ছাতকে সম্পদের লোভে বৃদ্ধা মাকে কৌশলগতভাবে হত্যার অভিযোগ তুলেছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী মেয়ে

শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী

সুনামগঞ্জ থেকেঃ সুনামগঞ্জের ছাতকে সম্পত্তির লোভে বৃদ্ধ মাকে বিনা চিকিৎসায় পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ উঠেছে।এ ঘটনায় গত ২৭ নভেম্বর ডিআইজি, সিলেট রেঞ্জ বরাবর ইমেইলে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগটি দায়ের করেন উপজেলার ছৈলা-আফজালাবাদ ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের মৃত. আলকাছ মিয়ার মেয়ে, যুক্তরাজ্য প্রবাসী মোছাম্মদ হাওয়ারুন নেছা। এতে গ্রামের আরজ মিয়ার ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসি, মো. ফটিক মিয়া, মো. মুহিবুর রহমান সোহান, মোছাম্মাদ হামিদা বেগমকে অভিযুক্ত করা হয়।অভিযোগ সুত্রে জনা যায়, মোছা: হাওয়ারুন নেছা দীর্ঘদিন যাবত যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছেন। যার ফলে মোছা: হাওয়ারুন নেছার ভাই মো. ফটিক মিয়ার অধীনে মো. মুহিবুর রহমান সোহান ও মোছাম্মাদ হামিদা বেগম সৎ ভাইয়ের সন্তানদের দিয়ে ৫৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা মা মোছাঃ জমিরুন নেছার দেখাশুনা করেন। সেই সুবাদে মোছা: হাওয়ারুন নেছা তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে সার্বিক সহযোগিতাও করে থাকেন। যুক্তরাজ্য প্রবাসি, মো. ফটিক মিয়ার কু-পরামর্শে অন্যান্য অভিযুক্তরা মিলে মোছাম্মদ হাওয়ারুন নেছার বৃদ্ধা মা মোছা: জমিরুন নেছার বিভিন্ন রোগের কথা জানায়। যার জন্য মোছাম্মদ হাওয়ারুন নেছা তাদেরকে প্রায় সময় টাকা পয়সা পাঠিয়ে থাকেন। সর্বশেষ অভিযুক্তরা মোছা: হাওয়ারুন নেছার মায়ের সম্পত্তি ভোগ দখলের লোভে, ভাই ফটিক মিয়ার পরামর্শে বৃদ্ধা মাকে নিয়মিত উন্নত চিকিৎসা না করিয়ে বিভিন্ন সময় তাদের মনগড়া ডাক্তার দেখিয়ে মোছা: হাওয়ারুন নেছার নিকট থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ১ অক্টোবর ২০২২ ইং তারিখে মো. মুহিবুর রহমান সোহান, মোছাম্মাদ হামিদা বেগম জানান বৃদ্ধা মা মোছা: জমিরুন নেছা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। মোছা: হাওয়ারুন নেছা তার মাকে কান্সার হাসপাতালে ভর্তি করে ডাক্তারের পরামর্শক্রমে প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করার জন্য বলেন। কিন্ত অভিযুক্তরা মোছা: হাওয়ারুন নেছাকে জানায় সিলেট শহরে ভর্তি ছাড়া ভাল ডাক্তার দেখালে চলবে। এর কিছুদিন পর তারা জানায় আক্রান্তের মাত্রা কম আছে। এরপর গত ৬ নভেম্বর সন্ধা ৭ টার দিকে অভিযুক্তরা মোছাম্মদ হাওয়ারুন নেছাকে আবারো জানান তার মায়ের অসুস্থ্যতার কথা। মোছাম্মদ হাওয়ারুন নেছা তাদেরকে আবারো পরামর্শ দেন ঢাকা শহরে ভাল ক্লিনিকে ভর্তি করার জন্য। কিন্তু তারা সিলেট নর্থইষ্ট মেডিকেলে নিয়ে যায় এবং ঐদিন রাত ১২ টায় মোছাম্মদ হাওয়ারুন নেছার মা মৃত্যু বরন করন। মোছাম্মদ হাওয়ারুন নেছার ভাই অভিযুক্ত মো. ফটিক মিয়া ইচ্ছাগত ভাবে মোছাম্মদ হাওয়ারুন নেছাকে অসুস্থ্যতার বান দেখিয়ে তার মায়ের সাথে কথা বলতে দিতেন না। অন্যান্য অভিযুক্তরা নজরদারী রাখতেন যাতে মোছাম্মদ হাওয়ারুন নেছা তার মায়ের সাথে কথা বলতে না পারেন। মোছাম্মদ হাওয়ারুন নেছার ভাই ও সৎ ভাইয়ের সন্তানেরা মিলে সম্পত্তির লোভে তার মাকে বিনা চিকিৎসায় পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগ আরো উল্লেখ করা হয়, হটাৎ করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার খবর দেওয়া, মাত্র মাস দুইমাসে ক্যান্সার জনিত কারনে মৃত্যু হওয়া, কথামত চিকিৎসা না করানো ও ক্যান্সারের চিকিৎসা বা ডাক্তার ছাড়া অন্য হসপিটালে ভর্তি করিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা রহস্য জনক বটে। অভিযুক্তদের আচরন, টাকা পয়সা নেওয়া, মো. ফটিক মিয়ার অস্বাভাবিক আচরনসহ বৃদ্ধা মাকে ভূয়া চিকিৎসার মাধ্যমে মৃত্যু নিশ্চিত করার কারণ হিসেবে সম্পত্তি ভোগ দখলের পায়তারা অনুভব করছেন মোছাম্মদ হাওয়ারুন নেছা। মোছাম্মদ হাওয়ারুন নেছা তার স্বামীর অধিনস্থ আর তার মা ছাড়া অন্য কেহ বাংলাদেশে বসবাস করেন না। সেক্ষেত্রে মোছাম্মদ হাওয়ারুন নেছা মায়ের মৃত্যু হলে খুব সহজেই অভিযুক্তরা মোছাম্মদ হাওয়ারুন নেছা মায়ের সম্পত্তি ভোগ দখল করতে পারবে। যার জন্য মোছাম্মদ হাওয়ারুন নেছার মাকে কৌশলগত ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লখ করা হয়।এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগটি ফাইলে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী মোছাম্মদ হাওয়ারুন নেছা অভিযোগ দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে করে বলেন, এমন মর্মান্তিক ঘটনায় তদন্ত স্বাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।এ বিষয়ে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ (পিপিএম) এর সাথে তার কার্যালয়ে গিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এমন কোন অভিযোগ ঠিক এই মুহুর্তে মনে নেই। তবে যে কোন অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এসপি’র কাছে পাঠানো হয়।

You might also like