ছাতকে মসজিদের নামের ওকফকৃত জায়গা আত্মসাতের ঘটনায় বেড়িয়ে আসছে থলের বিড়াল

শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী

সুনামগঞ্জ থেকে: সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দক্ষিন খুরমা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মছব্বির মসজিদের নামের ওকফকৃত সেই জায়গা বিক্রি করতে মরিয়া অভিযোগ উঠেছে। এখন মামলার বাদী মায়ের কোল গ্রামের চান্দ আলীর ছেলে মাজন আলীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন। রবিবার (৭ আগষ্ট) ছাতক থানার এসআই আসাদুজ্জামান খাঁন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আব্দুল মছব্বির এর অভিযোগ তার জায়গা মাজন আলী বিক্রি করতে বাধা প্রদান করছেন।

মাজন আলী বলছেন আমার বাড়ীসহ ২.৪০ একর জায়গা নামজারী বাতিলের পর ছাতক উপজেলা ভূমি অফিসের ৩১/২০১৯-২০ ইং রিভিউ মোকদ্দমার আদেশ এর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ভূমি, সুনামগঞ্জ নামজারী রিভিশন মোকদ্দমা নং-২/২০২০ দায়ের করি। ১৯ জুলাই ২০২২ ইং তারিখে বিজন কুমার সিংহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ভূমি, সুনামগঞ্জ মোকদ্দমার আদেশ প্রদান করেন। আদেশ বলা হয় আমাদের ওয়ারিসসুত্রে প্রাপ্ত ভূমির পরিমাণ ৩.৬০ একর গণ্য করে নামজারী রিভিউ মোকদ্দমা ৩১/২০১৯-২০ এর ২৩.০৯.২০১৯ তারিখের আদেশ পূনবিবেচনাপূর্বক নালিশা ১৩৫ নং দাগের ভূমিতে সরেজমিন দখল অনুযায়ী পরিমিত ভূমি মোছা: জয়ধন মালা গং এর নামে বিধিমোতাবেক নামজারী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নামজারী মোকদ্দমা নং- ৭৩৪/১৫-১৬ এবং নামজারী মোকদ্দমা নং-৩১২/১৯-২০ এর মূল নথি ও সংশ্লিষ্ট কাগজ পত্র সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছাতক রিমান্ডে প্রেরন করা হোক। এর পর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছাতক ইসলাম উদ্দিন এর সাথে পরামর্শ করে ফের নামজারী আবেদন করেন মাজন আলী। গত ২৭ জুলাই (বুধবার) উক্ত ভূমি সরজমিন পরিদর্শন করেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (বুড়াইগাঁও) কাজী রফিক উজ্জামান। তার পর প্রয়োজনীয় তথ্য নেই উল্লেখ করে পুনরায় নামজারী আবেদন বাতিল করা হয়। মাজন আলীর অভিযোগ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ভূমি, সুনামগঞ্জ কতৃক প্রাপ্ত আদেশ অমান্য করা হয়েছে। তিনি বলেন মসজিদের নামে ওয়াকফকৃত ২.৪০ একর জায়গা। তবে সেখানে আব্দুল মছব্বির ৩.৪০ একর জায়গা দখল করে রেখেছেন। অর্থাৎ আরো ১.২০ একর জায়গা অতিরিক্তি জোর পূর্বক ও নানান কৌশলে আত্মসাতের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। সরকারী সার্ভেয়ার কৃতক পরিমিত ভূমি দেওয়া হবে এমন খবর পেয়ে আব্দুল মছব্বির জায়গা বিক্রি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাই তিনি আমার বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এ দিকে গত ১৬ আগষ্ট ২০২২ ইং তারিখে ছাতক সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে দলিল নং ২৭০৩/২২ ইং মুলে উপজেলার দক্ষিন খুরমা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের তৈমুছ আলীর ছেলে আব্দুল কদ্দুছ এর নিকট ৩০ শতাংশ ও একই দিনে পূথক ভাবে একই গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে ওয়ারদুছ আলীর নিকট ২৭০২/২২ ইং দলিল মুল ৩০ শতাংশ জায়গা বিক্রি করেন আব্দুল মছব্বির। যা নালিশা দাগ নং-১৩৫, এসএ- ৫৮, নামজারী খতিয়ান নং- ৩৫৫। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ উক্ত দুটি দলিলে চৌহদ্দির বিবরণে বুঝানো হয়েছে নালিশা ১৩৫ দাগে তিনি জমি বিক্রি করেছেন। কিন্ত ৫৮ নং খতিয়ান এর জায়গা এখানে নেই। তিনি এটা আরেক প্রতারনা করছেন। এর জন্যই সরকারী সার্ভেয়ার এর মাধ্যমে জমির পরিমাপে নারাজ আব্দুল মছব্বির।
অপরদিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ভূমি, সুনামগঞ্জ নামজারী রিভিশন মোকদ্দমা নং-২/২০২০ এর আদেশ স্মারক নং-৬৮৫, গত ৬ জুন ২০২২ ইং তারিখে সহকারী কমিশনা (ভূমি) ছাতক বরাবর প্রেরণ করা হয়। দুইমাস পেরিয়ে গেলেও আদেশ পৌছায়নি অফিসে। ভূয়া মোতাওয়াল্লী সেজে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মসজিদের জায়গা আত্মসাত করার ঘটনায় নামজারী মোকদ্দমা নং ৪৪৮/১৩-১৪ রিভিউক্রমে বাতিলের আবেদন করেছেন মাজন আলী। গত ১১ আগষ্ট ২০২২ ইং তারিখে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছাতক বরাবর তিনি এই আবেদন করেন। এতে উল্লেখ করা হয় আব্দুল মছব্বির কোন সময়ই মায়েরকুল জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী ছিলেননা। পাশাপাশি ৩৩০ নং খতিয়ানে আব্দুল মছব্বির এর নাম কর্তন করে কেবল মাত্র মায়েকুল জামে মসজিদ নামে বহাল রাখার প্রার্থনা করা হয়।

