ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে প্রদর্শিত হলো ৭১-এর গণহত্যার নাটক ‘পিয়ার আলির ভাঙা মুখ’

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডনঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ইংল্যান্ডের বামিংহাম শহরে সন্ধানী আর্টস ও বাংলা কানেকশন বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শেক্সপিয়ার ইনস্টিটিউটের সাথে যৌথভাবে প্রযোজনা করে গত ২১ ডিসেম্বর মিডল্যান্ডস আর্টস সেন্টারে উপস্থাপন করে নতুন এক নাটক ‘পিয়ার আলির ভাঙা মুখ’। নাটকটি রচনা, পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যকার, নির্দেশক ও লেখক শাহমান মৈশান। নাটকটিতে একক অভিনয় করেছেন যুক্তরাজ্যের বাংলাদেমি কমিউনিটির সুপরিচিত নাট্যাভিনেতা তারেক চৌধুরী। নাটকের শব্দ ও ডিজিটাল প্রজেকশন করেছেন চলচ্চিত্রকার মকবুল চৌধুরী।
নাট্যকার ও নির্দেশক শাহমান মৈশান পিয়ার আলির ভাঙা মুখ নাটকটিকে গণহত্যার শিকার মানুষের সত্তার গভীরতম বেদনার রূপায়ণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ভগ্নাংশে পরিণত পরিচয়হীন মানুষের স্বরূপের খোঁজে এক অনন্ত ছুটে চলার উন্মোচন ঘটে এই নাটকে। প্রদর্শনীতে উপস্থিত বাঙালি ও বিভিন্ন দেশের দর্শকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শেক্সপিয়ার ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও ডিস্টংগুইশড প্রফেসর মাইকেল ডবসন। তিনি ‘পিয়ার আলির ভাঙা মুখ’ নাটকটিকে “মানুষের ক্ষতি ও হারানোর বেদনার এক বৈশ্বিক ভাষা হিসেবে” উল্লেখ করেন।
একাত্তুর সালে গণহত্যার পটভূমিতে শরণার্থীদের কাফেলায় ছুটতে ছুটতে হারিয়ে যাওয়া এক ছোট্ট বালক পিয়ার আলি কিভাবে সত্তার ভাঙনের মুখোমুখি হয়, এই নাটকে তা উন্মোচিত হয় এক শেষহীন মানব-ভ্রমণের রূপকের মাধ্যমে। ১৯৭১ সালে পিয়ার আলির পিতা এক গ্রামীণ কবি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার শিকার হন। প্রায় ৪০ বছর পর ইংরেজ পালক মায়ের ডায়েরির সূত্রে পিয়ার আলি বাংলাদেশের এক বধ্যভূমিতে হাজির হয় পিতার স্মৃতিফলক স্পর্শের আশায়। কিন্তু পিয়ার আলি পিতার স্মৃতিফলক খুঁজে পায় না। বরং একাত্তুরের নিপীড়িতা এক নারী বীরমাতা নমিতা রানীর সাথে পিয়ার আলির দেখা হয়ে যায়। নমিতা রানির কাছ থেকে পিয়ার আলি জানতে পারে তার মা কুলসুম বিবিও পাকবাহিনির হাতে ধর্ষিতা হয় এবং এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে একদিন গাঙে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। কেননা ততদিনে কুলসুম বিবি জেনে যায় তার শিশুপুত্র পিয়ার আলি নিখোঁজ হয়ে গেছে আর তার স্বামী কবি হায়দর আলিকে হানাদার বাহিনি হত্যা করে বহু লাশের সাথে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। নমিতা রানির কাছে লালিত-পালিত পিতৃপরিচয়হীন কন্যা শিশুটিকে এক সুইডিশ পরিবার দত্তক নেয়। সেই বোনের ছবি, ঠিকানা আর মায়ের শেষচিহ্ন সঞ্চয় করে পিয়ার আলি জীবন-নদীর আরেক তীরে এসে দাঁড়ায়। পিয়ার আলির জীবন-পথের শেষ কোথায়–এই প্রশ্নের ভেতরে ফুটে ওঠে পিয়ার আলির প্রতিজ্ঞা, “সিস্টার আই উইল নট স্লিপ আনটিল উই মিট!” শুরু হয় পিয়ার আলির আরেক যাত্রা কারণ খোলা পথ তাকে ডাকছে। শূন্য মঞ্চে একটি লাগেজ ও ডিজিটাল ইমেজ  সহযোগে এই একক নাটকের ভগ্নসত্তার শিল্পভাষা তৈরি হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক শাহমান মৈশান বর্তমানে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শেক্সপিয়ার ইনিস্টিটিউটে পিএইচডি গবেষণা করছেন। পিয়ার আলির ভাঙা মুখ তাঁর গবেষণার অংশ হিসেবে নির্মিত হয়েছে। এই প্রযোজনার সৃজনশীল প্রক্রিয়া ও ক্রিটিক্যাল বিশ্লেষণ শাহমান মৈশানের মূল থিসিসে অর্ন্তভূক্ত হবে।

You might also like