কানাডার মন্ট্রিয়লে কমরেড শ্রীকান্ত দাশের ১৫তম প্রয়ান দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠিত
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ডেস্ক
সত্যবাণী
মন্ট্রিয়েল, কানাডা থেকে: ১৫তম প্রয়ান দিবস উপলক্ষে কানাডার মন্ট্রিয়েলে অনুষ্ঠিত হলো কমরেড শ্রীকান্ত দাশ স্মরণে এক আলোচনা অনুষ্ঠান। ছয় সদস্য বিশিষ্ট আয়োজক কমিটির আয়োজনে গত ১৯শে নভেম্বর, মঙ্গলবার এই স্মরণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।।
স্মরণ সভার শুরুতে প্রথম এক মিনিট নিরবতা পালনের মাধ্যমে কমরেড শ্রীকান্ত দাশ’র স্মরণে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানান উপস্থিত সূধীমন্ডলী। এতে মন্ট্রিয়ল শহরের সামাজিক, রাজনৈতিক ও শিল্পী সংস্কৃতি অঙ্গনসহ সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
গতানুগতিক ধারার বাহিরে উক্ত স্মরণসভাটি হয়েছে ভিন্ন ধারায়। আয়োজক কমিটির পক্ষে মূখ্য আলোচক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও লেখক তাজুল মোহাম্মদ জানান শিল্পী সংগ্রামী কমরেড শ্রীকান্ত দাশ ছিলেন আপাদমস্তক ভিন্ন ধাচের মানুষ। মুক্তিযোদ্ধা, আজীবন কমিউনিস্ট শিল্পী সংগ্রামী। তাই আমরা ইচ্ছে করেই ডিজিটালাইজেশনের বিশ্বায়নে হাতে লিখে সাদা কাগজে কালো কালি দিয়ে এমন-ব্যানার বানিয়েছি এবং এর একপাশে বাংলা ও বাঙালির প্রতীক আমাদের জাতীয় পতাকা রেখেছি। শুধু তাই নয় সচরাচর সভাপতিত্ব করে সভানুষ্ঠান না চালিয়ে সঞ্চালকের মাধ্যমে স্মরণসভাটি পরিচালনার ব্যবস্থা করেছি।
স্মরণসভাতে বক্তব্য রাখেন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, অধ্যাপক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডক্টর সৈয়দ শাখাওয়াত হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা দিলীপ কর্মকার, ডক্টর সৈয়দ জাহিদ হোসেন, শহীদ সন্তান অধ্যাপক বিদ্যুত ভৌমিক, সংস্কৃতি কর্মী রনজিত মজুমদার, রাজনীতিক ইয়াহিয়া আহমেদ, রাজনীতিক গোলাম মোতাহার মিয়া, সংস্কৃতি কর্মী অলোক চৌধুরী, বাকী বিল্লাহ বকুল, সাংবাদিক সৈয়াদা জোহরা শাম্মী, রিপন চন্দ ও কমরেড শ্রীকান্ত পুত্র সুশান্ত দাস প্রশান্ত প্রমুখ।
আরো ছিলেন, সংস্কৃতি কর্মী বাবলা দেব, রোমান আহমেদ, কবির মোল্লাহ, বাকি বিল্লাহ বকুল, হামম প্রমোদ, তপন কর্মকার, সৃত বিল্লাহ, এমডি ফকরুল হোসেন, আব্দুল কাইয়ুম, সাব্বির আহমদ, রিপন আহমদ, বৈশাখ ফ্রাসোয়া বিশ্বাস,শাহীন আহমদ প্রমুখ।
স্মরণসভার আহ্বানে ছিলেন শর্মিলা ধর, বাবলা দেব, ইয়াহিয়া আহমেদ, গোলাম মোহাম্মদ মোতাহির মিয়া, অলোক চৌধুরী এবং তাজুল মোহাম্মদ।
জান্নাত ইসলাম তুষ্টির সঞ্চালনায় স্মরণসভায় কমরেড শ্রীকান্ত দাশ’র সাধারণ পরিচিতি পর্ব তুলে ধরেন লেখক ও গবেষক তাজুল মোহাম্মদ। পরিশেষে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সভার সমাপ্তি হয়।
