অল দ্যা প্রাইম মিনিষ্টার ম্যান প্রতিবেদন তৈরি ও গবেষনাতে মুরাদ খানের সম্পৃক্ততা ছিলোনা: দাবি আল জাজিরার

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী 

লন্ডন: অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান শীর্ষক আল জাজিরার আলোচিত প্রতিবেদনের একটি অংশে কন্ঠ দেয়া ব্রিটিশ বাংলাদেশী নাট্যকার মুরাদ খানের সাম্প্রতিক সফর নিয়ে বাংলাদেশে যে আলোচনার জন্ম হয়েছে সেটা ভিত্তিহীন বলে দাবি করছেন মুরাদ খান। একই সাথে আল জাজিরা নেটওয়ার্কের লন্ডন প্রযোজক উইলিয়াম থর্ন এক অফিসিয়াল চিঠিতে লিখেছেন, এই প্রতিবেদন তৈরি ও গবেষনা কোন কিছুতে মুরাদ খানের সম্পৃক্ততা ছিলো না। তিনি শুধুমাত্র একটি অংশের কন্ঠ দিয়েছেন, প্রতিবেদনের মূল বিষয় সম্পর্কে মুরাদ খান অবহিত ছিলেন না। চিঠিটি আল জাজিরা নেটওয়ার্কের প্যাডে ৭ এপ্রিল ২০২২ তারিখে ইস্যু করা হয়েছে।

২২ মে সিলেট শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকর্মীদের নিয়ে একটি কর্মশালার শেষ দিনে মুরাদ খান উপস্থিত হন, সেখানে মূল মন্চে
বসেন, বক্তব্য রাখেন। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় দেশবিরোধী আল জাজিরার বিতর্কিত প্রতিবেদনের সাথে জড়িত মুরাদ খাল কিভাবে সরকারি অনুষ্ঠানে অতিথি হন।

মুরাদ খান বলেন, তিনি সেখানে আমন্ত্রিত হয়ে যাননি, নাটকের মানুষ হিসাবে শুনে সেখানে গিয়েছেন, পরিচিত অনেকের সাথে দেখা হয়েছে, বাংলাদেশে মূলধারার মন্চ নাটক ও ব্রিটেনের মূলধারায় বাংলা নাটক নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন।

তিনি আল জাজিরার প্রতিবেদনে কন্ঠ দেয়ার বিষয়ে বলেন, প্রথমত আমি এই প্রতিবদেন তৈরিতে কখনো জড়িত ছিলাম না এমনকি এটি প্রচারের আগে এর বিশদ কন্টেন্ট সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। আর্টিস্ট হিসাবে শুধু কয়েকটা লাইন পড়েছি। এটি নির্মাণে কারা জড়িত তাও জানতাম না। বিলাতে শিল্পী নিয়োগ দেয়া হয় এজেন্সীর মাধ্যমে। একটা এজেন্সীর মাধ্যমে বাংলায় কন্ঠশিল্পী হিসাবে কাজ করার জন্য বার্মিংহাম থেকে লন্ডনে গিয়ে একদিন কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হই। আমি নিজেও এভাবে আমাদের সংগঠন পূর্বানাটের জন্য এজেন্সীর মাধ্যমে শিল্পী নিয়ে থাকি বা এখনো নেই।
আমি জানতাম না কুখ্যাত ডেভিড বার্গম্যান এবং তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা এর সাথে জড়িত। বারবার বলার পরও আমি রেকর্ডিং এর আগ পর্যন্ত স্ক্রিপ্ট/পান্ডুলিপি পাইনি। রেকর্ডিং এর সময়ে শুধু আমাকে লাইনগুলো দেয়া হয়েছে বলার জন্য। অন্য কারো লাইন বা সংলাপ আমি জানিনি। আমার রেকর্ডিংএর সময় অন্য সহ-শিল্পীর রেকর্ডিং একসাথে করা হয়নি। আলাদা আলাদা করে একেকজনের লাইন বা ভয়েস নেয়া হয়েছে।

মুরাদ খান আরো বলেন, রেকর্ডিংএর সময় আমাকে দেয়া লাইনগুলো পড়ে মনে হয়েছে এটা দূর্নীতি নিয়ে একটা প্রোগ্রাম হতে পারে। দূর্নীতি এবং তার বিরুদ্ধে প্রোগ্রাম হলে তাতে কন্ঠ দেয়া আমি তাতে খারাপ কিছু দেখিনি। তাই ছোটো অক্ষর বা ‘স্মল প্রিন্ট‌’ বলে এ রকম কয়েক পাতার এক বিশাল চুক্তিপত্রে না পড়ে দস্তখতও করেছি।
আমার এই ভয়েস কিভাবে ব্যবহার হবে তা আমি বিন্দুমাত্র জানিনা। একটা আপাত নিরিহ কথা এক ঘন্টার একটা ছবিতে নানাভাবে ব্যবহার হতে পারে। রেকর্ডিং এর পর ২/৩ মিনিটের কাজ পুরা একঘন্টার তথ্যচিত্র্রে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তা দেখে আর সবার মতো আমিও স্তম্ভিত হয়েছি।

মুরাদ খান দাবি করেন, আমি যদি আগে থেকে ডেভিড বার্গম্যানের জড়িত থাকার কথা যদি জানতাম, তাহলে যত ভালো প্রোগ্রামই হোক না কেন আমার তাতে জড়িত থাকার কোন অবকাশই ছিলো না। বার্গম্যান যখন যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্যা পায়তারা করছিলো তখন আমি বার্মিংহামে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চ প্রতিষ্ঠা করে দিনের পর দিন নানা কর্মসূচী পালন করেছি।
আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি এই প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পর অন্য অনেকের মত আমিও আমার মত-রাজনৈতিক দর্শনের বাইরে আমার কণ্ঠ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হওয়ায় পীড়িত, অবাক এবং বিস্মিত হয়েছি।
মুরাদ খান আরো বলেন, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বাংলাদেশে থাকাকালীনেও যেমন আমি মূলধারায় ছিলাম তেমনি যুক্তরাজ্যেও বাংলা ও বাঙালী এবং মূলধারায় এর সম্মিলন ঘটাতে রয়েছি সক্রিয়। দেশে ও বিদেশে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমার সাফল্য আনেককেই অনুপ্রানিত করলেও কিছু মানুষকে ঈর্ষাকাতর করেছে।

মুরাদ খান ব্রিটেনে তার সাম্প্রতিক কাজ সম্পর্কে বলেন, প্রতি বছর ১০ থেকে ১২টি ভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন, বহির্বিশ্বে মঙ্গল শোভাযাত্রা, বাংলা নববর্ষ পালন, প্রতি বছর নৌকা বাইচ, মুক্তিযুদ্ধে বার্মিংহাম থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের আংশগ্রহন নিয়ে নাটক সেক্টর ১২, মুক্তিযোদ্ধাদের মৌখিক ইতিহাস ধারন এবং বার্মিংহাম কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে তা সংরক্ষণ করা, বহির্বিশ্বে গত দুই বছ‌রে স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তির অনুষ্ঠানমালার অনেক কিছু আমার সংগঠনের ব্যানারে আমি করেছি।
আমি মহান মুক্ত‌িযুদ্ধে‌রপক্ষের একজন স‌ৈ‌নিক এবং আমার সব কা‌জে মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল‌্যবোধ এবং চেতনার বাস্তবায়‌নে কাজ ক‌রে চ‌লে‌ছি। এটা আমার অর্জন, এটা আমার অস্তিত্ব।

You might also like