র সহকারী সচিব শাফিয়া আক্তার শিমুর স্বাক্ষরে একটি স্মারকে প্রকাশ করা হয়।স্মারক অনুসারে, বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন) মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী। স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে আগ্রহী ৫টি কোম্পানির প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। তারা নিজ নিজ কোম্পানির প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।যা আছে কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবাবনায়সৌদিয়া-জার্মান পাওয়ার প্ল্যান্ট লিঃ জানিয়েছে, বর্জ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনে তাদের ১৩ একর জমি প্রয়োজন। এই জমি তারা নিজ অর্থায়নে ক্রয় করবে। তাদের প্লান্টের দৈনিক বর্জ্য পোড়ানোর ক্ষমতা ৮৭০ টন। গ্যাসিফিকেশন টেকনোলজি ব্যবহার করে তারা বর্জ্য পুড়াবে এবং বাই-প্রোডাক্ট হিসেবে পানি, অক্সিজেন ও কোক উৎপন্ন করবে। ঘন্টায় তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩৩ মেগাওয়াট। প্ল্যান্ট স্থাপনে তাদের ২ বছর সময় লাগবে।এনডুরিং এনার্জি লিঃ’র প্রস্তাবনায় আছে, প্ল্যান্ট স্থাপনে তাদের ১২ একর জমি লাগবে এবং এই জমির সংস্থান করতে হবে সিসিক কর্তৃপক্ষকে। তাদের দৈনিক বর্জ্য পোড়ানোর ক্ষমতা ৩৫০ থেকে ৯৬০ টন। ঘন্টায় তারা ২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। উৎপাদনে আসতে তাদের সময় লাগবে দেড় বছর।
বৈঠকে ঝারবিজ ইন্টারন্যাশনাল জানায়, বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে তাদের সাড়ে ১২ একর জমি প্রয়োজন। তারা নিজেরা জমির ব্যবস্থা করতে পারবে না, সিসিক কর্তৃপক্ষকে সংস্থান করতে হবে। তাদের প্লান্টের দৈনিক বর্জ্য পোড়ানোর ক্ষমতা হবে ৫০০ টন এবং ঘন্টায় তারা ১৫ থেকে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। কার্যক্রম সম্পন্ন করতে তাদের ১৮ থেকে ২২ মাস সময় প্রয়োজন।ডিপি ক্লিন টেক বিডির প্রস্তাব অনুসারে, প্ল্যান্ট স্থাপনে তাদের ১০ একর জমি লাগবে এবং এই জমি তারা সিসিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইজারা নেবে। তবে সিসিক কর্তৃপক্ষ ইজারা দিতে না পারলে কোম্পানি জমি ক্রয় করবে। তাদের প্ল্যান্টের দৈনিক বর্জ্য পোড়ানোর সক্ষমতা থাকবে ৩০০ থেকে ৩৪০ টন। প্রতি ঘন্টায় তারা ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। উৎপাদনে আসতে তাদের দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগবে।বারাকা পাওয়ার প্ল্যান্ট জানিয়েছে, তাদের প্ল্যান্ট স্থাপনে ১০ থেকে ১২ একর জমি লাগবে। জমির সংস্থান করতে হবে সিসিক কর্তৃপক্ষকে। তাদের প্রস্তাবিত প্ল্যান্টের বর্জ্য পোড়ানোর সক্ষমতা হবে দৈনিক ১২০ টন। তারা প্রতি ঘন্টায় ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। কার্যক্রম শেষ করতে ২ বছর সময় লাগবে তাদের।কমিটির পর্যালোচনা ও অসঙ্গতি ওই বৈঠকে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবনা এবং কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করে দেখে স্থানীয় সরকার বিভাগের যাচাই-বাছাই কমিটি। এতে কিছু অসঙ্গতি দেখতে পায় কমিটি। পরে এ বিষয়ে কমিটি নিজেদের পর্যালোচনা উল্লেখ করে।কমিটির পর্যালোচনা অনুসারে, সৌদিয়া-জার্মান পাওয়ার প্ল্যান্ট লিঃ’র প্রস্তাবনা অনুসারে প্ল্যান্ট স্থাপনে তাদের ১৩ একর জমি প্রয়োজন। তবে সিসিকের প্রস্তাবনায় এই কোম্পানির ২০ একর জমি প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কোম্পানি বলছে, তারা দৈনিক ৮৭০ টন বর্জ্য পোড়াতে পারবে। কিন্তু সিসিক এই কোম্পানির সক্ষমতা ৪৩০ টন বলে উল্লেখ করেছে। এ ছাড়া এই কোম্পানির দাবি, তারা ঘন্টায় ৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। তবে সিসিকের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, কোম্পানিটির উৎপাদন ক্ষমতা ঘন্টায় ১৬ থেকে ১৭ মেগাওয়াট।ওই প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবনায় বিষয়ে আরেকটি অসঙ্গতি পেয়েছে কমিটি। সিসিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই কোম্পানির ট্যারিফ মূল্য ইউএসডি ২০ সেন্ট। কিন্তু কোম্পানি জানিয়েছে, তাদের ট্যারিফ মূল্য ২২ সেন্ট।এদিকে, অন্য ৪ টি কোম্পানির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্ল্যান্ট স্থাপনে জমির সংস্থান বা ইজারা দেবে সিসিক কর্তৃপক্ষ। তবে সিসিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জমির সংস্থান বা ইজারা দেয়ার সামর্থ্য তাদের নেই। পরে ডিপি ক্লিন টেক বিডি ও বারাকা পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি নিজেদের অর্থায়নে জমি ক্রয়ের আগ্রহ দেখায় বৈঠকে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের কমিটি পর্যালোচনায় উল্লেখ করেছে, যে সকল কোম্পানি নিজস্ব অর্থায়নে প্ল্যান্ট স্থাপনের জমি ক্রয় করবে, তাদেরকে জমির বিস্তারিত উল্লেখ করে পুনরায় সুস্পষ্ট প্রস্তাব পাঠাতে হবে। এছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় বিদ্যমান বর্জ্যরে গুণগতমান, বর্জ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া, নিয়মিত সংগ্রহের পরিমাণ এবং বর্জ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রস্তাব দাখিলকারী কোম্পানির ভূমিকা কী হবে সেসব বিষয় তাদের প্রস্তাবে উল্লেখ করতে হবে।সিদ্ধান্ত স্থানীয় সরকার বিভাগের যাচাই-বাছাই কমিটি বৈঠক শেষে দু’টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রথমত, সৌদিয়া-জার্মান পাওয়ার প্ল্যান্ট লিঃ’র প্রস্তাব এবং সিসিকের বিবরণীতে প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি, বর্জ্য পোড়ানো, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এবং ট্যারিফ মূল্য সংক্রান্ত অসামঞ্জস্যতা দূর করে নতুন করে সুস্পষ্ট মতামত স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠাবে। মতামত প্রাপ্তির পর প্রস্তাবটি বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো হবে।দ্বিতীয়ত, অন্য ৪টি কোম্পানি দাখিলকৃত প্রস্তাবের বিষয়ে সিটি করপোরেশনের সাথে চূড়ান্তভাবে আলোচনা করবে। তারা কে কিভাবে প্ল্যান্ট স্থাপনে জমির সংস্থান করবে এবং বর্জ্য সরবরাহ নিশ্চিত করবে তা বিস্তারিত জেনে নতুন করে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠাবে সিসিক।জানতে চাইলে সিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. রুহুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণ করা হয়। সেখানে এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। কিছু বিষয় সুস্পষ্ট করার জন্য বলা হয়েছে। সে অনুসারে কাজ চলছে।’