আশা (হোপ) থীম নিয়ে লন্ডনে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী নাট্যৎসব
ট্রিওআর্টস এর ‘আশালতা’ মঞ্চস্থ হবে ৯ই নভেম্বর
নিলুফা ইয়াসমীন হাসান
বার্তা সম্পাদক, সত্যবাণী
লন্ডন: বিনোদনের শক্তিশালী মাধ্যম নাটক মানুষের আত্মিক উন্নয়ন এবং সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাঙালির সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্যে নাটক অন্যতম। এখনকার ডিজিটাল যুগেও কার্যত অপ্রতিদ্বন্দী নাটক।
বাংলা সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে তুলে ধরার প্রয়াস নিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো পূর্ব লন্ডনে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী নাট্যৎসব। আগামী ৯ই নভেম্বর শনিবার ট্রিওআর্টস এর প্রযোজনায় ‘আশালতা’ মঞ্চস্থ হবে পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে।
দীর্ঘ ২১ বছর যাবৎ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের উদ্যোগে একটানা উদযাপিত হয়ে আসছে ‘এ সিজন অব বাংলা ড্রামা‘। প্রতি বছরের ন্যায় পহেলা নভেম্বর শুরু হওয়া এই উৎসব চলবে ২৪শে নভেম্বর পর্যন্ত।
এই নাট্যৎসব শুধুমাত্র লন্ডনেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এতে যোগ দেবার জন্যে লন্ডনের বাইরে থেকেও অসংখ্য নাট্য দল অংশগ্রহণ করে থাকে এবং একটি সিলেকশন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে তাদের এখানে অংশগ্রহণের সুযোগ ঘটে।
ট্রিওআর্টস লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত একটি সংগঠন, গত পাঁচ বছর ধরেই তারা কাজ করছে। প্রতি বছর তাদের নতুন নাটক নিয়ে দর্শকদের মাঝে উপস্থিত হয়, এবছরেও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি।
‘এ সিজন অব বাংলা ড্রামা’য় প্রতি বছর নতুন নতুন বিষয়বস্তু তুলে ধরর চেষ্টা করে। ২০২৪ এর নাট্যৎসবের ২১ বছর পূর্তিতে ট্রিওআর্টস এর এবারের প্রযোজনা ‘আশালতা’ লিখেছেন শায়লা শারমিন এবং নাট্যরূপ ও নির্দেশনায় আছেন রুবাইয়াৎ শারমিন ঝরা। এবারের নাট্য উৎসবের বিষয়বস্তু ‘আশা’। তাই এই নাটকের প্রধান দুটি চরিত্রে আশা একজন কেয়ারার এবং সামির একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর ভূমিকায় থাকবেন। তাদের দুজনের সম্পর্কের মাধ্যমে শায়লা শারমিন দেখাতে চেয়েছেন মানুষ কিভাবে পরগাছার মতো একে অপরের উপর অবলম্বন করে বেঁচে থাকে এবং অসহায় মানুষও সুযোগ পেলে সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে পারে ।
এ নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে ব্রিটেনে অবস্থানরত একটি ব্রিটিশ বাংলাদেশী পরিবারের একজন অসহায় মা প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলেছে তাঁর বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুটিকে নিয়ে। কিন্তু এই সামাজিক অবস্থা ভেঙে সেই শিশুটি কি কখনও অন্য দশটা শিশুর মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সক্ষম হবে? আর তাঁর কেয়ারারের ভবিষ্যৎ ই বা কোথায়!
