নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচনে জোহরান মামদানির ঐতিহাসিক জয়
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
নিউইয়র্কঃ নিউইয়র্কের ১১১তম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। নিউইয়র্কের তরুণ ও প্রগতিশীল ভোটারদের একত্র করে তিনি এক ঐতিহাসিক জয় অর্জন করেছেন। “জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো”– এই স্লোগানকে সামনে রেখে ৩৪ বছর বয়সী এই ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট এক নজিরবিহীন প্রচারণা চালিয়েছেন।মামদানি পরাজিত করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া এবং সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোকে। কুওমো ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে পরাজয়ের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। ভোটের আগের রাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কুওমোকে সমর্থন দেন এবং মামদানি জয়ী হলে নিউইয়র্ক সিটির ফেডারেল তহবিল বন্ধের হুমকি দেন।
মামদানি “অসহনীয় জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো”-কে কেন্দ্র করে তাঁর প্রচারণা চালান। ভাড়াবাড়ির ভাড়া স্থগিত রাখা, ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধি করে গণপরিবহন ও শহর পরিচালিত মুদি দোকান খোলার মতো উদ্যোগ ছিল তাঁর প্রতিশ্রুতির মূল।তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন “নিউইয়র্ক সিটিকে ধারাবাহিক উন্নতির যুগে” নিয়ে যাওয়ার। বিজয় ভাষণে মামদানি বলেন,যে স্বপ্ন আমরা একসাথে দেখেছি, যে কথা আমরা একসাথে বলেছি, এখন সেটাই হবে আমাদের কর্মসূচি। নিউইয়র্ক, এই ক্ষমতা তোমাদের—এই শহর তোমাদেরই।”
৩৪ বছর বয়সে তিনি নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র এবং অন্যতম কনিষ্ঠ নেতা হতে যাচ্ছেন। তবে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন হিউ জে. গ্রান্ট, যিনি ১৮৮৯ সালে ৩১ বছর বয়সে নির্বাচিত হয়েছিলেন।উগান্ডায় জন্ম নেওয়া মামদানি সাত বছর বয়সে পরিবারসহ নিউইয়র্কে আসেন। ব্রঙ্কস হাই স্কুল অব সায়েন্স থেকে পড়াশোনা শেষে বোডয়েন কলেজে যান। ২০১৮ সালে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন।তাঁর বাবা মাহমুদ মামদানি একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অধ্যাপক, মা মীরা নায়ার খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতা। মামদানি বর্তমানে কুইন্সে স্ত্রী শিল্পী রামা দুওয়াজির সঙ্গে বসবাস করেন। ২০২১ সাল থেকে তিনি নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য হিসেবে অ্যাস্টোরিয়া, অ্যাস্টোরিয়া হাইটস ও ডিটমার্স-স্টেইনওয়ে এলাকার প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন।
মামদানি ঘোষণা দিয়েছেন—
শহরের ভাড়াবাড়ির ভাড়া স্থগিত থাকবে,
শহরের প্রতিটি বরোতে পাবলিক মুদি দোকান খোলা হবে,
২ লক্ষ সাশ্রয়ী আবাসন নির্মাণ করা হবে,
এবং বাস সার্ভিস সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হবে।
এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে তিনি কর্পোরেশন ও উচ্চ আয়ের নাগরিকদের ওপর ২ শতাংশ অতিরিক্ত কর আরোপের প্রস্তাব করেছেন। তবে এজন্য রাজ্য গভর্নর ক্যাথি হোকুল ও আইনসভার সহযোগিতা লাগবে।তাঁর প্রচারণায় প্রগতিশীল নেতারা যেমন সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ উচ্ছ্বসিত সমর্থন দেন। শেষ দিকে হাউস সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফ্রিজ ও গভর্নর হোকুলও তাঁকে সমর্থন জানান।নির্বাচনী প্রচারণায় ইসরায়েল নিয়ে তাঁর অবস্থান বিতর্কের জন্ম দেয়। তিনি হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার নিন্দা জানালেও গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণকে “গণহত্যা” বলে আখ্যা দেন। ইসরায়েল সরকার তাঁর বক্তব্যকে “লজ্জাজনক” বলে প্রতিক্রিয়া জানায়।মামদানি বলেন,“আমি কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে ধর্ম বা জাতির শ্রেণিবিন্যাসের ওপর নির্ভর করে বৈধ বলতে পারি না। আমি কখনো জিহাদ সমর্থনের কথা বলিনি। আমাকে ভুলভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে—শুধু আমি মুসলিম প্রার্থী বলেই।”
২০২০ সালে এনওয়াইপিডিকে “বর্ণবাদী” ও “জননিরাপত্তার হুমকি” বলার জন্য মামদানি পরে ক্ষমা চান। তিনি ব্যাখ্যা দেন,“আমরা এখন পুলিশকে অপরাধের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য ও গৃহহীনতা সামলাতেও বলি। আমি সেই কর্মকর্তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই যারা প্রতিদিন জীবন বাজি রেখে কাজ করেন।তিনি বলেন, তিনি পুলিশ বিভাগ বিলুপ্ত করতে চান না, বরং এর কৌশলগত দিকগুলো সংস্কার করতে চান। সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, বর্তমান পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশকে পদে রাখার পরিকল্পনাও আছে তাঁর।জোহরান মামদানির বিজয় শুধু নিউইয়র্ক সিটির রাজনৈতিক মানচিত্র নয়, সমগ্র আমেরিকার প্রগতিশীল রাজনীতির জন্যও একটি নতুন অধ্যায়। তরুণ প্রজন্ম, অভিবাসী সম্প্রদায় ও শ্রমজীবী শ্রেণির ঐক্য এই নির্বাচনে নতুন বার্তা দিয়েছে—একটি শহর, যেখানে “অর্থনৈতিক ন্যায়” ও “সহজ জীবনযাপন” রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে।