পঙ্কজ ভট্টাচার্য: বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক উজ্জ্বল পুরুষ
সংগ্রাম দত্ত: পঙ্কজ ভট্টাচার্য ১৯৩৯ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ছিল রাজনৈতিকভাবে সচেতন, যা তার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক জীবনে প্রভাব ফেলেছিল।ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং ১৯৫৯ সালে ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এবং পরে নির্বাহী সভাপতি নির্বাচিত হন।পঙ্কজ ভট্টাচার্য ষাটের দশকে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৬ সালে তাকে “স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র মামলা”য় গ্রেপ্তার করা হয় এবং তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ১৯ দিন কাটান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর উপ-কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
স্বাধীনতার পর তিনি প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তিনি তিন জোটের যৌথ ঘোষণাপত্র প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৯৩ সালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত গণফোরামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। পরে তিনি “সমাজিক আন্দোলন” নামে একটি প্রগতিশীল প্ল্যাটফর্ম গঠন করেন এবং ২০১৩ সালে ঐক্য ন্যাপ প্রতিষ্ঠা করেন।পঙ্কজ ভট্টাচার্যের স্ত্রী ছিলেন নারী অধিকারকর্মী রাখী দাস পুরকায়স্থ, যিনি ২০২২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এই দম্পতির কোনো সন্তান ছিল না। পঙ্কজ ভট্টাচার্য ২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল ঢাকার হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।পঙ্কজ ভট্টাচার্য ছিলেন একজন আপসহীন রাজনীতিবিদ, যিনি কখনো পদ-পদবির জন্য রাজনীতি করেননি। তিনি রাজনীতিকে একটি অঙ্গীকার হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন এবং আজীবন গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও প্রগতিশীলতার পক্ষে লড়াই করেছেন। তার আত্মজীবনী “আমার সেই সব দিন” ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি মূল্যবান দলিল হিসেবে বিবেচিত।পঙ্কজ ভট্টাচার্যের জীবন ও কর্ম বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।