চা শ্রমিকদের সকল দাবী মেনে নিলেন প্রধানমন্ত্রী

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ চা শ্রমিকদের সকল দাবী মেনে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার ৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সিলেটের লাক্কাতুরা গলফ ক্লাব মাঠে সিলেট বিভাগের ২৩টি বাগানের সহ¯্রাধিক চা শ্রমিকের উপস্থিতিতে তিনি তাদের বিভিন্ন দাবীগুলো শুনেন। সর্বশেষ তিনি সকল দাবীর প্রতি একাত্বতা প্রকাশ করে সমুহ দাবি-দাওয়া মেনে নেন।প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন।এ সময় প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন,জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আপনাদের নাগরিকত্ব দিয়েছেন আর আমি আপনাদের ঘর করে দেব। চা বাগান হলো দেশের সৌন্দর্য। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চা শ্রমিকদের সঙ্গে আমাদের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বঙ্গবন্ধু প্রথম চা শ্রমিক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই সময় তিনি চা শ্রমিক ও চা শিল্পকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধু সংবিধানের মাধ্যমে চা শ্রমিকদের ভোটাধিকার ও নাগরিকত্ব নিশ্চিত করেন। আ’লীগ সরকারের আমলে চা উৎপাদন বাড়ানোর জন্য পঞ্চগড়ে চা বাগান তৈরি করা হয়।তিনি বলেন, চা শ্রমিকরা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেক ভূমিকা রেখেছেন। চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের কথা চিন্তা করে তাদের মজুরি বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ যেন কষ্টে না থাকে সে জন্য আমরা অন্য, বস্ত্র, শিক্ষা-চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা নিয়েছি।মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চা শ্রমিকদের কথা গুরুত্বসহকারে শুনেন। শুরুতেই তিনি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের পাত্রখলা চা বাগানের দলই ক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানস্থল থেকে সরাসরি কথা বলেন ২ নারী চা শ্রমিক। তারা হলেন রিতা পানিতা ও সোনমানি রাজ হংসিমান।
রিতা পানিতা তার বক্তব্যে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের খুব ভালোবাসতেন। আমরা বিশ্বাস করি আপনার বাবার মত আপনিও আমাদের ভালোবেসে যাবেন। এ কথার সাথে সাথে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এ দু’জন। ধরাকণ্ঠে চোখের জল ফেলে প্রধানমন্ত্রী এভাবে সরাসরি কথা বলায় তাঁর অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এছাড়াও রিতা পানিতা কমলগঞ্জের বাগানে প্রধানমন্ত্রীকে চায়ের দাওয়াত দেন।
প্রধানমন্ত্রী তাদের বক্তব্য শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আমার তো বাবা-মা কেউ নেই, আপনারাই আমার সব।

২ নারী চা শ্রমিকের বক্তৃতা শেষে স্থানীয় চা শ্রমিকদের গাওয়া রেকর্ডেড দু’টি গান পরিবেশন করে প্রধানমন্ত্রীকে শুনানো হয়।পরে সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগান এলাকার গলফ ক্লাব মাঠ থেকে চা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে মতবিনিময় শুরু করেন। এখানে চা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন রাজু গোয়ালা ও শ্যামলী গোয়ালা। তারা তাদের বক্তব্যে দৈনিক মজুরী ১২০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা করে দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। পাশাপাশি বিভিন্ন দাবী তোলে ধরেন।এ সময় মহিলা শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাস থেকে বাড়িয়ে ৬ মাস, চিকিৎসার জন্য একজন এমবিবিএস ডাক্তার ও একটি এ্যাম্বুলেন্স দেয়াসহ বিভিন্ন দাবী তোলে ধরেন।প্রধানমন্ত্রী তাদের সবগুলো দাবী শুনে সকল দাবী মেনে নেন। এ সময় চা শ্রমিকরা উল্লাস প্রকাশ করে।অনুষ্ঠানস্থলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের এমপি ড. একে আব্দুল মোমেন, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পিপিএম, জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ, জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, নগর আ’লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন, সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবসহ স্থানীয় আ’লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

You might also like