আবারও বন্যার কবলে বালাগঞ্জঃ ৫০ হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দী

সিলেট অফিস 
সত্যবাণী
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফের বন্যায় প্লাবিত বালাগঞ্জ। পানিবন্দী অর্ধ লাখ মানুষ। কুশিয়ারা নদী দিয়ে বহমান পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত বালাগঞ্জে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত আছে। বন্যা পরিস্থিতি সময়ে সময়ে অবনতির দিকে যাচ্ছে। দিনব্যাপী ধারাবাহিক বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে গত সব বন্যার রেকর্ড ভেঙে যাবে। উপজেলার গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বেড়েছে জনদুর্ভোগ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পাঠদানের কোনো সুযোগ নেই, যদিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা।
বালাগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান, উপজেলা সদরের প্রধান সড়কে হাঁটুর উপরে পানি। উপজেলা পরিষদ, বালাগঞ্জ থানায় ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নদীর পানি ঢুকে বিপদসীমায় দাঁড়িয়েছে। গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন ও এলজিইডি সড়ক ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে।
বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আনহার মিয়া জানান, এ পর্যন্ত সরকারি ও স্থানীয় এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবের মাধ্যমে ১৫ টনসহ মোট ১৩১ টন চাল বরাদ্দ এসেছে। এছাড়া অনেক প্রবাসী ও বিত্তশালী সাহায্য-সহযোগিতা করছেন।
বালাগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জ-আমজুর সংলগ্ন রাস্তাটিতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। চলাচল অনেকাংশেই বন্ধ রয়েছে। বালাগঞ্জ-শেরপুর (কুশিয়ারা ডাইক) করচারপাড়, জালালপুর, বালাগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের আমজুড়সহ বেশকটি জায়গায় বড় ধরণের ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গবাদি পশু নিয়ে খামারীরা বিপাকে পড়েছেন। গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যায় মৎস্য খামার থেকে মাছ বেরিয়ে পড়ায় সাধারণ লোকজন উৎসবের আমেজে মাছ ধরছেন। এতে বড় ধরণের ক্ষতি হবে মৎস্য খামারীদের। বাড়ি-ঘরে পানি উঠায় দিশেহারা মানুষ ও নিরাশ্রয় গবাদি পশু। অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন স্বজনদের বাড়িতে।
সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মানুষ প্লাবিত। হাওরের নিম্নাঞ্চল ও নদীর পাড়ে বসতি হওয়ায় গুরুতরভাবে বন্যাক্রান্ত হয়েছে তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে কোমর সমান পানি। ৬টি ইউনিয়নের বন্যাক্রান্ত মানুষের জন্য খোলা হয়েছে ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। উপজেলার সবগুলো ইউনিয়নের গ্রামীণ রাস্তাঘাটে হাঁটু ও কোমরসমান পানি থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এতে পরিবার-পরিজন ও গবাদি পশুপক্ষী নিয়ে চোখে সর্ষেফুল দেখছেন পানিবন্দী উপজেলাবাসী।
পূর্ব পৈলনপুর ইউপি চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিন জানান, তাঁর ইউনিয়নের ৮০ শতাংশ এলাকা বন্যায় প্লাবিত। বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। পুরো ইউনিয়ন পানিবন্দী। কোথাও কোমর ও বুকসমান পানি। উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
বোয়ালজুর ইউপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চন্দন দাম জানান, তাঁর ইউনিয়নের মাকড়সী ও মনোহরপুর গ্রাম নিম্নাঞ্চল হওয়ায় ওই এলাকার মানুষ বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের উদ্ধারের জন্য নৌকার ব্যবস্থা নেই। শতাধিক পরিবার ঘোষিত ও অঘোষিত আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। সরকারি ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মুনিম জানান, তাঁর ইউনিয়নে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ পানিবন্দী। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি এবং ইউএনও’র সাথে যোগাযোগ রেখে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত আছে।
দেওয়ানবাজার ইউপি চেয়ারম্যান নজমুল ইসলাম নজম জানান, তাঁর ইউনিয়নে ৬০ শতাংশ মানুষ বন্যাক্রান্ত। এ পর্যন্ত ঘোষিত আশ্রয়ণে শতাধিক পরিবার অবস্থান করেছেন।
পূর্ব গৌরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, ইউনিয়নের ৮০ শতাংশ বন্যাক্রান্ত। সরকারি ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
পশ্চিম গৌরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মাখন জানান, ইউনিয়নের ৯০ শতাংশ পানিবন্দী। সরকারি ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে যাচ্ছে।
ইউএনও মারিয়া হক বলেন, বালাগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সময়ে সময়ে ভয়াবহরূপ ধারণ করছে। উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণও প্লাবিত। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেছি। উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হয়েছে আশ্রয়ণের জন্য। এ পর্যন্ত চলমান বন্যায় প্রায় ১৩১ মেট্রিকটন চাল বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানবৃন্দকে দেয়া হয়েছে। নগদ অর্থ, শুকনো খাবার, ৯৫০ প্যাকেটসহ শিশুখাদ্য, গো-খাদ্য দেয়া হয়েছে। ত্রাণের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বন্যার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত। জেলা প্রশাসককে আমাদের অবস্থান নিয়মিত অবগত করে যাচ্ছি।
উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আনহার মিয়া জানান, বালাগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি নতুন করে অবনতি হচ্ছে। উপজেলার প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ বন্যাক্রান্ত। ইতোমধ্যে কুশিয়ারা ডাইকের জালালপুর ও আমজুর সংলগ্ন সড়ক ভাঙনের ফলে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে পূর্ব পৈলনপুর ও পূর্ব গৌরীপুর ইউনিয়নের। সরকারি ত্রাণ যা পাচ্ছি তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের হাতে দেয়া হচ্ছে। এই দুর্যোগ-দুঃসময়ে উপজেলার প্রবাসী ও বিত্তবানরা এগিয়ে এসেছেন। তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। দ্বিতীয় ধাপের বন্যা মোকাবেলায়ও তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

You might also like