ছাতক সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল সম্পাদন: তোলপাড়

শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী

সুনামগঞ্জ থেকে: সুনামগঞ্জের ছাতক সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে দুই ব্যক্তিকে একই ব্যক্তি বর্ণনায় ভূয়া দলিল, উত্তরাধিকারী সদন ও নামজারী পর্চা সৃজন করে দলিল সম্পাদনের সময় ভুক্তভোগী তাৎক্ষনিক খবর প্রাপ্ত হয়ে রেজিষ্ট্রার কার্য বন্ধ করায় বাড়ীতে ফিরে ভুক্তভোগী পরিবারকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে মো. রফিকুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে।এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার উপজেলার খুরমা উত্তর ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের মৃত.শফিক উল্লাহর ছেলে সানোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ছাতক থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। এতে একই গ্রামের মৃত. নজির আলীর ছেলে মো. রফিকুল ইসলামকে অভিযুক্ত করা হয়। গত সোমবার (২৯ আগষ্ট) ছাতক সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, কাঞ্চনপুর গ্রামের আবিদ উল্লাহর ছেলে ওয়াছিব আলীর চার পুত্র সন্তান যথাক্রমে ইদ্রিস আলী, আমির আলী, আজমান আলী ও নজির আলীকে উত্তরাধিকারী রাখিয়া মৃত্যু বরণ করেন এবং তাদের মধ্যে আজমান আলী নি:সন্তান অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। সানোয়ার হোসেন এর দাদা আমির আলী তদ্বীয় দুই ভাই ইদ্রিস আলী ও নজির আলী ওয়াছিব আলীর ত্যাজ্য বিত্তে সানোয়ার হোসেন এর দাদা আমির আলী সহ অপর দুই ভ্রাতা যাবতীয় সম্পত্তির মালিক হন। তারা নিজ নিজ উত্তরাধিকারী রাখিয়া মৃত্যু বরণ করিলে সানোয়ার হোসেন এর দাদা আমির আলীর উত্তরাধিকারী তার যাবতীয় সম্পত্তি সানোয়ার হোসেন এর পিতা মালিক ও ভোগদখকার থাকা অবস্থায় সানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য ছেলে মেয়ে ও স্ত্রী উত্তরাধিকারী রেখে মৃত্যু বরণ করেন।

ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, সানোয়ার হোসেন এর দাদা আমির আলীর আপন ভাই নজির আলীর ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম প্রতারনা পূর্বক সানোয়ার হোসেনের পূর্ব পুরুষের সম্পত্তি অন্যায় ভাবে ভোগ দখল করার অভিপ্রায়ে মো. রফিকুল ইসলাম এর পিতা নজির আলী ও সানোয়ার হোসেনের দাদা আমির আলীকে একই ব্যক্তি বর্ণনায় ‘আমির আলী ওরফে নজির আলী’ নাম লিখিয়ে উপজেলার মৈশা-পাহা মৌজার কতেক ভূমি সংক্রান্ত ১০৪ নং খতিয়ানের পর্চা হাসিল করে সানোয়ার হোসেনের দাদা আমির আলীর সম্পত্তি কুক্ষিগত করার অপপ্রয়াস করছেন। প্রকৃত পক্ষে আমির আলী এবং নজির আালী পৃথক দুই ভাই আমির আলীর দাদা এবং নজির আলী সানোয়ার হোসেনের দাদা আমির আলির ভাই অর্থাৎ অভিযুক্ত মো. রফিকুল ইসলাম এর পিতা।

সানোয়ার হোসেন এর অভিযোগ, ঘটনার দিন গত সোমবার (২৯ আগষ্ট) মো. রফিকুল ইসলাম ছাতক সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে উপস্থিত হয়ে সানোয়ার হোসেন এর দাদা আমির আলী ও অভিযুক্ত মো. রফিকুল ইসলামের পিতা নজির আলী একই লোক বর্ণনায় তার পিতা ‘আমির আলী ওরফে নজির আলী’ লিখিয়ে ও তদ্বীয় মাতা খয়রুন নেছাকে বিক্রেতা সাজিয়ে একটি দলিল সম্পাদন করেন। রেজিষ্ট্রারের আগেই বিষয়টি অবহিত হয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে রেজিষ্ট্রার অফিসে গিয়ে রেজিষ্ট্রার কার্যক্রম বন্ধ করেন ভুক্তভোগী সানোয়ার হোসেন। দলিল সম্পাদনে বাধা দেওয়ায় ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বাড়ীতে ফিরে অভিযুক্ত মো. রফিকুল ইসলাম দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে মারধর করতে এগিয়ে আসেন। এ সময় মো. রফিকুল ইসলাম দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।এ বিষয়ে অভিযুক্ত মো. রফিকুল ইসলাম সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে রেজিষ্ট্রার কার্য বন্ধ করার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, দুই বছর আগে এই জায়গা আমি নামজারী করেছি এবং আমার দখলে ছিল। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য উত্তরাধিকারী সনদ দিয়েছেন। এখন এক বছর ধরে সানোয়ার হোসেন এই জায়গার দখল নিয়েছেন।

এ বিষয়ে সানোয়ার হোসেন লিখিত অভিযোগ দায়েরের সত্যতা স্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে ছাতক দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব গিয়াস মিয়া তালুকদার এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন দুই নামে দুই ব্যক্তিকে একই ব্যক্তি বর্ণনায় দলিল সম্পাদনের পর রেজিষ্ট্রার কার্য বন্ধ করা হয়েছে একটি বিষয় আমাকে মৌখিক ভাবে জানানো হয়েছে।এ বিষয়ে খুরমা উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। মো. রফিকুল ইসলাম নামে কাউকে উত্তরাধিকারী সনদ দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে ছাতক সাব-রেজিষ্ট্রার আয়েশা সিদ্দিকা এর সরকারী মুঠোফোন নাম্বার না থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা রেজিষ্ট্রার মো. মফিজুল ইসলাম এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন বিষয়টি আমার জানা নেই। ছাতক সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে যোগাযোগের জন্য সরকারী কোন মুঠোফোন নাম্বার না থাকার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন।এ বিষয়ে ছাতক থানার এস আই আসাদ অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তদন্ত চলছে। ছাতক থানার ওসি মাহবুবুর রহমান ব্যস্ত থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

 

You might also like