অন্যরকম এক ঈদ

প্রধান সম্পাদক
সত্যবাণী

লন্ডন: আমরা যেমন আমাদের বয়োবৃদ্ধ পূর্ব প্রজন্মের কাছে প্লেগসহ  অতীতের বড় বড় মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের গল্প শুনি, ঠিক তেমনি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মও হয়তো কোন এক সময় তাদের পূর্ব প্রজন্মের কাছে গল্প শুনবে কোভিড-১৯ নামের এক অদৃশ্য শত্রুর। যে শত্রু পুরো মানবজাতিকে একটি বিশাল সময়জুড়ে করে রেখেছিলো ঘরবন্দী, বন্ধ করে দিয়েছিলো পৃথিবীর তাবৎ উপাসনালয়। তারা হয়তো আশ্চর্য হয়ে শুনবে সেই গল্প, যে গল্পে উঠে আসবে একবিংশ শতাব্দির কোন এক সময় করোনা নামের ঐ অদৃশ্য শত্রুর ভয়ে মুসলিম সম্প্রাদায় পবীত্র ঈদেও ছিলো ঘরবন্দী, ঈদগাহ বা খোলা মাটে নামাজ আদায়ের সুযোগ হয়নি তাদের। ঐ ঈদে আত্মকেন্দ্রীক হয়ে বাড়ীর মধ্যেই কিভাবে ঈদ জামাত আদায় করতে হয়েছিলো, ইচ্ছে থাকলেও পরিবার সদস্য ছাড়া আর কারো সাথে ঈদ কোলাকুলি  করা ছিলো বারন, এমন গল্প শুনতে শুনতে হয়তো তাদের মনে প্রশ্ন জাগবে এটি  কি আসলেই বাস্তব, নাকি শুধুই গল্প?

লন্ডনে  বাড়ীর গার্ডেনে দুই পড়সীর ঈদ জামাত

 

ইতিহাসের আগামী অধ্যায়ের খোরাক এমন একটি অন্যরকম ঈদ এবার পালন করছেন বিশ্বের মুসলিম সম্প্রাদায়।

বিশ্বেজুড়ে করোনা  আতঙ্কের মধ্যেই এবার এসেছে ঈদ উল ফিতর৷ সৌদি আরব, মিশর, ওমানসহ বিশ্বের অনেক দেশে এবার ঈদ জামাত নিষিদ্ধ, জনগণকে ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে৷ 

সৌদি আরবে করোনা  বিস্তার ঠেকাতে দেশটির সরকার ঈদের ছুটিতে দেশজুড়ে কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জনগণকে ঘরেই ঈদের নামাজ আদায়ের আহ্বান জানিয়েছে৷ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় মার্চের মাঝামাঝি থেকেই ‍মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র দুই নগরী মক্কা ও মদিনায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববী মুসল্লিদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়৷

ওমান, জর্দান, মিসর, ইরান, তুরস্কসহ মুসলিম দেশগুলোত বন্ধ রাখা হয়েছে মসজিদ ও ঈদগাহ ময়দানগুলো।

ব্রিটিশ সরকার দেশটির মুসলমানদের এ বছর ঘরেই ঈদের নামাজ পড়ার আহ্বান জানিয়েছে৷ দেশটিতে এই প্রথম ঈদের জামাত হচ্ছে না বলে জানান দেশটির ধর্মীয় নেতারা৷

রবিবার ব্রিটেনসহ ইউরোপে পালিত হয়েছে  অন্যরকম এক  ঈদ। এই ঈদে যেন কোন প্রাণ ছিলোনা। খুশির পরিবর্তে সবার মনের গহীন থেকে শুধুই বেড়িয়ে এসেছে কান্না, শোক। ঈদগাহ বা বাইরে খোলা মাটে ঈদ জামাত নিষিদ্ধ থাকায় বাড়ীর মধ্যেই অনেকে পালন করেছেন ঈদের নামাজ। ‘ওমন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’- কবির এই গানের কলি যেন একটু পরিবর্তিত হয়ে সবার ভেতরেই গুন্জরিত হচ্ছিল ‘ওমন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো ‘শোকের’  ঈদ’। কারন এই ঈদে অনেক পরিবারই ছিলেন  স্বজন হারা, যাদের কোন না কোন সদস্যকে কেড়ে নিয়েছে ঘাতক অদৃশ্য শত্রু কোভিড-১৯।

রবিবার ঈদের দিন বন্ধ ছিলো ব্রিটেনের সব মসজিদ ও ঈদ জামাতের স্থান। কোথাও ছিলোনা সবার প্রিয় ‘ঈদ ইন দ্যা পার্ক’ সেলিব্রেশন, তাঁর পরিবর্তে কোন কোন বাড়ীতে হয়েছে ‘ঈদ ইন দ্যা বেক গার্ডেন’। কেউ কেউ বাড়ীতে নিজ পরিবার নিয়ে আদায় করেছেন ঈদের নামাজ। রং বেরংয়ের পোষাক পড়ে রাস্তায় ছিলোনা ছোট্ট বাচ্চাদের চলাচল, ছিলোনা সেই চিরপরিচিত ঈদ আলিঙ্গনের দৃশ্য। ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের একমাত্র মাধ্যম ছিলো টেলিফোন কল, ওয়াটসআপ, জুম, ম্যাসেন্জার, হাউস পার্টিসহ সোস্যাল মিডিয়া। পরিবারকেন্দ্রীক এই ঈদে আত্মীয় স্বজনের সাথেও ছিলোনা কোন সাক্ষাত বা আড্ডার সুযোগ। সেমাই-সন্দেশ সামনে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে ছিলেন শুধুই পরিবার সদস্যরা। ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে কেউ এসে কলিংবেল টিপেনি কারো দরজার। শান্তি, সমৃদ্ধির চেয়ে ঈদ মোনাজাতে শুধুই শোনা গেছে কভিড নামক ঘাতক শত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা।

এবারের ঈদে সবারই প্রার্থনা ছিলো, স্বাভাবিক সেই সময়টি যেন আবার দ্রুত ফিরে আসে, অসহায় এই সময় যেন তাঁর স্বাভাবিক চেহারা আবারও ফিরে পায়। ভালোবাসাময় সেই বিশ্ব যেন দ্রুতই কাটিয়ে উঠে বন্দী সময়। অদৃশ্য শক্তি করোনা যেন যুদ্ধ মাটে পরাজিত হয় স্রষ্টার শ্রেষ্ট সৃষ্টি মানুষের কাছে।

 

 

You might also like