মায়ের কোল গ্রামের মৃত. মছদ্দর আলীর ছেলে দক্ষিন খুরমা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির এর বিরুদ্ধে মায়েরকুল জামে মসজিদের নামের ওকফকৃত জায়গা ভূয়া মোতাওয়াল্লী সেজে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আতœসাত করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গত ২১ জুলাই দূর্নীতি দমন কমিশন, বিভাগীয় কার্যালয়, সিলেট, বিভাগীয় পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মাজন আলী।

জানা যায়, উপজেলার দক্ষিন খুরমা ইউনিয়নের মায়েরকুল জামে মসজিদের নামে কীর্তিশাসন মৌজাস্থিত, ৩৭৯ জেএল, ৫২ ও ৭৫ খতিয়ান ১৩৫ নং দাগে, ২.৪০ শতাংশ জমি গত ২৫ জুন ১৯৯০ ইং তারিখে ৫১২৮ নং দলিল মুলে ওকফ করেন ইউনুছ আলী, জয়ধন মালা বিবি, কাঞ্চন মালা বিবি ও মায়ার মা বিবি। দলিল গ্রহীতা মসজিদ কমিটির পক্ষে তৎসময়ের মোতাওয়ালী মো. ইছকন্দর আলী। গত ২৪ জুন ২০১২ ইং তারিখে সাব-রেজিষ্ট্রারের কার্যালয়, ছাতক অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকতার যোগসাজেসে আব্দুল মছব্বির মসজিদ কমিটির পক্ষে ভূয়া মোতাওয়াল্লী সেজে তার স্ত্রী মোছা: বানেছা বেগম ও শালীকা মোছা: সুরেছা বেগমের নামে ২.৪০ শতাংশ জায়গা দলিল নং-২৫৪৪ মুলে হস্তান্তর করেন। এর আগে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ১১৩৩/২০১০-১১ ইং নং মোকদ্দমার আদেশ বলে মসজিদ কমিটির পক্ষে আব্দুল মছব্বির এর নামে ৩৩০ নং খতিয়ান রেকর্ড ভুক্ত করা হয়। এছাড়াও একই দাগে মায়ের কোল গ্রামের চান্দ আলীর ছেলে মাজন আলীর বাড়ীসহ ২.৪০ শতাংশ জায়গা নামজারী করা হয়। ওই নামজারীতে আপত্তি করে নামজারী বাতিল করান ভূমি খেকো আব্দুল মছবিবর।

আব্দুল মছব্বির ভূয়া মোতাওয়াল্লী সেজে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মায়েরকুল জামে মসজিদের নামের ওকফকৃত জায়গা আতœসাত করার অভিযোগে গত ১৪ এপ্রিল বিভিন্ন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে এ প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন ভূমি খেকো আব্দুল মছব্বির। এর পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ছাতক থানার এসআই মহিন উদ্দিন। এ বিষয়ে মায়েরকুল গ্রামের মাজন আলী বলেন, অভিযোগের পর অভিযোগ, তারিখের পর তারিখ এ যেনো অভিযোগ তারিখ খেলা। আর কত কাঁদলে ন্যায় বিচার পাবো। তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।এ বিষয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির সব সময় তার উপর আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তিনি বলে আসছেন আমার বোন প্রবাস থেকে টাকা দিয়েছে আমি জায়গা ক্রয় করেছি।এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছাতক ইসলাম উদ্দিন, মাজন আলী কতৃক নামজারী রিভিউক্রমে বাতিলের আবেদন প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নামজারী রিভিশন মোকদ্দমা আদেশ এখনো পৌছায়নি।এ বিষয়ে ছাতক থানার ওসি মাহবুবুর রহমান, মাজন আলীর বিরুদ্ধে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির কতৃক লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

You might also like