কায়েস বাংলাদেশকে কেবল দিয়েই গেছে
শামীম আজাদ
মার্চ ১০ তারিখ ছিল অনুজপ্রতিম বন্ধু মিজারুল কায়েসের প্রয়ানের দিন।
একজন বিরল ক্যারিয়ার ডিপলোমেট কায়েসের
সর্বশেষ পোস্টিং ব্রাজিলের আগে ছিলো গ্রেট ব্রিটেন। লন্ডনেই বাংলাদেশ হাউসে ওঁরা থেকেছেন। আমার বাড়ী থেকে অনেক দূরে। কাজেই কায়েসই আসতো।
কিছু কিছু মানুষ নিজের মতো তার বরাদ্দ সময়টুকু উদযাপন করে হঠাৎ চলে যায়। আর সে চলে গেলে মনে হয় আহা কি হারাইলাম!
সে বার বনানীতে ওঁর সদ্য নির্মিত কবরের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কত কথা মনে হল! তাঁর রুচি, দেশপ্রেম, বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতার উপর লন্ডন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ছেলেমেয়েদের ক্লাশ, অস্বুস্থ আজাদকে রোগশয্যায় কৌতুকময় গল্প বলে হাসানো, আমার সংগে একই মঞ্চে বেগম রোকেয়ার উপর অবিস্মরনীয় আলোচনা, তাঁর কারনে ব্রিটেনে কমনওয়েলথ মেধা সম্মেলনে রানীর সংগে কথোপকথনের সুযোগ, তাঁর কন্যাদ্বয় মানসী ও মাধুরীর সংগে আমার অসাধারন সময় যাপন, এ্যাভোন নদীর তারে উইলিয়াম সেক্সপীয়রের বাড়ীতে তাঁর অসাধারন বক্তৃতা ….. কত আর বলবো! আমার বিলেতের বারান্দা থেকে উৎসব আলোচনার মঞ্চ জুড়েছিলো কায়েস।
বনানী গোরস্থান কত বড় যে হয়েছে! ওখানেই আমার মা বাবা, খালা খালু, প্রাণের বন্ধু বাবলীর বাবা মা, আমার কুমুদিনীর বন্ধু পারুল, কবি আহসান হাবীব, শফিক মামা সহ আমার কত প্রানের মানুষরা ওখানেই সমাহিত। তাদের কি পরস্পরের সাথে দেখাশোনা হয়? আমি ঘুরে গেলে কি বলেন, শামীম এসেছিলো!আচ্ছা, আমার পরম বন্ধু পারুল ও যে এখানে রয়েছে সে কি আম্মা বা আব্বার সংগে কখনো কথা হয়েছে? নাকি কথা হয় না। কায়েসের মত ছটফটে মানুষ কি করছে এখানে!
ওঁর কন্যা মানসী মাঝে মাঝে আমার কাছে আসতো থাকতো। সকাল বেলা যখন ওর ঘুম ভাঙতো আমার বাজানো পুরানো বাংলা গান বা রবীন্দ্র সঙ্গীতে তখন সে ঘুম চোখে চা নিয়ে আমার গা ঘেষে বসতো। ওর বাবাও তাই বাজাতো। কখনো ক্লাশ শেষে ক্লান্ত অবয়বে আমাকে জড়িয়ে ধরতো। বুঝতাম সে তার বাবার বন্ধুর মাঝে বাবার ঘ্রাণ খোঁজে।
কায়েস আমার অনেক ছোট হলেও আমরা প্রবল বন্ধু হয়েছিলাম বাংলাদেশ বিশেবসাহিত্য কেন্দ্র গড়ার কালে। ইন্দিরা রোডে। এক সংগে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের গাছের গোড়ায় জল দিতে দিতে গল্প করতাম, ওর অসাধারন কবিতা অনুবাদ শুনতাম, ওর বৃক্ষপ্রীতিতে আমাদের ইন্দিরা রোডের কেন্দ্র কেমন সবুজ মায়াময় হয়ে উঠেছিলো। আর সব ছাড়িয়ে আমরা একই প্রজন্মের তো! তাই কাজেকম্মে ছিলাম সমিল।
সে তাঁকে নিয়ে অন্যকে কোন কিছুই বলার অবকাশ দেয়নি। কায়েস বাংলাদেশকে কেবল দিয়েই গেছে। আমরা তাঁকে কিছুই দিতে পারিনি। এখন যখন বলার সুযোগ পেলাম, বাংলাদেশে তাঁর মত কৃতি সন্তানের কথা বলার মত যোগ্য নই বলে মনে হয়।
তবে আমার ভাই কায়েসের কথা বলতে পারি।
মাঝে মাঝে উচ্চস্বরে ক্রন্দন করে বলতে ইচ্ছে করে, কোথায় গেলিরে ভাই?
শামীম আজাদ: কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক