কুকুরের উৎপাতে গোটা সিলেটর জনজীবন দুর্বিষহ
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ সিলেট বিভাগজুড়ে বেড়েছে কুকুরের প্রচন্ড উৎপাত। মহানগরসহ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে যখন-তখন পথচারীদের উপর চড়াও হচ্ছে খেপাটে কুকুরের দল। সুযোগ বুঝে দিচ্ছে কামড়। কুকুরের ভয়ে অনেক এলাকা দিয়ে রাতের বেলা চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন স্থানে কুকুর দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। এতে পথচারীরা রীতিমতো ভীত ও সন্ত্রস্ত থাকেন। সম্প্রতি বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরে কুকুরের কামড়ে ৭ জন আহত হয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের এমন কোনো পাড়া-মহল্লা নেই-যেখানে কুকুরের উৎপাত নেই। যারা রাত করে ঘরে ফেরেন, তারাই বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কারণ রাত বাড়ার সাথে সাথে কুকুরের উৎপাতও বেড়ে যায়, কুকুরগুলো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা পথচারীদের গতিরোধ করে ফেলে। রিকশা, মোটরসাইকেল কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় থাকলেও কুকুরের ভয় থাকে যাত্রীদের। দলবদ্ধ কুকুর চলন্ত গাড়িকেও তাড়া করে অনেক সময়। ফলে ভয়ে অনেক যাত্রী বিকল্প পথে ঘরে ফিরতে বাধ্য হন।
বিয়ানীবাজার সংবাদদাতা জানিয়েছেন, বিয়ানীবাজার পৌরশহরসহ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এসব কুকুরের আক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছেন সববয়সী লোকজন। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে কুকুরের আক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেশী। এখানকার বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় কুকুর দল বেঁধে বসে থাকে। বিয়ানীবাজারে বর্তমানে কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার আশঙ্কাজনক। সেই সঙ্গে ২ বছর ধরে কুকুরকে টিকা দেয়ার সংখ্যাও কমছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, প্রজননের সময় ঘনিয়ে আসায় পৌরশহরসহ উপজেলাজুড়ে কুকুরদের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিয়ানীবাজার পৌরশহরের অন্ততঃ ১২/১৫টি স্থানে কুকুরের দল ঘুরে বেড়ায়।
সম্প্রতি ময়না আক্তার (৩৫) নামের এক গৃহবধূ কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভ্যাকসিন নিয়েছেন। তিনি বলেন, কুকুরগুলো পাগল হয়ে গেছে, মানুষ দেখলেই তেড়ে আসে। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই মানুষকে কামড়ে দেয়। গত পরশু আমাকেও কয়েকটি কুকুর ঘিরে ধরে। তাদের মধ্যে একটি আমাকে কামড় দিয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা তারেকুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, কুকুর মূলত জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হলে মানুষকে কামড় দেয়। এ ছাড়া গর্ভধারণের সময়ও কামড়ায়। তবে উপজেলায় এমন কুকুরের সংখ্যা কত, তা জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে ২ গ্রামে কুকুরের কামড়ে নারীসহ ৭ জন আহত হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের জগদীশপুর গ্রামে এবং পৌরসভার জগন্নাথপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, দুপুরের দিকে হঠাৎ করে একটি কুকুর জগদীশপুর গ্রামে লোকজনকে কামড়াতে থাকে। এতে ওই গ্রামের ৬ জন আহত হন। আহতরা হলেন, সাহিরা বেগম, আরসি বেগম, রেদওয়ান হোসেন, সাইফুল মিয়া, ছায়া বেগম ও সুলতানা বেগম।
শুক্রবার সকালে পৌর এলাকায় একটি কুকুরের কামড়ে রেজাউল নামে এক ব্যক্তি আহত হন। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বদরুদ্দোজা।
উপজেলার প্রায় সব এলাকায় ১০/১৫টি করে কুকুর দল বেঁধে চলাচল করে। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, শিশু পথচারীসহ সাধারণ মানুষকে তাড়িয়ে কামড়ানোর চেষ্টা করে প্রাণীগুলো। এ সময় ভয় পেয়ে পালাতে গিয়ে কেউ কেউ চলন্ত যানবাহনের সামনে পড়েও আহত হচ্ছেন।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ডা. আবু ইসহাক আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, কুকুরের কামড় ও আঁচড়ে জলাতঙ্ক রোগ ছড়াতে পারে। এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে মৃত্যু অনিবার্য। তবে সময়মত সঠিক ব্যবস্থা বা টিকা গ্রহণ করলে এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য।
তিনি বলেন, কুকুর কামড় বা আঁচড় দিলে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষারযুক্ত সাবান পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান কমপক্ষে ১৫ মিনিট ধৌত করতে হবে। এরপর যথাসময়ে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা নিতে হবে।