ওল্ড ইজ গোল্ড: হেমন্ত মুখার্জীর মুখোমুখি

 আবু মুসা হাসান

 

করোনা প্রকোপ চললেও উপমহাদেশের কিংবদন্তী গায়ক হেমন্ত কুমার মুখোপধ্যায়ের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে অনলাইনে এবং টেলিভিশনের পর্দায়, দেশে ও বিদেশ বিভুঁইয়ে। কোলকাতায় বেড়ে উঠা হেমন্ত মুখার্জির জন্ম ১৯২০ সালের ১৬ ই জুন। স্কুল জীবনে তিনি কবি সুভাষ মুখোপধ্যায় এবং বিশিষ্ট সাহিত্যিক সন্তোষ কুমার ঘোষের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন। কলেজ জীবন শেষ করে প্রকৌশলী হওয়ার জন্য তিনি যাদবপুরের বেঙ্গল টেকনিকাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু মিউজিকের প্রতি আসক্তি থাকায় তাঁর আর প্রকৌশলী হয়ে উঠা হলেনা।

১৯৮৯ সালের ২৬শে সেপ্টম্বর পরপারে চলে যাওয়ার কিছুদিন আগে হেমন্ত মুখোপধ্যায় ঢাকা সফরে এসেছিলেন। মনে পড়ছে, জাতীয় প্রেসক্লাবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের অনুষ্ঠানে তিনি প্রাণভরে পুরনোদিনের সেইসব কালজয়ী গান শুনিয়েছিলেন। প্রেস ক্লাবের অনুষ্ঠানে মেয়ে তুনিয়া ও ছেলে অভীকে নিয়ে নীলু সামনের সাড়িতে শিল্পীর মুখোমুখি বসে গান উপভোগ করেছিল।

ঐসময় আমি চট্টগাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বকোনের ঢাকা ব্যুরো চীফ হিসেবে কর্মরত ছিলাম। পূর্বকোনের বার্তা সম্পাদক নাসির চৌধুরীর অনুরোধে আমি এই কিংবদন্তী শিল্পীর একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। দৈনিক দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক প্রয়াত বোরহান ভাইয়ের মাধ্যমে সাক্ষাৎকারের সময় নির্ধারণ করেছিলাম।

জাতীয় সংসদে এবং রাজপথে রাজনৈতিক ঘটনাবলীর ওপর রিপোর্ট করা আর নেতাদের সাক্ষাৎকার নেয়ায় পারদর্শী হলেও শিল্পী-সাহিত্যিকদের সাক্ষাৎকার নেয়ার অভিজ্ঞতা ছিলনা। তবে পূর্বকোণ এর ব্যুরো চীফ থাকায় তখন সব ধরনের এসাইনমেন্টই করতে হতো। মনে আছে নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপার সাক্ষাৎকারও নিয়েছিলাম।

সে যাই হোক, সময়মতো হোটেল শেরাাটনে পৌঁছে গেলাম। কুশল বিনিময় করে সাক্ষাৎকার নিলাম। এতো বছর আগে নেয়া সাক্ষাৎকার হলেও একটি প্রশ্ন এবং উত্তর এখনও মনে গেঁথে আছে।

কালজয়ী শিল্পীর কাছে আমার প্রশ্ন ছিল, পুরনো দিনের গানগুলো এখনো কেন এতো জনপ্রিয়? হেমন্ত মুখার্জী অকপটে বলেছিলেন, তাল, লয়, সুর ও মর্মবাণীর জন্য পুরনো দিনের গানগুলোর জনপ্রিয়তা দীর্ঘস্থায়ী হয়, কাল থেক কালান্তরে টিকে থাকে। অন্যদিকে ধুম-ধারাক্কা গানগুলো তাৎক্ষিকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও সহসাই বুদবুদের মতো মিলিয়ে যায়।

৩০ বছর পরে এখন হৃদয়ঙ্গম করতে পারছি পুরনো দিনের গানগুলোর আবেদন আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে।”এই রাত তোমার আমার/ ওই চাঁদ তোমার আমার, শুধু দুজনার/ এই রাত শুধু যে গানের, এই ক্ষণ এই দুটি প্রাণের কুহু কুজনের/ এই রাত তোমার আমার…” ৬০ বছর আগে হেমন্ত মুখার্জির কন্ঠে এবং সুরে গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের লেখা দীপ জ্বলে যাই সিনেমার এই গানটি শুনলে কার না ভালো লাগবে?

আবু মুসা হাসান: সাংবাদিক, সত্যবাণীর উপদেষ্টা সম্পাদক।

You might also like