আত্মজীবনীতে প্রিন্স হ্যারির নানা গোপন কথা

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডনঃ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বৃটেনের প্রিন্স হ্যারির আত্মজীবনী মূলক বই স্পেয়ার। এতে তিনি এমন সব কথা লিখেছেন যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আলোচনার তুঙ্গে এখন প্রিন্স হ্যারি। অকপটে সত্যি তুলে ধরায় অনেকেই তার প্রশংসা করছেন আবার কেউ কেউ তার লেখাকে ‘ছেলেমানুষি’ বলে সমালোচনাও করছেন। বিবিসির খবরে জানানো হয়, ওই বইতে আফগানিস্তানে ২৫ তালেবান সদস্যকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন প্রিন্স হ্যারি। এটিই সবথেকে বেশি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। একজন সাবেক বৃটিশ কম্যান্ডার বলেছেন, এই কথা লিখে হ্যারি তার নিজের সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছেন। বৃটেনের রাজা চার্লস ও প্রিন্সেস ডায়ানার ছোট ছেলে প্রিন্স হ্যারি। তিনি বৃটিশ সামরিক বাহিনীতে সৈনিক হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১২-১৩ সালে তাকে আফগানিস্তানে যুদ্ধ হেলিকপ্টারের পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হয়।

স্পেয়ারে তিনি বলেছেন, তিনি আফগানিস্তানে মোট ৬টি মিশনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং তার প্রতিটিতেই শত্রুপক্ষে নিহতের ঘটনা ঘটেছিল। তবে তিনি একে যথাযথ বলেই মনে করেন।বইতে তিনি লিখেছেন, তিনি তার এ কাজ নিয়ে গর্বিত না হলেও, লজ্জ্বিত নন। যুদ্ধের উত্তাপ ও বিভ্রান্তির মধ্যে আমি ওই ২৫ জনকে মানুষ বলে মনে করিনি। তারা ছিল দাবার বোর্ড থেকে সরিয়ে দেয়া গুটির মতো, কিছু খারাপ লোককে সরিয়ে দেয়া। এতে করে ভালো মানুষদের প্রাণ বেঁচেছে। তবে সাবেক বৃটিশ সেনা অফিসার রিচার্ড কেম্প বলেছেন, প্রিন্স হ্যারির মন্তব্য সুবিবেচনা-প্রসূত নয়। এর ফলে প্রিন্স হ্যারির নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে এবং কাউকে এর প্রতিশোধ নিতে প্ররোচিত করতে পারে। কর্নেল কেম্প ২০০৩ সালে আফগানিস্তানে বৃটিশ বাহিনীর কমাণ্ডার ছিলেন। তিনি বলেন, প্রিন্স হ্যারি যে তার হাতে নিহত শত্রুসৈন্যের সংখ্যা বলেছেন এতে তিনি কোন সমস্যা দেখছেন না। কিন্তু তিনি যেভাবে তালেবানদের দাবার ঘুঁটি হিসেবে বর্ণনা করেছেন তাতে আপত্তি জানিয়েছেন তিনি। কর্নেল কেম্প বলেন, ব্যাপারটা মোটেও সেরকম নয়। বৃটিশ সেনাবাহিনী এভাবে লোকজনকে প্রশিক্ষণ দেয় না।

তবে কনসারভেটিভ পার্টির এমপি এ্যাডাম হলোওয়ে হ্যারির সমালোচনা করে বলেন, কোন সৈনিক কতজনকে হত্যা করেছে তা প্রকাশ করা যথাযথ কাজ নয়। হলোওয়ে নিজেও একসময় বৃটিশ বাহিনীর হয়ে ইরাকে যুদ্ধ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককেও এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এছাড়া প্রিন্স হ্যারি তার বইয়ে আরো কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন যা নিয়ে বৃটিশ মিডিয়ায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
এরমধ্যে আছে হ্যারির জীবনের প্রথম যৌন অভিজ্ঞতার কথাও। এতে তিনি লেখেন, তার বয়স যখন ১৭ তখন তার চেয়ে বয়সে বড় একজন নারীর সাথে প্রথম যৌন অভিজ্ঞতা হয় তার। ঘটনাটি ঘটেছিল একটি পানশালার পেছনে মাঠের মধ্যে। হ্যারি লেখেন, এটা ছিল একটা অবমাননাকর অভিজ্ঞতা এবং ওই নারী তাকে একটি তরুণ ঘোড়ার মত ব্যবহার করেছিলেন।হ্যারি লিখেছেন, তার বয়স যখন ১৭ তখন কোন একজনের বাড়িতে তাকে কোকেন সেবন করতে দেয়া হয়েছিল। তা ছাড়া এর পরেও আরো কয়েকবার তিনি কোকেন নিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। তবে বলেন যে, অভিজ্ঞতাটা তার ভালো লাগেনি। তিনি আরো লেখেন যে, ইটন কলেজের ছাত্র থাকার সময় তিনি বাথরুমে ঢুকে গাঁজা খেয়েছেন। সেসময় ওই ভবনের বাইরে তার দেহরক্ষী হিসেবে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তারা টহল দিচ্ছিলেন।

হ্যারি লিখেছেন, তিনি এবং উইলিয়াম মিলে তাদের পিতা রাজা তৃতীয় চার্লসকে অনুরোধ করেছিলেন যেন তিনি বর্তমান কুইন কনসর্ট কামিলাকে বিয়ে না করেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তার ভয় ছিল যে কামিলা হয়তো তাদের দুষ্ট সৎমায় পরিণত হবেন। বৃটিশ দৈনিক দ্য সান রিপোর্ট করেছে যে, রাজপরিবারে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেবার আগে তারা দুই ভাই আলাদাভাবে কামিলার সাথে বৈঠক করেছিলেন। হ্যারি আরো লিখেছেন, কামিলা যদি রাজা চার্লসকে সুখী করতে পারেন তাহলে তারা তাকে ক্ষমা করতে ইচ্ছুক ছিলেন।এদিকে প্রিন্স হ্যারি বইয়ে অভিযোগ করেছেন যে, তার ভাই প্রিন্স উইলিয়াম তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করেছিলেন। হ্যারির স্ত্রী মেগানকে নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়ার জেরে এই ঘটনা ঘটে। বইয়ে হ্যারি বলেন, ও আমার জামার কলার চেপে ধরে, আমার গলার নেকলেস ছিঁড়ে ফেলে এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। প্রিন্স উইলিয়ামের সরকারি বাসভবন কেনসিংটন প্রাসাদ এবং বাকিংহাম প্রাসাদ দু’জায়গা থেকেই বলা হয় তারা এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করবে না।

You might also like