ঢাবি’র শতবর্ষ উদযাপনে আগামী বছর লন্ডনে আন্তর্জাতিক সম্মেলন

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডন: আগামী বছর ঢাবি’র শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে লন্ডনে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার পরিকল্পনা করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গত ৬ সেপ্টেম্বর লন্ডনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই ইউকে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড: মোঃ আখতারুজ্জামান এই পরিকল্পনার কথা জানান। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্যা ইউ কে‘র সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্যা ইউ কে‘র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা
জনাব দেওয়ান গাউস সুলতানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুর রকীব, এফ সি এ’র পরিচালনায় জুম এপ এর মাধ্যমে আয়োজিত এই ভার্চুয়াল সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যুক্ত হন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও ঢাবি’র আন্তর্জাতিক কনফারেন্স কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডক্টর ইমতিয়াজ আহমেদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক ডক্টর ভীষ্মদেব চৌধুরী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড: মোঃ আখতারুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য অ্যালামনাই, ইউকে’র বৃত্তি প্রদানের উদ্দ্যোগের ভূয়সি প্রশংশা করেন। অনলাইনে এ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই ইন দ্যা ইউকে-এর নেতৃবৃন্দ এবং সদস্যদের ধন্যবাদ জানান তিনি। গত বছরের ডিসেম্বরে লন্ডনে তাঁর সফরের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন এবং এলামনাই, ইউকে’র তাঁর সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠান ও আতিথেয়তার ভূয়শী প্রশংসা করেন উপাচার্য। ২০২১ সালে শতবর্ষ অনুষ্ঠানে ঢাবি এলামনাই ইউকে ও লন্ডন বাংলাদেশ হাই কমিশনের সহযোগিতার আশ্বাসে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন উপাচার্য ড. আক্তারুজ্জামান।

চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ন্যায্য আন্দোলনে সমর্থন দেয়ার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রজীবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেক দেয়া বহিস্কারাদেশ দীর্ঘদিন পর বাতিল করে তাঁর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব পুনর্বহাল করায় প্রধান অতিথি ঢাবি উপাচার্যকে ধন্যবাদ জানান অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম। তিনি বলেন, ছাত্রজীবনে একটি ন্যায্য আন্দোলনকে সমর্থন করতে গিয়ে যে বহিস্কারাদেশ পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, তা প্রত্যাহার করে বাঙালী জাতির জনকের প্রতি বিরল সম্মান দেখালো ঢাবি। এলামনাই ইউকে’র বৃত্তি প্রদান কর্মসূচীকে স্বাগত জানিয়ে হাই কমিশনার বলেন, ‘এমন মহতি উদ্যোগ গুলোর সাথে হাই কমিশন সব সময় পাশে থাকবে’।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক কনফারেন্স কমিটির আহ্বায়ক, অধ্যাপক ডক্টর ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই পৃথিবীর একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যার ছাত্ররা এবং শিক্ষকরা একটি দেশের মুক্তির জন্য জীবন দিয়েছেন। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যার ছাত্ররা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের পতাকা প্রথম উত্তোলন করেছেন। এই বিরল রেকর্ড পৃথিবীর আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমনকি শ্রেষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় থাকা অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, বা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়েরও নেই।

অনুষ্ঠানের আরেক বিশেষ অতিথি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী বলেন, কালের পরিক্রমায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ একটি বিশাল পরিবারের রূপ পরিগ্রহ করেছে। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন এবং উচ্চতর গবেষণায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামনের দিনগুলোতে আরো কার্যকর অবদান রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ও জাতি বিনির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অপরিসীম। যদি রেংকিং এর ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া হতো তাহলে হয়তো দেখা যেতো পৃথিবীর সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান অনেক ওপরে থাকতো।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, ঢাবি এলামনাই ইউকে’র প্রতিষ্ঠাকালীন প্রথম সভার সভাপতি হাবিব রহমান, প্রথম সদস্য সচিব মারুফ আহমেদ চৌধুরী, মূল উদ্দোক্তাদের অন্যতম শাহাগীর বখত ফারুক, সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, অন্যতম সহ সভাপতি ইসমাইল হোসেন, অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক মেসবাহ উদ্দীন ইকো ও কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ হামিদুল হক।শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন প্রকাশনা ও প্রচার সম্পাদক নীলুফা ইয়াসমিন হাসান।

সাড়ে চার ঘন্টা ব্যাপি এ অনুষ্ঠানে আলোচনা ছাড়া ছিলো মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন গৌরী চৌধুরী, ডঃ শ্যামল কান্তি চৌধুরী, রিপা রকীব, নাদিয়া লোদী ওয়াহাব, কাজী কল্পনা, অমল পোদ্দার, তামান্না ইকবাল, সাঈদা চৌধুরী, সৈয়দ জুবায়ের, কনক বর্মা, স্যামুয়েল চৌধুরী, বেলাল রশিদ প্রমূখ। কবিতা আবৃত্তি করেন ডক্টর হাসনীন চৌধুরী, সৈয়দ আহমেদ ইকবাল, ব্যারিস্টার মুয়িদ খাঁন এবং ব্যারিস্টার এম কে হাসান। সাংস্কৃতিক পর্ব উপস্থাপনা করেন মোস্তফা কামাল মিলন, ব্যারিস্টার মাহরুন আহমেদ মালা এবং সুপ্রভা সিদ্দিকী। পুরো পরিবেশনায় ছিলেন শুধু এ্যালাননাই ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। আলমির, রিমঝিম ও প্রিয়ম – এই তিন জন শিশু শিল্পীও পরিবেশনায় অংশ নেয়। আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হওয়ার পরও অর্ধ শতাধিক সদস্যের আগ্রহে ও উপস্হিতিতে সংগীতানুষ্ঠান অতিরিক্ত দু’ঘন্টার উপরে চলে রাত প্রায় এগারো ঘটিকায় সমাপ্ত হয় টানা ছয় ঘন্টা পর।

You might also like