নির্মূল কমিটির ওয়েবিনার: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী বন্ধুদের অবদান অনন্যসাধারণ

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ ১লা আগষ্ট, রবিবার, বিকেল ৩টায় মুক্তিযুদ্ধকালের ঐতিহাসিক ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এক ওয়েবিনারের আয়োজন করে।সংগঠনের সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এই ওয়েবিনারে প্রধান বক্তা ছিলেন নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।নির্মূল কমিটির সিলেট জেলা শাখার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে বক্তব্য প্রদান করেন সুনামগঞ্জ ৫ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য জনাব মুহিবুর রহমান মানিক, নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকার নেতা কাজী মুকুল, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ-এর সিনিয়র সহসভাপতি জনাব শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ-এর সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশিয় গণসম্মিলন পশ্চিমবঙ্গ শাখার সমন্বয়কারী সমাজকর্মী বিদ্যুৎ দেবনাথ, নির্মূল কমিটির চিকিৎসা সহায়তা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব, নির্মূল কমিটির যুক্তরাজ্য শাখার উপদেষ্টা মাহমুদ এ রউফ, নির্মূল কমিটির ফ্রান্স শাখার আহ্বায়ক চলচ্চিত্রনির্মাতা প্রকাশ রায়, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগ-এর সহসভাপতি ও সিলেট জেলার অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট কিশোর কর, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী মুক্তিযোদ্ধা নাজনীন হোসেন, সিলেট প্রেস ক্লাব-এর সাবেক সভাপতি সাংবাদিক তাপস দাস সহ সংগঠনের সিলেট জেলার নেতৃবৃন্দ।

১৯৭১ সালের ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এ অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১ আগস্ট ছিল রবিবার। কাকতালীয়ভাবে ২০২১ সালে আমরা যখন এই মহতী অনুষ্ঠানের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি, তখন আজও সেই রবিবার। এই কনসার্টের মাধ্যমে ’৭১-এর গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনায় পশ্চিমা বিশ্বের বিবেকবান মানুষের হৃদয় দ্রবিভূত হয়েছিল এবং গণহত্যাকারী পাকিস্তানি সামরিক জান্তার প্রতি ঘৃণা তীব্রতর হয়েছিল।

‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজনের প্রধান নায়ক পণ্ডিত রবিশঙ্কর-এর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনার স্মৃতিচারণ করে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকার সরকার ও প্রশাসন পাকিস্তানি সামরিক জান্তার পক্ষে থাকলেও সে দেশের গণমাধ্যম এবং শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন যা মার্কিন সিনেট ও কংগ্রেসকেও প্রভাবিত করেছিল। আমাদের বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে ভারতের সরকার, সশস্ত্র বাহিনী, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের জনগণের সর্বাত্মক সমর্থনের বিষয়টি। ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তিন দিকপাল পণ্ডিত রবিশঙ্কর, ওস্তাদ আলী আকবর খান ও ওস্তাদ আল্লারাখা ছাড়াও বিশিষ্ট ভারতীয় শিল্পীরা ছিলেন। যাদের সঙ্গে ‘মেডিসন স্কয়ার গার্ডেন’-এর বিশাল মঞ্চ আলোকিত করেছিলেন জর্জ হ্যারিসন, বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি পিটার্সন, রিঙ্গো স্টার, লিয় রাসেল ও ক্লাউস ভুরমানের মতো আন্তর্জাতিক অঙ্গনের উজ্জ্বল সঙ্গীত তারকারা।’

শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপ সহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশের শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, আইনপ্রণেতা, মানবাধিকার কর্মী ও শান্তিকর্মীরা যে অনন্যসাধারণ অবদান রেখেছেন, অন্য কোনও দেশ ও জাতির মুক্তিসংগ্রামের ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায় নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধকালে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মর্যাদার সুউচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিল। এ কারণেই একাত্তরের পরাজিত পাকিস্তানপন্থীরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি সর্বোত্তম শ্রদ্ধা আমরা তখনই প্রদর্শন করতে পারব যখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ভিত্তিতে রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালিত হবে।’

জাতির পিতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিদেশী বন্ধুদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সুনামগঞ্জ ৫ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য জনাব মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালির নেতা নয়, তিনি পৃথিবীর সকল শোষিত বঞ্চিত মানুষের অনুপ্রেরণা। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীসহ ভারতের সাধারণ জনগণ শুধু নিঃস্বার্থ সহায়তা নয় বরং বহু ভারতীয় সৈনিক প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন। বাংলাদেশ ও ভারত-এর এই মৈত্রী অটুট থাকবে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন বাংলাদেশের জন্য।‘কিন্তু ’৭২ থেকে ’৭৫ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পরাজিত পাকিস্তানপন্থীরা ভারতের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা, ধর্মকে হাতিয়ার করে সমাজে বিভেদ সৃষ্টি সহ দেশে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তৃত করেছিল। যা প্রমাণিত হয় ’৭৫-এ জাতির জনককে নৃশংসভাবে স্বপরিবারে হত্যার পরে স্বাধীনতাবিরোধীদের শুধু পুনর্বাসন নয় বরং পুরস্কৃত করার মাধ্যমে।

‘বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে, কিন্তু হত্যার ক্ষেত্র যারা তৈরি করেছে এবং যারা আদর্শিকভাবে হত্যায় কলকাঠি নেড়েছে তাদেরকে এখনও আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি, বিচারের আওতায় আনতে পারি নি। তারা এখনও আমাদের আশেপাশেই অবস্থান করছে। তারা এখনও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী আন্তর্জাতিক শক্তির সাথে, মৌলবাদী শক্তির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। আমাদের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এখন রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। এখনই সময় এসব লুকিয়ে থাকা, ঘাঁপটি মেরে থাকা পাকিস্তানপন্থীদের নির্মূল করার। রাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শত্রু মিত্র চিনে এগিয়ে যেতে হবে।’বক্তারা জাতীয় শোকের মাসের প্রথম দিন বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনন্য অবদানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের বিদেশী বন্ধুরা যারা গত ৫০ বছরে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের স্মৃতির প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

You might also like