কবি শুভেন্দু ইমামকে ঘিরে তর্ক/ বিতর্ক, কথোপকথন আড্ডা, আলোচনা ও গানের আসর

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডন, ২৮ এপ্রিল: সাংস্কৃতিক সংগঠন কবিকণ্ঠএর উদ্যোগে  কবি শুভেন্দু ইমামকে নিয়ে রাতজাগা আড্ডা, কবিতা পাঠ, গান, আলোচনা, তর্কবিতর্কে উঠে আসে স্বাধীনতা পরবর্তী প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নানা দিগনির্দেশক বাক বদলকরা কর্মের স্মৃতিকথা।

গত ২৭ এপ্রিল পূর্ব লন্ডনে অবস্থিত সাপ্তাহিক পত্রিকা অফিসে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানের শুরুতে কবি টি এম কায়সারের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত স্মৃতিচারণ ও আড্ডার উপস্থিত সুধী ও সংস্কতিজনের পরিচিতি তুলে ধরেন কবি হামিদ মোহাম্মদ। আলোচনায় অংশ নেন সাংস্কৃতিক সংগঠক হুরমুজ আলী, আবিদ আলী আবিদ, কবি সারওয়ার ই আলম, সত্যব্রত দাস স্বপন, ড. আনসার আহমদ উল্লাহ, সৈয়দ এনামুল ইসলাম, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা  আহবাব মিয়া, আবদুল কাইয়ূম লাহি, সংস্কৃতকর্মী একে এম ইয়াহিয়া, সাংবাদিক  সামির মাহমুদ, বাউল শিল্পী সুফী আমীর মোহাম্মদ, কবি আনোয়ারুল ইসলাম অভি, সিলেটের লিটল থিয়েটারের অন্যতম কর্মী শাহ আহমেদ সাদিক মিঠু, নাট্য শিল্পী নাজিম উদ্দিন, কবি হিলাল সাইফ, লিনা সাদিক, তৌহিদ চৌধুরী ও  আইনজীবী মামুন রশীদ।

অনুষ্ঠান চলাকালে মাঝখানে যোগ দেন নৃত্য ও অভিনয় শিল্পী শিউলি ভট্টাচার্য। শেষ রাতে যোগ দেন পশ্চিমবঙ্গের মেধাবী লোকসঙ্গীতশিল্পী সৌরভ মনি, জনপ্রিয়  ব্রিটিশ-বাঙালি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সঞ্জয় দে ও তরুণ শিল্প-পৃষ্ঠপোষক অসীম সানি।

আলোচনায় উঠে আসে আশি ও নব্বই দশকের সামরিক শাসন ও মৌলবাদ বিরোধী গড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক আন্দোলন, সৃজনশীল আবৃত্তিচর্চা ও নাট্যআন্দোলনের মাধ্যমে সমাজ বদলে ঝাঁপিয়ে পড়া শিকড়সংগঠনের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা। কবি শুভেন্দু ইমাম ও হামিদ মোহাম্মদ ছিলেন শিকড়সংগঠনের মূখ্য কর্ণধার। এই সংগঠনের শিকড়নামে সৃজনশীল সংকলন প্রকাশনা ছিল গত তিন দশকের আলোচিত সাহিত্যপত্র। হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনামালে রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ছিল। এ সময় রাজনৈতিক আন্দোলনের বিকল্প হিসাবে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক আন্দোলনে রাজনীতিকদের সমবেত করতে পেরেছিল শিকড়।এ সময় সিলেটে আবৃত্তিচর্চাকে একটি শিল্প হিসাবে গড়ে তুলে শিকড়। অসংখ্য আবৃত্তি শিল্পীর পথচলা শুরু হয় তখন থেকেই। সেই সঙ্গে নিস্তরঙ্গ সিলেটের বন্ধ্যা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছিল এই সংগঠনের এক ঝাঁক তরুণ। আলোচনায় বক্তারা আরো বলেন, সিলেট শিল্পকলা একাডেমীর সাংস্কৃতিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকালে শুভেন্দু ইমাম প্রগতিকামী ও সৃজনশীল সাংস্কৃতিক চর্চার বিকাশ ঘটাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।

আলোচকবৃন্দ বলেন, শুভেন্দু ইমাম শুধু সাংস্কৃতিক সংগঠকই নন, তিনি একজন কবি, সুসাহিত্যিক এবং বাংলাভাষার  শুদ্ধ ও আধুনিক নির্মাণ শৈলীর দক্ষ কারিগর। তাঁর মূখ্য সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে বৃহত্তর সিলেটের ইতিহাসদুই খন্ডএছাড়া বাউল সম্রাট  শাহ আবদুল করিম রচনা সমগ্র’ ‘শাহ আবদুল করিম পাঠ ও পাঠকৃতিনামে দুটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন। আলোচনা গ্রন্থ রয়েছে লালন প্রসঙ্গ’  ‘শাহ আবদুল করিম সংকলন ও সম্পাদনাগ্রন্থদ্বয়। কবিতার  বইয়ের মধ্যে রয়েছে তোমার উদ্ধার নেই,’ সন্ধানসূত্র

