কজলিস্টে আসে আপিল শুনানি হয় না
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রমিক নেতা,মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের সাদেক সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টারের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ৭ মে।তার হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের করা আলাদা লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি) শুনানি থেমে আছে।এখন করোনা মহামারির কারণে আদালত বন্ধ আছে।কিন্তু এর আগে মামলাটির এই আপিল শুনানি হয়নি।যদিও এই শুনানির জন্য কজলিস্টে (কার্যতালিকায়) অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড শামছুল আলম নামে নিয়মিত থাকছে।সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এই শুনানি শুরু না হওয়ার পেছনের কারণ কী?
আইনজীবীরা জানান,এ মামলায় হাইকোর্টের রায়ে যারা খালাস পেয়েছেন এবং যাদের মৃত্যুদণ্ড কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে সেসব ক্ষেত্রে বাদীপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ আলাদা লিভ টু আপিল করে।এ ছাড়া দণ্ডিত আসামিরাও আলাদা লিভ টু আপিল করেন। এসব এখন শুনানির অপেক্ষা।শুনানি না হওয়ার কারণ হিসেবে জানা গেছে, মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির জন্য থাকলেও আসামিপক্ষের সময় আবেদনের কারণে আপিল আবেদনের ওপর এখনও শুনানি শুরু করা যায়নি।প্রধানবিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বিচারপতিদের বেঞ্চ এই মামলার শুনানির জন্যে অপেক্ষমাণ রয়েছে।রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন,আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার আপিল শুনানি হচ্ছে না বাদীপক্ষের বারবার সময়ক্ষেপণের কারণে।মামলার আপিল বেঞ্চে নিয়মিত কজলিস্টে (কার্যতালিকায়) থাকে,কিন্তু শুনানি হয় না।
এর আগে ২০১৬ সালের ১৫ জুন আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল মামলার রায়ে ১১ জনকে খালাস দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ে বিচারিক আদালতের দেয়া বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারসহ অন্য ছয়জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন উচ্চ আদালত। বিচারিক আদালতে দণ্ড পাওয়া জীবিত ২৬ আসামির মধ্যে ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। আগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত একজন পলাতক থাকায় তার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি আদালত। এসব আসামির মধ্যে ১৭ জন কারাগারে ও ৯ জন পলাতক রয়েছেন। এ ছাড়া দুজন মারা গেছেন।
বিচারিক আদালতের দেয়া ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে খালাস পাওয়া ওই ১১ আসামি হলেন- আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর ওরফে বড় জাহাঙ্গীর, ফয়সাল (পলাতক), লোকমান হোসেন ওরফে বুলু, রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির (পলাতক), খোকন (পলাতক), দুলাল মিয়া, রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু, আইয়ুব আলী, জাহাঙ্গীর ও মনির।যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ৮ জনের মধ্যে ৭ জনকে বিচারিক আদালতের দেয়া ফাঁসির সাজা কমেছে এবং বাকি একজনের আগের সাজাই বহাল রয়েছে। এদিকে, মারা যাওয়া দুই আসামির করা আপিলের নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আদালত। আর মামলার মোট ৩০ আসামির মধ্যে দু’জন বিচারিক আদালতেই খালাস পেয়েছিলেন।চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ছয়জন হলেন- নুরুল ইসলাম সরকার, নুরুল ইসলাম দিপু (পলাতক), মাহবুবুর রহমান মাহবুব, শহীদুল ইসলাম শিপু, হাফিজ ওরফে কানা হাফিজ ও সোহাগ ওরফে সরু।মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাতজন হলেন- মোহাম্মদ আলী, সৈয়দ আহমেদ হোসেন মজনু (পলাতক), আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু (পলাতক), রতন মিয়া ওরফে বড় রতন, ছোট জাহাঙ্গীর (পলাতক), আবু সালাম ওরফে সালাম ওমশিউর রহমান ওরফে মশু (পলাতক)। যাবজ্জীবন বহাল থাকা আসামি হলেন নুরুল আমিন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অহিদুল ইসলাম টিপু পলাতক থাকায় তার সাজার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি আদালত।বিচারিক আদালতে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়ার পর মারা যাওয়ায় আল আমিন ও রতন ওরফে ছোট রতনের আপিলের নিষ্পত্তি করে দেন হাইকোর্ট। ৩০ আসামির বাকি দু’জন কবির হোসেন ও আবু হায়দার ওরফে মিরপুরইয়া বাবু বিচারিক আদালত থেকেই খালাস পেয়েছিলেন।২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় আহসান উল্লাহ মাস্টারকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ঘটনার পরদিন আহসান উল্লাহ মাস্টারের ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় ১৭ জনের নামউল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।এরপর বিচার শেষে ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল বিচারিক আদালত নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ ও দু’জনকে খালাস দেন।পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিষয়ে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল হয়। এর পর ২০১৬ সালের ১৫ হাইকোর্টের রায় ঘোষণা করা হয়। মামলার রায়ে ৬ জনের ফাঁসি বহাল। এই মামলায় ৩০ আসামির মধ্যে নিম্ন আদালতে মোট ২৮ জনের দণ্ড হয়। এর মধ্যে ২২ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এসব আসামিদের মধ্যে ১৭ জন কারাগারে ও ৯ জন পলাতক রয়েছেন। এ ছাড়া দুজন মারা গেছেন।
হাইকোর্টের আপিল শুনানি করেন যেসব আইনজীবী
রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার সঙ্গে ছিলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ,ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাসুদ হাসান চৌধুরী পরাগ ও রোনা নাহরীন। অন্যদিকে, বাদীপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম.আমীর -উল -ইসলাম, আবদুল মতিন খসরু প্রমুখ। অপরদিকে আসামিপক্ষে আপিল শুনানিতে অংশ নেন বিচারপতি টিএইচ খান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এ জে মোহাম্মদ আলী।হাইকোর্টের রায়ের পর ১১ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলআহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে খালাসপ্রাপ্ত ১১ জনের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ।খালাস পাওয়া ১১ আসামি হলেন ; আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর ওরফে বড় জাহাঙ্গীর, ফয়সাল (পলাতক), লোকমান হোসেন ওরফে বুলু, রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির (পলাতক), খোকন (পলাতক), দুলাল মিয়া, রাকিব উদ্দিন সরকার ওরফে পাপ্পু, আইয়ুব আলী, জাহাঙ্গীর (পিতা মেহের আলী) ও মনির। ১১ জনের মধ্যে তিন আসামি পালাতক রয়েছেন যারা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত।আবেদন করার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ বলেন, আমরা খালাসপ্রাপ্তদের রায় এজন্য স্থগিত চেয়েছি যেন মামলার রায়ের অনুলিপি প্রকাশিত হওয়ার পর আসামিরা বের হয়ে যেতে না পারে। কারণ তাদের বিরুদ্ধে আমরা আপিল বিভাগে নিয়মিত আপিল করব।