সাবেক উপাচার্য ডক্টর সৈয়দ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, রাজনীতির চারনক্ষেত্রে বহুমাত্রিক সংযোগ স্থাপনকারী ছিলেন কমরেড শ্রীকান্ত দাশ। তিনি বাংলাদেশ চষে বেড়িয়েছেন, তিনি ভাটি এলাকার মানুষের অন্তরের কথা জানার জন্য চেষ্টা করেছেন, সারাজীবন তিনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য চিন্তা করেছেন, বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন, অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করেছেন, গান দিয়ে যুদ্ধ করেছেন, তাঁর জ্ঞান দিয়ে যুদ্ধ করেছেন, শক্তি দিয়ে যুদ্ধ করেছেন,তাঁর চেতনা দিয়ে যুদ্ধ করেছেন এমন ভার্সেটাইল মানুষ বাংলাদেশে খুব কম আছেন।
উল্লেখ্য, আজীবন ত্যাগব্রতী কমরেড শ্রীকান্ত দাশ’র জন্ম ৫জুলাই (১৯২৪) রোজ শনিবার, সুনামগঞ্জের শাল্লার আঙ্গারুয়া গ্রামে। তাঁর অপ্রকাশিত ডায়রি সহ লিখে গিয়েছেন অর্ধশত গণসংগীতসহ, মুক্তিযুদ্ধের অনন্য দলিল ঐতিহাসিক নাটক “ মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যন্ত অঞ্চল “। খোলে গিয়েছিলেন ‘শুদ্ধ সংগীত বিদ্যালয়’ নামে শাল্লায় একটি গানের স্কুল। তিনি রাজনীতিতে আসেন উত্তাল চল্লিশে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তাঁর বিখ্যাত গান “ কাউয়ায় ধান খাইলরে, খেদানোর মানুষ নাই; কামের বেলা আছে মানুষ খাইবার বেলা নাই। ১৩৫০ বাংলার ফাল্গুন মাসে [১৯৪৩/১৯৪৪সাল] সুরমা উপত্যকায় ৮ম কৃষক সম্মেলন-এ তিনি প্রথম গণসংগীতে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৪৪/১৯৪৫ সালে নেত্রকোনায়, “অল ইন্ডিয়া কৃষক সম্মেলন”এ তিনি যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের ১৯ জানুয়ারি ভারতের মেঘালয়ে পরিমল হাজং এর মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধির সাথে করমর্দনের স্মৃতি তাঁর জীবনের আনন্দের স্মৃতি। ভাটির হাওরের উড়াল সড়কের স্বপ্নদ্রষ্টা। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসাধারণ অবদানের প্রেক্ষাপটে তিনি ১৯৭২ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করেছিলেন।
৫ জুলাই ১৯৭১ নিজ (কমরেড শ্রীকান্ত) হাতে শাল্লা অপারেশন। ১৯৭২ সালে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা লগ্নে কমরেড শ্রীকান্ত দাশ অন্যতম সংগঠক ছিলেন (২২ ডিসেম্বর ২০১৯, কালেরকন্ঠ)। শাল্লা উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা ও উদীচী’র কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা(২০০৯/২০১০)। ১৪০৯ বাংলা (২০০২সাল) এর ১লা বৈশাখ (১৪এপ্রিল) সিলেটস্থ সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সোপান’ হতে সংবর্ধিত হয়েছিলেন। তিনি সান্নিধ্য পেয়েছেন লালা শরদ্বিন্দু দে, অজয় ভট্টাচার্য, সুরত পাল, বীরেশ মিশ্র, ইরাবত সিংহ, কমরেড মনিসিংহ, রাখাল বাবু, আদম আলী, তারা মিয়া, প্রবোধ নন্দ কর, সত্যেন সেন, রনেশ দাসগুপ্ত, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, নির্মলেন্দু চৌধুরী,- করুনাসিন্ধু রায়(কমরেড বরুন রায়ের বাবা) প্রমুখের।
বিজ্ঞান মনস্ক আলোকিত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ২০০৪ সালের ৬ অক্টোবর নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে নিজের দেহ দান করে যান কমরেড শ্রীকান্ত দাশ।