ইন্দো-প্যাসিফিকে অংশগ্রহণ ‘স্ট্র্যাটেজিক অপরচুনিটি’ তৈরি করবে

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে ফ্রান্সের আগ্রহের জায়গা এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিক্রমার মধ্যে যথেষ্ট মিল আছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফ্রান্স সফরের সময় দুই শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।এর মধ্যে ‘কমন ইন্টারেস্টের’ জায়গাগুলোতে বড় ধরনের সহযোগিতা আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রতিটি দেশের নিজস্ব চাওয়া-পাওয়া আছে।সবগুলো পূরণ হয় না। কিন্তু যেগুলো উভয়ের জন্য প্রযোজ্য সেগুলোতে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ থাকে।এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিকে ফ্রান্সের আগ্রহের জায়গা হচ্ছে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি, কানেক্টিভিটি, গবেষণা ও উদ্ভাবন; এবং বহুপাক্ষিকতা ও আইনের শাসন।ফ্রান্সের আগ্রহের জায়গা দেখলে অর্থনীতি, কানেক্টিভিটি, গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং বহুপাক্ষিকতার বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিল আছে—জানান তিনি।

সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশ ও ফ্রান্স নিরাপদ ও সুরক্ষিত ইন্দো-প্যাসিফিক চায়। এ অঞ্চলে এ বিষয়ে উন্নয়নের জন্য উভয়ই একসঙ্গে কাজ করতে পারে।তার মতে, ‘ইন্দো-প্যাসিফিকের মতো নতুন একটি জোটে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য একটি স্ট্র্যাটেজিক অপরচুনিটি তৈরি করতে পারে। একইসঙ্গে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় সহায়তা করছে।ফ্রান্সের সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে কাজ করার সুবিধা হচ্ছে তারাও বিআরআই-এর সদস্য। ফলে প্যারিসের সঙ্গে কাজ করতে গেলে ঢাকার জন্য ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি কম—বলেন তিনি।নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নিয়ে কাজ করার সুযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে অবস্থান পরিষ্কার করার বিষয় আছে।

ইন্দো-প্যাসিফিকে বাংলাদেশের অবস্থান

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিকে বাংলাদেশের অবস্থান পরিষ্কার না করলে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বা অন্য কারও সঙ্গে প্রতিরক্ষা বা নিরাপত্তা সহযোগিতা গভীর হবে না।ইন্দো-প্যাসিফিকে আমরা কী চাই তা পরিষ্কার করতে হবে বলেও জানান তিনি।তিনি বলেন, যদি আমরা এ বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার না করি বা অস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেই, সেটাও একটি পলিসি তবে সেক্ষেত্রে সহযোগিতা হালকা হবে এবং নির্ভরতার জায়গা বা সম্পর্ক গভীর হবে না।

সামরিক সহযোগিতা

ফ্রান্সের কাছ থেকে বড় আকারের সামরিক পণ্য বাংলাদেশ কেনেনি। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট নিয়ে তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন আলোচনা হলেও পরে তা সফল হয়নি।শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশ যখন সাবমেরিন কিনতে চেয়েছিল, তখন যে ছয়টি দেশকে অ্যাপ্রোচ করা হয়েছিল, ফ্রান্স তাদের একটি। যদিও ওই সময়ে তারা আগ্রহ দেখায়নি। সুতরাং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার জন্য যে ধরনের রাজনৈতিক কাঠামো দরকার সেটি এখানে আছে বলে মনে হয় না।ফ্রান্সের কাছ থেকে বাংলাদেশ রাডার, স্যাটেলাইট কিনেছে। কিন্তু জাহাজ, উড়োজাহাজ, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট বিষয়ে রাজনৈতিক ইচ্ছার কিছুটা ঘাটতি আছে—বলেন তিনি।সামরিক সহযোগিতা নিয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাংলাদেশের চাহিদা, পণ্যের দাম এবং ফ্রান্সের প্রস্তাবের ওপর নির্ভর করবে এই সহযোগিতা।

তিনি বলেন, ফ্রান্সের প্রযুক্তি অনেক ভালো তবে মূল্যও অনেক বেশি। বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।‘ইন্দো-প্যাসিফিক চীনবিরোধী একটি ভিশন’ উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, পৃথিবী এখন জটিল সমীকরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এসময়ে কোনও একটি নির্দিষ্ট পক্ষ নেওয়া যুক্তিসঙ্গত হবে না।সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে কোনও পক্ষ অবলম্বন করা ঠিক হবে না।’প্রসঙ্গত, আগামীকাল মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) পাঁচ দিনের সফরে প্যারিসে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। এদিনই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন তিনি। এই সফরে বেশ কয়েকটি সমঝোতা সইয়ের পাশাপাশি নিরাপত্তা খাতে একটি লেটার অব ইনটেন্ট সই হতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

You might also like