জনসনের উপদেষ্টা ডমিনিক কামিংস সঙ্কট: পদত্যাগ করলেন ডগলাস রস
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডনঃ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রধান উপদেস্টা ডমিনিক কিউমিংসের লকডাউন আইন লঙ্ঘন ইস্যুকে কেন্দ্র করে এবার পদত্যাগ করেছেন কেবিনেটের জুনিয়র মিনস্টার জগলাস রোজ। তিনি কেবিনেটে স্কটল্যান্ড অফিস মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।
মঙ্গলবার সকালে পদত্যাগ করে ডগলাস বলেছেন, দেশের বেশির ভাগ মানুষ লকডাউন আইন লঙ্ঘনের দায়ে ডমিনিক কিউমিংসের পদত্যাগের পক্ষে। দেশের ম্যাজোরিটি মানুষের পক্ষাবলম্বন করেই তিনি কেবিনেট থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ডমিনিকের পদত্যাগ দাবী করেছেন দলের অন্তত ২০ জন এমপি।লকডাউন আইন অমান্য করে প্রধানমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা ডমিনিক কিউমিংস স্ত্রী এবং চার বছরের ছেলেকে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে লন্ডন থেকে ২৬০ মাইল দূরে ডারহামে যাওয়া-আসা করেছেন। গত ৩১ শে মার্চ থেকে ৫ এপ্রিলের ভেতরে ডারহামে তার বাবা মায়ের কাছে যান তিনি। তার স্ত্রী তখন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। নিজেও করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন এই আশঙ্কায় ছেলেকে বৃদ্ধ বাবা মা’র তত্ত্বাবধানে রেখে আসতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওই সময় করোনা সংক্রমন ঠেকাতে কঠোর লকডাউন ছিলে ব্রিটেনে। বিশেষ করে অসুস্থ এবং বৃদ্ধদের পরিদর্শনের ক্ষেত্রে বেশ কঠোরতা ছিল। টেন ডাউনিং স্ট্রীটের প্রেস ব্রিফিংয়ে বারবার লকডাউন আইন মানার জন্য দেশবাসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এবং হেলথ সেক্রেটারী। আর ডমিনিক কিউমিংসের ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর বরং তাকেই সমর্থন করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, হেলথ সেক্রেটারী, ফরেন সেক্রেটারী, চ্যান্সেলারসহ কেবিনেটের অনেক সিনিয়র সদস্য।
করোনায় ব্রিটেনে হাসপাতাল এবং কেয়ারহোমে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজারের কাছাকাছি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিজের স্বজনদের মৃত্যুর সময় সংক্রমনের ভয়ে কাউকে কারো কাছে যেতে দেওয়া হয়নি, দেখতে দেওয়া হয়নি। অত্যন্ত নিসংঙ্গভাবে তাদের দাফন করা হয়েছে। ১৩ বছরের ছেলে করোনায় মৃত্যুর সময় হাসপাতালের বেডে কাউকে কাছে পায়নি। কবরস্থানে গিয়েও তাকে শেষ বিদায় জানাতে পারেননি তার স্বজনরা। এসবই হয়েছে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারী লকডাউন নির্দেশনা অনুযায়ী। সরকারী লকডাউন নীতি অমান্য করায় অন্তত ১৪ হাজার জরিমানাও আরোপ করেছে পুলিশ। এরা সবাই সমাজের সাধারণ মানুষ। এতো কিছুর পর যখন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রধান উপদেষ্টা ডমিনিক কিউমিংস লকডাউন আইন ভাঙলেন তখন প্রধানমন্ত্রীসহ কেবিনেটের সবাই বলতে থাকেন, বিশেষ কারণ ছিল এর পেছনে সুতরাং ডমিনিক লকডাউন অমান্য করেননি এবং তার পদত্যাগের প্রয়োজন নেই। দেশের বিরোধী রাজনৈতিক শিবির, সাধারন মানুষ এবং সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ থেকে ডমিনিকের পদত্যাগের পক্ষে বা তাকে বরখাস্ত করার পক্ষে জোড়াল দাবী উঠলেও তা উপেক্ষা করে যাচ্ছেন বরিস জনসন।
সর্বশেষ সোমবার টেন ডাউনিংস্ট্রিটের গার্ডেনে বসে বেশ ঠান্ডা মাথায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে যান ডমিনিক কিউমিংস। এই প্রেস ব্রিফিংয়েও তিনি বারবার দাবী করেন, তিনি যথাযথ কারণেই লকডাউনের মধ্যে বের হয়েছিলেন এবং এটা বিধি সম্মত ছিল। এতে পদত্যাগের কিছু আছে বলেও তিনি দেখছেন না বলে উল্লেখ করেছেন, সব কিছু এখন প্রধানমন্ত্রীর হাতে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এখন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কি করেন সেটা দেখার জন্য তাকিয়ে আছে ব্রিটিশ জনগন। যদিও ডমিনিকের প্রতি বরিসের সমর্থন এখনো বহাল রয়েছে।দেশের সাধারণ জনগণের জন্য এক আইন এবং প্রধান উপদেস্টা ডমিনিকের জন্যে আরেক আইন কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সংসদে বিরোধী দলগুলোর শীর্ষ নেতারা মঙ্গলবার বৈঠকে বসতে পারেন।লকডাউন নিয়ে সরকারের দ্বিমুখী নীতির প্রতিবাদে কনজারভেটিভ দলীয় অন্তত ২০ জন এমপিও একজোট হয়েছেন। তারা ডমিনিকের পদত্যাগ দাবী করেছেন।এই ইস্যুতে কেবিনেটেও অশান্তি শুরু হয়েছে। এরিমধ্যে দেশের জনগনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে জুনিয়র মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ডগলাস রোজ। তিনি স্কটল্যান্ড মিনিস্টারের পদ ত্যাগ করেন।সূত্র: ব্রিটবাংলা