কবি শুভেন্দু ইমাম সাংস্কৃতিক সংগঠক, শিল্পকলা একডেমীর সাংস্কৃতিক কমকর্তার বাইরে ছিলেন সৃজনশীল বইয়ের বিপনন কেন্দ্র বইপত্রনামক দোকানের প্রধান পরিচালক। আফতাব হোসেইন ও সৈয়দ এনামুল ইসলাম তিন বন্ধু মিলে সিলেট শহরের প্রাণ কেন্দ্র জিন্দবাজারে এই প্রতিষ্ঠানটি নব্বই দশকের গোড়ার দিকে গড়ে তোলেন।

টি এম কায়সার তার বক্তব্যে বইপত্রসম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘বইপত্র’  দোকানটিতে এমনই উচ্চ মাপের বইয়ের সমাবেশ থাকতো, জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের বইও বিক্রি করা হতো না। ব্যবসা করতে গিয়ে এমন বিবেচনা সত্যিই অবাক করার মতো ঘটনা। অন্যদিকে দুই বাংলায় খুঁজে যে বইটি পাওয়া যেতো না এমন বিরল বই পাওয়া যেতো বইপত্রতে। এ বইয়ের দোকানে এসে বই কিনেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, কবি শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, কবি মোহাম্মদ রফিক, হাসান আজিজুল হকের মতো লেখক ও কবিবৃন্দ।  

অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া বাউল সুফী আমীর মোহাম্মদ দ্বিতীয় পর্বে  বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম, দ্বিজ দাস, দুর্ব্বিণ শাহর বেশ কয়েকটি গান গেয়ে মুগ্ধ করেন সবাইকে। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে লোকগানে গাম্ভীর্য ছড়িয়ে তন্ময় করে তুলেন টি এম কায়সার। এরপরই অনুষ্ঠানে যোগ দেন পশ্চিমবঙ্গের মেধাবী লোকসঙ্গীতশিল্পী সৌরভ মনি, জনপ্রিয়  ব্রিটিশ-বাঙালি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সঞ্জয় দে। লোকসঙ্গীতশিল্পী সৌরভ মনি লন্ডনে কয়েকটি সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশ দিতে এসেছেন। টি এম কায়সারের পরিচয়সূত্রে অনুষ্ঠানে এসে লালন শাহ, জালাল উদ্দীন খা, রাধারমণসহ সিলেট অঞ্চলের অনেক অপ্রচলিত গান ব্যাখ্যাসহ পরিবেশন করেন। সঞ্জয় দে রবীন্দ্র সঙ্গীতের নানা মনকাড়া গানের টুকরো গেয়ে শোনান। তাদের বিরল গায়কীতে মনে হয়েছে গান নয়, হিরক খন্ড ঝরছে কণ্ঠে।

অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে কবি শুভেন্দু ইমামের সন্ধানসূত্রকবিতা গ্রন্থ থেকে কবিতা আবৃত্তি করে শোনান নৃত্য ও অভিনয় শিল্পী শিউলি ভট্টাচার্য। তার মুগ্ধ করা কণ্ঠশৈলীতে অপূর্ব শোনায় কবিতা আবৃত্তি।

অলোচনা  পর্বে কবি শুভেন্দু ইমাম তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আমার কিছু বলার নেই, শুধু বলতে চাই আজকের আয়োজনে সবার বক্তব্য শুনে আমি মুগ্ধ হয়েছি। অনুষ্ঠান এমন গঠনমূলক ও মনোমুগ্ধকর হবে তা আমার কল্পনার বাইরে ছিল।

উল্লেখ্য, কবি শুভেন্দু ইমাম  বছরাধিক আগে স্ট্রোকএ আক্রান্ত হয়েছিলেন, এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেননি। সস্ত্রীক লন্ডনে বেড়াতে এসেছেন। তার দুই পুত্র লন্ডনে বসবাস করছেন। তাদের সাহচর্যে আছেন।

অনুষ্ঠান চলাকালে শুরু থেকে শেষাবধি হরেক রকম মুখরোচক শুকনো খাবার ছিল উল্লেখ করার মতো। সব শেষে নৈশভোজ অনুষ্ঠিত হয়। শিউলি ভট্টাচার্য মিষ্টিমুখ করান উপস্থিত সবাইকে।

 

You might also like