নির্দেশক রুবাইয়াৎ শারমিন ঝরা নাটকটি নিয়ে আশাবাদী এবং তিনি সত্যবাণী অনলাইন পোর্টালের পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমাদের কমিউনিটিতে এ ধরনের অসহায় মানুষগুলো যে এখনও পুরোপুরিভাবে গ্রহণযোগ্য নয় তা ফুটিয়ে তোলাই আমার মূল উদ্দেশ্য।”
ট্রিওআর্টস সকলকে সপরিবারে নাটকটি দেখতে আসার জন্যে অনুরোধ করেছেন। প্রতি বছরের মতো এ বছরেও ট্রিওআর্টস একটি ভিন্ন আঙ্গিকের নাটক উপহার দিতে পারবে বলে তাদের ধারণা। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইহান শাহীদ, মেহবুবা লিথি, আযান চৌধুরী, কাজী ফারহানা আকতার, রুমি হক, সাদেক আহমাদ চৌধুরী এবং রুবাইয়াৎ শারমিন ঝরা। এছাড়াও সহযোগিতায় রয়েছেন আয়হাম শাহীদ, অপু চৌধুরী, মেসবাহ শাহীদ, মাসুদ জামান এবং শাহ্নূর হোসেন। বিশেষ কৃতজ্ঞতায় কাজী রুকসানা বেগম, সুদীপ চক্রবর্তী, নাঈম হাসান সুজা, রোকসানা খান, মুশাহেদ আহমেদ এবং শামীম আহসান ।
ট্রিওআর্টস এর ‘আশালতা’ নাটকটি পরিবেশিত হবে আগামী শনিবার ৯ই নভেম্বর। পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। নাটকপ্রিয় দর্শকদের সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা যাচ্ছে। টিকেট নিম্নলিখিত লিঙ্কে পাওয়া যাবে।
https://ashalota.eventbrite.co.uk/
উল্লেখ্য, ‘সিজন অব বাংলা ড্রামা বা নাট্যোৎসব শুরুর প্রথম দিন মঞ্চস্থ হয়েছে ‘মঞ্চশৈলী’র পরিবেশনায় সাংবাদিক গল্পকার সাঈম চৌধুরীর লেখা নাটক ‘দ্যা থিবস অব হোয়াইট চ্যাপেল’ ।
নাট্যৎসবের দ্বিতীয় দিন মঞ্চস্থ হয়েছে সাংবাদিক, উপস্থাপক বুলবুল হাসান লিখিত ও সৈয়দা সায়মা আহমেদ প্রযোজিত বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ইউকের শিশুদের অভিনিত ‘Hoppy Hopeland’ নাটক।
মাসব্যাপী আয়োজনে প্রায় প্রতিদিন রয়েছে নাটকসহ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। প্রতি বছর নভেম্বরে মাসব্যাপী এ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে পূর্ব লন্ডন মুখর হয়ে ওঠে।
টাওয়ার হ্যামলেটস বারার উদ্যোগে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাংলা নাট্যৎসবে থাকছে নাটক, সেমিনার, আলোচনা, গল্পবলা, ওয়ার্কসপ, চিত্রপ্রদর্শনী, নৃত্য, নৃত্যনাট্য বিতর্কসহ নানা সাংস্কৃতিক কর্মসূচী। এতে অংশ নিচ্ছে মঞ্চশৈলী, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ইউকে, ট্রিওআর্টস, মুক্তমঞ্চ, বাংলা মূভমেন্ট থিয়েটার, কুইন অব আর্টস থিয়েটার কোম্পানি, অদিতি ডান্স সিআইসি, থিয়েটার শৈশব, দক্ষিণায়ন ইউকে, সুরবন্ধন, রোকেয়া প্রজেক্ট, ম্যাসেজ কালচারাল গ্রুপ, আয়না আর্টস, পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইন্সটিটিউট, আবিনা গ্যালারী অব ফাইন আটর্স, সেন্টার স্টেইজ, মহিলা অঙ্গন, ব্রিটিশ বাইল্যাঙ্গুয়েল পয়েট্রি কালেক্টিভ, সৌধ সোসাইটি অব পয়েট্রি এন্ড ইন্ডিয়ান মিউজিক, স্বাধীনতা ট্রাস্ট, দিদেলাস থিয়েটার কোম্পানি, ব্রিট বাংলাসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।
বৈচিত্রপূর্ণ এসব পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হবে টাওয়ার হ্যামলেটসের বিভিন্ন হল ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মধ্যে হ্যানবারী স্ট্রিটের ব্রাডি আর্টস সেন্টার, বেথনাল গ্রীনের রিচমিক্স, মাইল এন্ডের ক্লিনটন রোডের আর্ট প্যাভেলিয়ান, হ্যানবারী স্ট্রিটের কবি নজরুল সেন্টার, মাইল এন্ডের গ্রোভ রোডের ইকোলজি প্যাভেলিয়ান, মাইল এণ্ড রোডের আর্টস ওয়ান, বো রোডের রুট, ওল্ডফোর্ড রোডের সেন্ট মার্গারেটস ও টাওয়ার অব লন্ডনের হলে।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সাল হতে বাঙালি অধ্যূষিত পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস বারা এই সাংস্কৃতিক আয়োজন করে আসছে। বিলাতে বাঙালির অভিবাসন যাত্রায় এ ধরনের আয়োজন বাংলা সংস্কৃতিচর্চা ও বিকাশে গত ২১ বছর ধরে এক ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক অভিযাত্রা হিসাবে উজ্জ্বল ভূমিকা রেখে আসছে।