জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক শর্তসাপেক্ষে ধর্মঘট স্থগিত করলেন সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ শর্তসাপেক্ষে ২২ জানুয়ারি থেকে আহূত ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা। ১৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকেলে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান ও ৩টি তেল কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফলপ্রসু বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেন তারা।বিকেল ৪টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস, ডিস্ট্রিবিউটরস, এজেন্টস এ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হক। তিনি বলেন, সিলেটে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দীর্ঘদিনের। সংকট সমাধানে বার বার আমরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি। কিন্তু প্রতিবারই আমাদের আশ্বাস দেয়া হয়, কিন্তু সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয় না। সর্বশেষ আমরা আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলাম। তবে আজ মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদের সঙ্গে বৈঠক করে সিলেটের পাম্পগুলোর জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন।এ ক্ষেত্রে সরকার ভাড়া বহন করার শর্তে ভৈরব থেকে চাহিদামতো তেল আনার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে বলে আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত আশ্বাসের বিষয়টি বাস্তবায়ন হয় কি না দেখবো। যদি হয় তবে আর আমরা ধর্মঘটে যাবো না। আর যদি বাস্তবায়ন না হয় তবে ২২ জানুয়ারি থেকেই ধর্মঘট পালন করা হবে।

বৈঠকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস, ডিস্ট্রিবিউটরস, এজেন্টস এ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগীয় কমিটি নেতৃবৃন্দ এবং সিলেটে জ্বালানি তেল বিপণনকারী কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার ডিপো কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, সিলেটে জ্বালানি তেলের সংকট আরও প্রকট হয়েছে। চাহিদার অর্ধেক জ্বালানিও সরবরাহ করতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ব বিপণন কোম্পানিগুলো। রেলের ওয়াগন সংকটের কারণে চট্টগ্রাম থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে জ্বালানি তেল না আসায় এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক মাস সিলেটের ব্যবসায়ীরা ভৈরব থেকে জ্বালানি তেল এনে পাম্পগুলো সচল রেখেছিলেন। কিন্তু পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা সংকট নিরসনে আন্দোলনের পথ বেছে নেন। এ অবস্থায় গত ১৪ জানুয়ারি সভা করে জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে সিলেটের পাম্পগুলোতে তেল বিক্রি বন্ধ করে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। তবে শর্তাসাপেক্ষে মঙ্গলবার তারা সে ধর্মঘট স্থগিত করেন। জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, সিলেট বিভাগে ১১৪টি পাম্পের মাধ্যমে জ্বালানী তেল বিক্রি করা হয়। বিভাগে প্রতিদিন ১০ লাখ লিটার ডিজেল এবং ৩ লাখ লিটার পেট্রোল ও অকটেনের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ওয়াগন সংকটের কারণে গড়ে প্রতিদিন ডিজেল, অকটেন ও পেট্রোল মিলিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে ৫/৬ লাখ লিটার। সপ্তাহে যেখানে প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে তেলবাহী একটি লরি আসার কথা সেখানে আসছে মাত্র ২/৩ দিন। যে কারণে সিলেটে দিন দিন জ্বালানি তেলের সংকট বেড়েই চলছে।এ অবস্থায় সিলেটের ব্যবসায়ীরা এতদিন ক্রেতাদের স্বার্থ বিবেচনায় নিজ খরচে ভৈরব থেকে জ্বালানি তেল এনে বিক্রি করছিলেন। কিন্তু পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পাম্প মালিকদের অব্যাহতভাবে লোকসান গুনতে হচ্ছে।এদিকে, একসময় সিলেটের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে পাওয়া কনডেনসেড্ শোধন করে সিলেটেই উৎপাদন হতো জ্বালানি তেল। কিন্তু সিলেটের শোধনাগারগুলোতে উৎপাদিত তেলের ‘মান ভাল নয়’ অজুহাতে ২০২১ সালে বন্ধ করে দেয়া হয় সকল শোধনাগার। পরে জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের মুখে কেবলমাত্র রশিদপুরের শোধনাগারটি চালু হলেও বাকিগুলো এখনো বন্ধ রয়েছে। সিলেটে জ্বালানি তেল সংকটের একমাত্র কারণ এটি।

You might also like