গ্রেটার সিলেট কাউন্সিল নির্বাচন: নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডন: যুক্তরাজ্য প্রবাসী সিলেটী কমিউনিটির সর্ববৃহৎ সংগঠন গ্রেটার সিলেট কাউন্সিলের আসন্ন কেন্দ্রীয় নির্বাচন নিয়ে নানা তুঘলুকি কান্ড শুরু হয়েছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু না হতেই নানা পক্ষের বিতর্কিত আচরণে ক্রমেই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠছেন সংগঠনের সাধারণ সদস্যরা।
গ্রেটার সিলেট ডেপেলপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল সংক্ষেপে জিএসসির সেন্ট্রাল কমিটির নির্বাচন ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে ১১ ডিসেম্বর ২০২২ রবিবার ছিল প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন এবং ১৮ ডিসেম্বর ছিল নমিনেশন প্রত্যাহারে দিন।
এই সংগঠনের নেতৃত্বের নানা পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে জড়িতদের কয়েকজনের অভিযোগের তীর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দিকে। “প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকা প্রথম থেকে এ পর্যন্ত পুরোটাই ছিল বিতর্কিত ও পক্ষপাতদুষ্ট” বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন প্রার্থী। তাঁদের ভাষ্য হচ্ছে, “নির্বাচন কমিশনের নৈতিক ও আইনগত দ্বায়িত্ব হচ্ছে নিরপেক্ষ থাকা এবং সকল প্রার্থীর ক্ষেত্রেই নির্মোহ থেকে ন্যায্য আচরণ ও স্বচ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালন করা। স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনার সহ পুরো নির্বাচন কমিশনের নৈতিক ও আইনগত দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য।”

কিন্তু গ্রেটার সিলেট কাউন্সিলের আসন্ন নির্বাচনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকা প্রথম থেকেই ‘বিতর্কিত’ বলে অভিযোগ করেছেন প্রার্থীদের কয়েকজন।

অভিযোগকারী প্রার্থীদের সাথে কথা বললে, তারা জানান, “বিধি অনুযায়ি চূড়ান্ত ভাটার তালিকা বুঝে নিয়েই নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করার কথা। কিন্তু ১১ ডিসেম্বর ২০২২ নমিনেশন ফর্ম জমা নেয়ার দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ছিল না। সেদিন বিষয়টি নিয়ে উপস্থিত সদস্যরা তাদের ক্ষোভও প্রকাশ করেন। এছাড়া নমিনেশন ফর্মে ইলেকশন কমিশনারদের নাম ও তাদের সাথে যোগাযোগের জন্য ডেডিকেটেড ইমেইল এড্রেস থাকার কথা। কিন্তু সেখানে চীফ ইলেকশন কমিশনার বা কোন ইলেকশন কমিশনারের নাম ও ইমেইল এড্রেস এর পরিবর্তে বর্তমান চেয়ার, সেক্রেটারি ও ট্রেজারারের (যারা নিজেরাই ঐ একই পদের জন্য পুনরায় প্রার্থী) নাম ও ফোন নাম্বার দেওয়া হয়েছে, যা কোন নির্বাচনী মানদন্ডেই গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া মনোনয়ন ফরমে নির্বাচন কমিশনের সাথে যোগাযোগের কোন তথ্য না থাকাটা প্রার্থীদের সাথে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কিংবা অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের যোগাযোগের পথ বন্ধ রাখাটাও ‘দূরভিসন্ধিমূলক’ বলে প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন। বিষয়টি নিয়ে মনোনয়ন পত্র দাখিলের দিন অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করলে সংগঠনের বর্তমান চেয়ার ও সেক্রেটারি এ বিষয়ে তাদের ভুল স্বীকার করেন, “কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সেদিন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন, যা তার নিরক্ষেতা ও গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”
গ্রেটার সিলেট কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান কবে পূর্ণাঙ্গ ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ‘অফিসিয়ালী’ পেয়েছেন সেটা এবং এ ব্যাপারে তাঁর মতামত সম্পর্কে প্রার্থীরা জানার চেষ্ঠা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে একজন প্রার্থী অভিযোগ করেন।
এদিকে ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ি গত ১৮ ডিসেম্বর ছিলো প্রার্থীতা প্রত্যাহারের দিন। কিন্তু হঠাৎ করে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের কয়েক ঘন্টা আগে আচমকা টেক্সট ম্যাসেজের মাধ্যমে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের দিন সাতদিন পিছিয়ে দেওয়ার কথা জানানো হয়। নির্বাচনী তফসিলের অন্যতম একটি পরিবর্তন সম্পর্কিত এই ঘোষণাটি নির্বাচন কমিশন কিংবা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছ থেকে আসেনি। এসেছে বর্তমান চেয়ার, সেক্রেটারি ও ট্রেজারার এর কাছ থেকে, যারা নিজেরাই আবার স্ব স্ব পদের প্রার্থী। প্রার্থীগণ কর্তৃক তফসিল পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতাকে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে অভিযোগকারীরা মন্তব্য করেছেন।
গ্রেটার সিলেট কাউন্সিল যুক্তরাজ্য প্রবাসী সিলেটীদের বৃহত্তম প্লাটফরম এবং গোটা কমিউনিটির আবেগের সাথে সম্পর্কিত একটি সংগঠন। এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাচনকে ঘিরে সব সময় কমিউনিটিতে একটা উৎসবের আবহ সৃষ্টি হয়। এর মান মর্যাদার সাথে গোটা কমিউনিটির মর্যাদা জড়িত। কমিউনিটিও আশা করে এর সাথে যারা যে পর্যায়ে জড়িত থাকুন না কেন, তারা যেন ক্ষমতায় থাকা বা ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াইয়ে লিপ্ত হয়ে শুধু এই সংগঠন নয়, সিলেটবাসীর মর্যাদাকে ধুলিস্যাৎ না করেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এবং এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত, উত্তেজনাময় হতেই পারে। কিন্তু সর্বাবস্থায় ইলেকশন কমিশনকে নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা বজায় রেখে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী সকল প্রার্থীর জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করার দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের। এই লক্ষ্যে তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা সকল প্রার্থী এবং বিশেষভাবে গোটা এনইসি’র দায়িত্ব।
কিন্তু গ্রেটার সিলেট কাউন্সিলের আসন্ন নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে যে অসন্তোষ এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে, সেটা সামনের দিনগুলোতে গোটা কমিউনিটির জন্যই অস্বস্তিকর হয়ে দেখা দিতে পারে বলে অনেকেই আশংকা ব্যক্ত করেছেন।

You might also like