ভিসা প্রত্যাখ্যান, উপদেষ্টা বললেন— ‘নিজেরাই দায়ী’
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ সম্প্রতি বাংলাদেশিদের জন্য বিভিন্ন দেশের ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে, প্রত্যাখ্যানের হার বেড়েছে অনেক।এমন পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন,তিনি নিজেও এ বিষয়ে ‘উদ্বিগ্ন’।পাশাপাশি এই পরিস্থিতির জন্য তিনি নিজেদের (দেশের মানুষের) দায় দেখছেন।সামগ্রিকভাবে সুনামের প্রশ্ন তৈরি হওয়ায় ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে বলে তিনি মনে করছেন।বুধবার (৮ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ সম্মেলনে তৌহিদ হোসেন এ মন্তব্য করেন।সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই লিখেছেন, বিভিন্ন দেশের ভিসার জন্য আবেদন করে তারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে, ভ্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপে এমন আলোচনা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে প্রসঙ্গটি টেনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বিভিন্ন রাষ্ট্র বাংলাদেশিদের ভিসা প্রত্যখ্যান করছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ আছে। প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আপনার প্রশ্নটা আমি বুঝতে পেরেছি। এটা নিয়ে উদ্বেগ আমার নিজেরও আছে।তিনি বলেন, আমি একটা উদাহরণ আপনাকে দিই। বিশেষ করে আপনারা জানেন, জার্মানিতে শিক্ষাব্যবস্থা খুবই উচ্চমানের এবং সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো ফি লাগে না। কাজেই বাংলাদেশি ছাত্ররা খুবই আগ্রহী হয়ে উঠেছে জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাওয়ার জন্য। ৮০ হাজার আবেদন পড়েছে।তিনি আরও বলেন, জার্মান রাষ্ট্রদূত কয়েকদিন আগে চলে গেছেন, তিনি বলেছিলেন যে, ‘দেখুন আমার কিছুই করার নেই কারণ আমার মোট সামর্থই হচ্ছে দুই হাজার কেস প্রতিবছর ডিল করা।’ তার মানে এত আবেদন তারা গ্রহণ করতে পারবেন না। পাকিস্তান থেকে প্রতিবছর তারা নয় হাজার শিক্ষার্থী নেয়। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি, তারা যেন পাকিস্তানের সমান সংখ্যায় আমাদের শিক্ষার্থীদের নেয়। আমরা চেষ্টা করছি যে এটা করা যায় কিনা।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যেসব দেশের দূতাবাস বাংলাদেশে নেই, সেসব দেশের ভিসা পেতে জটিলতা বেড়েছে। বিশেষ করে, যারা শিক্ষা এবং কাজের জন্য বিদেশ যেতে চান, তারা বেশি জটিলতায় পড়ছেন।তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি এটার কোনো বিকল্প বের করা যায় কি না। যেমন- সার্বিয়ার জন্য একবার আমাদের ভিয়েতনাম থেকে ভিসা নেওয়া অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এভাবে আমরা চেষ্টা করছি যে দিল্লি থাকুক, পাশাপাশি অন্য আরেকটি দেশ থেকে যেন বাংলাদেশিরা ভিসা নিতে পারে।কিন্তু ভিয়েতনামের ভিসাও তো এখন বাংলাদেশিরা পাচ্ছেন না, একজন সাংবাদিক এমন তথ্য দিলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেখুন ভিসা হচ্ছে একদমই একটি সার্বভৌম সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট দেশটির। আপনি কখনোই কাউকে বলতে পারবেন না, আপনি কেন আমাকে ভিসা দিলেন না। এটা কিন্তু বলা যাবে না। ভিসা নিয়ে বস্তুত সবখানেই, আমাদের সরকারি পর্যায়েও কথাবার্তা হয়। ভিসা না পাওয়ার জন্য বাংলাদেশিরা নিজেরাই দায়ী বলে দাবি করেন তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের লোকজনদের ভিসা যে বিভিন্নখানে বন্ধ করছে, এটার জন্য তাদেরকে (সংশ্লিষ্ট দেশকে) আমি যতখানি দায়ী করতে পারি, আমি মনে করি, আমরা নিজেরা তার থেকে বেশি দায়ী। কারণ আমরা খুব বেশি ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করি। দ্বিতীয়ত আমাদের এখান থেকে তুলনামূলকভাবে অনিয়মিত অভিবানের সংখ্যা বেশি। কাজেই আমাদের সুনামের প্রশ্ন, যে কারণে আমাদের ভিসা কঠিন হয়ে গেছে। আসল লোকদের জন্যও কঠিন হয়ে গেছে। আগে আমাদের নিজেদের ঘর ঠিক করতে হবে, তাহলে এ সমস্যা থাকবে না।তিনি বলেন, অনিয়মিত অভিবাসন হচ্ছে পুরোপুরি আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে কোনো একটি দেশে গিয়ে কাজ করা বা থাকতে শুরু করা। সাধারণ ভ্রমণ ভিসায় গিয়ে অনেক দেশেই বাংলাদেশিরা কাজ করছেন এবং বছরের পর বছর অবস্থান করছেন এমন অভিযোগ বেশ পুরনো।
সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন তেহরিক ই তালিবান-টিটিপির পক্ষ নিয়ে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে একাধিক বাংলাদেশির মৃত্যুর বিষয়েও প্রশ্ন করা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে।একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, পাকিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে সম্প্রতি আরেক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে, এর আগেও সেখানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সময় বাংলাদেশের নাগরিক মারা গেছেন। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি বাংলাদেশের সরকারকে জানানো হয়েছে কি না? আফগানিস্তানের পক্ষ হয়ে বাংলাদেশিরা কীভাবে যুদ্ধ করছে? এ বিষয়টিকে আপনারা কীভাবে দেখছেন?জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেখুন, বাংলাদেশিরা বলা ঠিক হবে না। বিচ্ছিন্নভাবে যেকোনো জায়গায় একটা-দুইটা ঘটনা ঘটতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধেও তো দুই একজন বাংলাদেশি মারা গেছে। বাংলাদেশ তো এসব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করছে না। এসবকে আমার মনে হয়, সেভাবেই দেখতে হবে।