আবারও শুরু হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি
নিউজডেস্ক
সত্যবাণী
বাংলাদেশঃ ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় সাড়ে ৩মাস বন্ধ থাকার পর আবারও দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। এদিকে দীর্ঘদিন বন্ধের পর বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ায় বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের মাঝে ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের মাঝে কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরতে শুরু করেছে।শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় ভারত থেকে ১৯টন পেঁয়াজ বোঝাই একটি ট্রাক দেশে প্রবেশের মধ্যদিয়ে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। স্থানীয় আমদানিকারক বাবু এন্ট্রারপ্রাইজ এই পেঁয়াজ আমদানি করেন। শনিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত বন্দর দিয়ে আর কোন পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেনি।
হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী শাহিনুর রেজা বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ার প্রেক্ষিতে আমদানিকারকদের এলসি খোলার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই ভারত থেকে দেশে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। পেঁয়াজ রফতানিতে নুন্যতম মুল্য নির্ধারীত না থাকলেও বর্তমানে ভারতে পেঁয়াজের যে বাজার চলছে তাতে করে প্রতিটন পেঁয়াজ প্রকারভেদে ২৫০ থেকে ২৭৫ মার্কিন ডলার মুল্যে আমদানি করতে হচ্ছে। যার কারনে দেশের বাজারে চলমান দেশীয় পেঁয়াজের চেয়ে বা তার সমান মুল্য দাড়াচ্ছে, তবে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের মুল্য কমলে ও রফতানি মুল্য কমলে তাতে করে সহজে বাজারজাত করা সম্ভব হতো এবং দেশীয় পেঁয়াজের চেয়ে কম দামে বিক্রি করা সম্ভব হতো। তবে বর্তমান মুল্যে খুব একটা পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার সম্ভাবনা কম রয়েছে।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সবুজ হোসেন ও সব্বির হোসেন বলেন, আমরা হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকি। কিন্তু ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারনে বেশ কিছু দিন ধরে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল যার কারনে আমাদের মোকামগুলোতে বেশ পরিমানে টাকা আটকা পড়ে যায়। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে দেশের বিভিন্ন স্থানের পার্টিরা আমাদের ফোন দেওয়া শুরু করেছে খোজখবর নিচ্ছেন, পেঁয়াজ নেওয়ার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ভারত থেকে আবার পেঁয়াজ আসার ফলে পেঁয়াজ ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন মোকামে বকেয়া থাকা পাওনা টাকাগুলোও আমাদের উঠে আসবে।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারনে সাড়ে ৩ মাস ধরে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। গত ২৮ শে ডিসেম্বর ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানিতে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেন। তাদের এই সিন্ধাতের পর বন্দরের আমদানিকারকগন পেঁয়াজের এলসি খুলেছেন, সেই এলসির বিপরীতে শনিবার বিকেল থেকে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। আর ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার কারনে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দামের উপর বড় একটা প্রভাব পড়বে।
হিলি স্থলবন্দর পরিচালনাকারী পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধের পর শনিবার বিকেলে বন্দর দিয়ে পুনরায় দুদেশের মাঝে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরুর ফলে বন্দরের আমদানিকারক, সিআ্যন্ডএফ এজেন্ট, শ্রমিকদের মাঝে কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরতে শুরু করেছে। একইসাথে বন্দরের নিত্যদিনের যে আয় সেটিও বেড়েছে। পেঁয়াজ কাঁচামাল হওয়ায় বন্দরে প্রবেশের সাথে সাথে দ্রুততম সময়ের মধ্যে খালাস করে আমদানিকারকদের সরবরাহ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, অভ্যন্তরিন বাজারে পেঁয়াজের সংকট ও মুল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এতে করে দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের অভ্যন্তরে আটকা পড়ে ২৫০ পেঁয়াজবাহী ট্রাক। আরো আটকা পড়ে আমদানির জন্য খোলা ১০ হাজার টনের মতো এলসি করা পেঁয়াজ। এর পাঁচদিন পর ১৯ সেপ্টেম্বর অনুমতি স্বাপেক্ষে পুর্বের টেন্ডারকৃত ১১টি ট্রাকে ২৪৬টন পেঁয়াজ রফতানি করে যার অধিকাংশ পেঁয়াজ পচা নষ্ট হওয়ায় পুজি হারিয়ে ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন বন্দরের আমদানিকারকরা। যদিও এর পর থেকেই পেঁয়াজ আমদানির জন্য খোলা এলসিগুলোর বিপরীতে পেঁয়াজ রফতানি করতে ব্যবসায়ীরা ভারতীয় ব্যবসায়ীদের চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন। এর ফলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমদানিকারকেরা মিয়ানমার, পাকিস্তান, মিশর, তুরস্ক ও চীন থেকে বিপুল পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করে।