জগন্নাথপুরে ২৫ ভাগ জমির ধান কাটা শেষঃ হাওরে চলছে ধান কাটার ধুম
সিলেট অফিস
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জের কৃষি অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলার হাওরগুলোতে বোরো মৌসুমে ধান কাটার ধুম পড়েছে। ইতিমধ্যেই উপজেলার প্রায় সকল হাওরে বেশীরভাগ জমির ধান পেঁকে গেছে। বাতাসে দুলছে সোনালী ফসল। আবহাওয়া অনকুলে থাকায় কৃষকরা মনের আনন্দে ধান কেটে মাড়াই করে গোলায় তুলছেন। কৃষাণীদের অবসর নেই তারাও ধান ঝেড়ে দিচ্ছেন।
জগন্নাথপুর থেকে সংবাদদাতা জানান, ১৭ এপ্রিল বুধবার থেকে উপজেলার বৃহৎ হাওর নলুয়া, মই, পিংলার হাওরসহ উপজেলার ১৫টি হাওরে পুরোদমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে। হাওরের চারিদিকে এখন ধান কাটার ধুম। পাকা ধানের মৌ-মৌ ঘ্রাণে মুখরিত নলুয়া, মই, পিংলাসহ অন্যান্য হাওর। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শ্রমিকরা নগদ অর্থ অথবা ধানের বিনিময়ে দলবদ্ধভাবে গৃহস্থের জমির ধান কেটে দিচ্ছেন। তবে প্রয়োজনের তুলনায় ধান কাটার শ্রমিক খুবই কম বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
বুধবার সরেজমিন নলুয়ার হাওর পরিদর্শনে গেলে অনেকের সাথে আলাপ হয়। অনেক কৃষক জানিয়েছেন তারা ধান কাটার শ্রমিক পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে নিজেরা ধান কাটছেন। জগন্নাথপুর সদর গ্রামের কৃষক শামীম আহমদ জানান, নলুয়ার হাওরে প্রায় ১১ কেদার জমিতে ধান চাষ করেছি। ২/ ৩দিন ধরে জমির ধান পেঁকে গেছে। কিন্তু ধান কাটার শ্রমিক না পেয়ে আমরা ভাইয়েরা ধান কাটছি । এ ধরণের বক্তব্য অনেক কৃষকের।
কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের সংখ্যা কম থাকায় আশানুরূপ সুফল পাচ্ছেন না স্হানীয় কৃষকরা। হাতে গোনা ৭৫টি মেশিন দেয়া হয়েছে ভাগ্যবান কিছু কৃষককে। উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার কৃষক রয়েছেন।
এবার হাওরগুলোতে হাইব্রিড জাতের হিরা-২, বিনা-২৫, ময়না টিয়া, লাল তীর, সুরভী, তীর ৪, এসিআই -২, বঙ্গবন্ধু ১০০, উফসী ৮৮, ৮৯, ৯২, ৯৬, ও ২৮, ২৯ জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। এ জাতের ধানের ফলন খুব ভাল হয়েছে। ফলে কৃষকদের মধ্যে স্বস্তির ভাব লক্ষ্য করা গেছে।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধানে চিটা হওয়ায় যারা এ ধান আবাদ করেছেন তাদের যেন মাঁথায় হাত আর চোখে-মুখে দূশ্চিন্তার ভাঁজ।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার পুরো জগন্নাথপুর উপজেলায় ২০ হাজার ৩’শ ৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ধান কাটার কাজ শুরু হয়। সবগুলো হাওরের ধান পেঁকে যাওয়ায় ২/ ৩দিন ধরে সবগুলো হাওরে ধান কাটার ধুম পড়েছে।
জগন্নাথপুর উপজেলার খাদ্য ভান্ডার খ্যাত নলুয়ার হাওরে বুধবার সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, পুরো হাওরজুড়ে সোনালী পাকা ধান ও আধা পাকা ধান দুলছে। সবগুলো জমিতে কাজ করছেন শ্রমিক ও চাষীরা। কৃষকরা জানান, এবার এখন পর্যন্ত হাওরে পানি না আসায় ও কোনো রকম প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হওয়ায় চাষীরা স্বস্তিতে ধান কাটছেন। কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে প্রতি কেদার জমির ধান কাটায় ২ হাজার টাকা করে নেয়া হচ্ছে।
হাওরে ধান ঝাড়া ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত কৃষাণী শায়লা আক্তার জানান, ৯ কেদার জমি (৩০ শতকে ১ কেদার) চাষাবাদ করেন স্বামী আনর আলী। এবার ভালো ফলন হওয়ায় পরিবারের সবাই খুশি। আশা করছেন কিছুদিনের মধ্যে পুরো জমির ধান কাটার কাজ শেষ হয়ে যাবে।
নলুয়া হাওরের রসুলপুরের বাসিন্দা কৃষক সাজন আলী বলেন, ১০ কেদার জমিতে নিজ খরচে বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধান চাষ করেছি কিন্তু সবগুলো ধানে চিটা হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাউসার আহমেদ জানান, এ পর্যন্ত জগন্নাথপুর উপজেলায় ২৫ ভাগ জমির ধান কাটা হয়েছে। এরমধ্যে হাইব্রিড জাতের ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধানে কিছুটা চিটা হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তা বলেন,আমরা অন্যান্য জেলা থেকে ধান কাটার শ্রমিক আনার চেষ্টা করছি।