এখনও সচল উসমানের (রা.) ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডন: ইসলামের তৃতীয় খলিফা ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মেয়ের জামাতা উসমান ইবনে আফফান (রা.) ছিলেন ধনী ও দানশীল ব্যক্তি। জীবদ্দশায় তিনি মানবকল্যাণে বহু সম্পদ দান ও ওয়াক্ফ করেন।তাঁর সেসব দান ও ওয়াকফকৃত সম্পদ দ্বারা এখনো উপকৃত হচ্ছে।এ বিষয়ে জানতে হলে ঐতিহাসিক রুমা কূপের ইতিহাস পড়তে হবে।মদিনায় ‘বিরেরুমা’ বা রুমার কূপ নামে ইহুদিদের একটি কূপ ছিল। ইহুদিরা এ সুযোগে কূপের পানি মুসলমানদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করতে শুরু করলেন।সাহাবারা রাসুলকে (সা.) এ বিষয়ে অবগত করলে তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আছ যে, এই কূপ মুসলমানদের জন্য ক্রয় করে দেবে। মুসলমানদের এই কূপ যে কিনে দেবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে ঝর্ণা দান করবেন।রাসুলের (সা.) কথায় হজরত উসমান (রা.) ইহুদির কাছে এই কূপ কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন।এক পর্যায়ে ইহুদিদের থেকে ৩৫ হাজার রৌপ্য মুদ্রায় কূপটি কিনতে সক্ষম হন উসমান (রা.)। মুসলমানদের জন্য ওয়াক্ফ করে দেন তিনি।

এক সময় এক ধনী লোক উসমানের (রা.) কাছ থেকে কূপটি দ্বিগুণ দামে কিনতে চাইলে তিনি বলেন, আমার চাহিদা এর চেয়ে আরও অনেক বেশি।শেষে ধনী লোকটি বললেন, এমন কেউ আছে যে আপনাকে কূপটির মূল্য ১০ গুণ বলেছেন? উসমান (রা.) জবাবে বললেন, আমার আল্লাহ আমাকে প্রতি নেকিতে ১০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন।হজরত উসমানের (রা.) শাসনামলে এই কূপের চারপাশে খেজুর বাগান তৈরি হয়। সময়ের চাকা ঘুরে বহু উত্থান-পতনের পর সৌদি রাজপরিবার সৌদি আরবের রাজসিংহাসনে বসার সময় এই বাগানে খেজুরগাছের সংখ্যা ১৫৫০টিতে পৌঁছায়।সরকার বাগানের চারদিকে দেয়াল তৈরি করে দেয়। এই ভূসম্পত্তি ওসমানের (র) নামে দলিল করে দেয় এবং তার নামে খুলে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার পরে কূপ ও এ বাগান কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিবছর বাগান থেকে আহরিত খেজুর বিক্রি করে যে অর্থ উপার্জিত হয়, তার অর্ধেক এতিম-গরিবদের দান করা হয় এবং অর্ধেক উসমান (রা.)-এর নামের সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হতে থাকে। অ্যাকাউন্টটি পরিচালনা করছে সৌদি ধর্ম মন্ত্রণালয়।এভাবে ব্যাংকে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা হয় যে তা দিয়ে মসজিদ-ই-নববী (সা.)-এর পাশেই আকর্ষণীয় একটি জায়গা কিনে সেখানে একটি পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ করা হয়, যার নেমপ্লেটে লেখা আছে ‘মালিক সাইয়্যিদুনা উসমান (রা.)।যেহেতু তার ওয়াকফকৃত সম্পত্তি থেকে অর্জিত অর্থে এটি নির্মিত, তাই মালিক হিসেবে তার নামই উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ সালে হোটেলটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়।হোটেলের আয়ও উসমান (রা.)-এর অন্য সম্পদের মতো একভাগ এতিম-মিসকিনদের দান করা হয় এবং আরেক ভাগ উসমান (রা.) এর নামে চলিত অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়।

মজার বিষয় হলো— মাস ফুরালে এখনো খলিফা উসমানের নামেই আসে গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল।ইসলামি স্কলাররা বলেন, উসমানের (রা.) এ দান আল্লাহ এমনভাবে গ্রহণ করে নিয়েছেন যে, কেয়ামত পর্যন্ত তা চালু থাকবে।

আবদুল মুহসিন বিন ফারুক কুরাইশীর প্রবন্ধ ও আল আরাবিয়ার প্রতিবেদন অবলম্বনে।

You might also like