ছাতকে সেই লম্পট প্রেমিক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষন মামলা দায়ের

শামীমআহমদতালুকদার
সত্যবাণী

সুনামগঞ্জথেকেঃ সুনামগঞ্জের ছাতকে স্ত্রীর স্বীকৃতি চেয়ে প্রেমিকের বাড়িতে গ্রাম পুলিশের পাহারায় এক সপ্তাহ ধরে অনশনে থাকার পর অবশেষে প্রেমিক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে ধর্ষন মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ রোববার (১৩ সেপ্টেম্ভর) ভিকটিম তরুণী বাদী হয়ে ছাতক থানায় মামলা নং-১৫ দায়ের করা হয়। এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে ইউপি সদস্যের বাড়ী থেকে ভিকটিম তরুণীকে ছাতক থানায় নিয়ে আসা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) তাপস শীল,ছাতক থানার এএসআই হাবিবুর রহমান (পিপিএম) ও মহিলা পুলিশ সদস্যরা।

জানা যায়, প্রেমিক মকছুদুল হাসান আতর উপজেলার ছাতক সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য ও বাউসা গ্রামের বাসিন্দা।আর প্রেমিকার বাড়ি একই ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামে। প্রায় ৭ বছর আগে তাদের পরিচয় হয়।ধীরে ধীরে এই সম্পর্ক প্রেমে পরিনত হয়। ভিকটিম তরুণীর অভিযোগ সম্পর্কের এক পর্যায়ে ছাতক পৌর শহরের একটি রেষ্টুরেন্টে খাবার খেতে যান দু’জন।খাবারের সঙ্গে নেশা মিশিয়ে ভিকটিমকে অজ্ঞান করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ধর্ষন করে প্রেমিক আতর আলী। এ ঘটনার পর আতর আলী ভিকটিমকে বিয়ে করবেন বলে আশ্বস্থ করা হয়। পরে একাধিকবার দু’জনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। সম্প্রতি ওই তরুণী বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে এড়িয়ে চলতে থাকে প্রেমিক মকছুদুল হাসান আতর।

ভিকটিম তরুনীর অভিযোগ শনিবার দিবাগত রাত ১২ টার দিকে বিয়ে করবেন সম্মতি দিয়ে ভিকটিমকে বাড়িতে নিয়ে যান প্রেমিক মকছুদুল হাসান আতর। ভিকটিমকে ঘরের দরজার সামনে রেখে মকছুদুল হাসান আতর চলে যান। তখন থেকেই ভিকটিম অনশন শুরু করেন। সোমবার ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন ছাতক উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা মো. গোলাম কবির, ছাতক থানার ওসি মো. মোস্তফা কামাল ও ছাতক সদন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম। এর পর থেকে ভিকটিম তরুণীর পাহারায় ৪ জন গ্রাম পুলিশ নিয়োজিত করা হয়।

ভিকটিম তরুণীর পরিবার সুত্রে জানা যায়, স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে ছাতক সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিষয়টি সমাধানের জন্য পরিষদের ৫ সদস্যে একটি বোর্ড গঠন করে দেন। ওই বোর্ড কতৃক সমাধানের চেষ্টা করা হলে সাড়া দেননি প্রেমিক ইউপি সদস্য আতর আলী। একপর্যায়ে থানা পুলিশের নিকট আইনি সহায়তা চান ভিকটিমের পরিবার। এদিকে ভিকটিম তরুণী অনশন শুরু করার পর আবারো ছাতক সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী াানুয়ার হোসেন আনু পৃথক ভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্ত এতেও সাড়া দেননি প্রেমিক মকছুদুল হাসান আতর।এ বিষয়ে ভিকটিম তরুণী জানান, গত শুক্রবার ৩ টার দিকে পাহারায় থাকা বাধন নামে গ্রাম পুলিশ সদস্য চলে যান। তখন আমি একা ছিলাম। এ সময় মির্জাপুর গ্রামের আলা উদ্দিন নামে এক যুবক এসে আমাকে অকাট্য ভাষায় গালি গালাজ করে যান। অনশন শুরু করার পর মকছুদুল হাসান আতরের চাচাতো ভাই আবদাল আমার উপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে। মকছুদুল হাসান আতর ছাড়া অন্য কাউকে আমি বিয়ে করবোনা বলে জানান তিনি।

ভিকটিম তরুণীর মা কুহিনুর বেগম বলেন, তিনি কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলেন, আমি শহীদ মুক্তিযোদ্বার মেয়ে। আমার বাবা দেশ স্বাধীন করার জন্য জীবন দিয়েছে। মকছুদুল হাসান আতর আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। কিন্ত একটি বিশেষ মহল আমার মেয়েকে নিয়ে ফেইসবুকে ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে আপপ্রচার করছে। তিনি এসব অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। মেয়েটি যেনো ন্যায় বিচার ও স্ত্রীর স্বীকৃতি পায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ছাতক সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খাঁন অভিযোগ করে বলেন, প্রেমিক মকছুদুল হাসান আতর একটা লম্পট। কিছু দিন আগেও বাউসা গ্রামের রইছ আলী মেয়ের সঙ্গে অপকর্মের ঘটনা ঘটায়। ৫৫ বছর বয়স পার হলেও এখনো বিয়ে করেনি। তিনি আরো বলেন তার ভাই আফরোজ ৩-৪ মাস আগে আরেকটি মেয়েকে নিয়ে এসে এক সপ্তাহ পর বিদায় করে দেয়। এই পরিবার সমাজটাকে ধবংস করে দিচ্ছে। আমি চেয়ারম্যান থাকাকালিন সময়ে এই লম্পট মকছুদুল হাসান আতর ভিকটিম মেয়েটিকে চাকরি দেওয়ার জন্য আমার কাছে নিয়ে গিয়েছিল। এখন সে কিভাবে বলতে পারে মেয়েটিকে চেনেনা। এর বিরুদ্ধে তদন্ত স্বাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। ছাতক সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সালিক মিয়া বলেন, শুনেছি একটি মেয়ে কয়েকদিন ধরে ইউপি সদস্যের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে অনশন করছে। বিষয়টি তদন্ত স্বাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্তা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট দাবি জানান তিনি।

অভিযুক্ত প্রেমিক মকছুদুল হাসান আতরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে কথা বলেবেন বলে মুঠোফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেনে।ছাতক সদও ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং, ৯ নং ও ৫ নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ আছমা বেগম, রহিমা বেগম ও মামুন মিয়া বলেন, আমরা ঘটনার সময় ডিউটিতে ছিলাম না। ছাতক সদর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ড সদস্য মুহিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এখন শুনলাম মেয়েটি আমার ওয়ার্ডের। যদি ঘটনাটি সত্যি হয় আমি এর বিচার চাই।৪ নং ওয়ার্ড সদস্য মো. ময়না মিয়া বলেন, এ বিষটি সমাধানে আমরা ব্যর্থ বলে দিয়েছি। ৭ নং ওয়ার্ড সদস্য ইব্রাহিম আলী বলেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য পরিষদের চেয়ারম্যান ৫ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্ত সমাধান করা সম্ভব হয়নি। আজকে খবর পেয়েছি মেয়েটি ইউপি সদস্য মকছুদুল হাসান আতরের বাড়িতে অনশন করছে।ছাতক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তাপস শীল বলেন, ভিকটিমকে ছাতক থানায় নিয়ে আসা হয়। এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মুহিন উদ্দিন বলেন, ভিকটিমকে মেডিকেল পরিক্ষার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে।

You might also like