উপজেলা চেয়ারম্যানকে বাদ দিয়ে ইউএনও কীভাবে সভাপতি হন : হাইকোর্ট

স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে ন নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানকে বাদ দিয়ে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) কীভাবে পরিষদের বিভিন্ন স্থায়ী কমিটিতে সভাপতি হন, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। আগামী ১০ দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সচিব, আইন মন্ত্রণালয় সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে বুধবার (৬ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার নওরোজ মো. রাসেল। আর রিটকারী সংগঠন বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট হাসাম এমএস আজিম।

এর আগে গত ৪ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি রিট দায়ের করা হয়। বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দুমকি উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ ও অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরু, উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রিনা পারভীন, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আহম্মেদ ও ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদা আক্তার প্রমুখ এই রিট দায়ের করেন।রিট আবেদনে উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা চ্যালেঞ্জ করা হয়। এই ধারায় ইউএনওদের উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও আর্থিক শৃঙ্খলা আনয়নসহ সাচিবিক দায়িত্ব পালনের বিধান রাখা আছে। এছাড়াও রিটে ইউএনও’রা বিভিন্ন আমন্ত্রণপত্রে উপজেলা পরিষদ না লিখে উপজেলা প্রশাসন লিখে থাকেন, তারও বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি আদেশ বাস্তবায়নে যেসব কমিটি গঠন করা হয়, সেসব কমিটিতে ইউএনও’কে চেয়ারম্যান করার বৈধতাও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।

আইনের ৩৩ ধারার (১) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হইবেন এবং তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করিবেন।’ ৩৩-এর (২) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য কার্যাবলি পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পাদন করিবেন।রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম বলেন, পরিষদ কোনও সিদ্ধান্ত দিলে তা ইউএনও বাস্তবায়ন না করলে পরিষদের করণীয় কিছু থাকে না। কারণ, ইউএনওর উপজেলা পরিষদের কাছে জবাবদিহির বাধ্যবাধকতা আইনে রাখা হয়নি। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার স্বাধীনতাকে এই একটি ধারার মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই ৩৩ ধারা সংবিধানের ৭ ও ৫৯ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। ৫৯(১)-এ স্থানীয় শাসন সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, মাঠ প্রশাসন কোনও চিঠিপত্র লিখলে বা অনুষ্ঠান করলে দাওয়াতপত্র বা ব্যানারে উপজেলা পরিষদ না লিখে লিখছে উপজেলা প্রশাসন। এই ‘উপজেলা প্রশাসন’ কোথাও উল্লেখ নেই। এর মাধ্যমে ইউএনওরা স্থানীয় সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া সরকারি কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে যত কমিটি গঠন করা হয় তার সবগুলোয় ইউএনওকে চেয়ারম্যান করা হয় এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের করা হয় উপদেষ্টা। আবার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় উল্লেখ থাকে, ইউএনও ইচ্ছে করলেই আরও সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। এর মধ্য দিয়ে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণকে প্রায় নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। এমনই অনেক ক্ষেত্রে আয়-ব্যয়ের হিসাবও তাদের দেওয়া হয় না। যা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও স্থানীয় সরকার পদ্ধতির চেতনার পরিপন্থী। রিট আবেদনে অন্তর্বর্তী নির্দেশনাও চাওয়া হয়।

You might also like