ঢাবি আ্যলামনাই ইন দ্য ইউকের সাথে আমরা যৌথভাবে কাজ করবো: সুভাষ রায়

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আ্যলামনাই ইন দ্য ইউকের সাথে যৌথভাবে কাজ করার আশা ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাজ্য সফররত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আ্যলামনাই এসোসিয়েশনের সিনিয়ার যুগ্ম মহাসচিব সুভাষ চন্দ্র সিংহ রায়।

ঢাবি আ্যলামনাই ইন দ্য ইউকের আয়োজনে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রশান্ত পুরাকায়স্থ বিইএম এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনের পরিচালনায় এক মতবিনিময় সভা ১০ই মার্চ পূর্ব লন্ডনের একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময়কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আ্যলামনাই এসোসিয়েশনের যুগ্ম মহাসচিব ও একুশে পদকপ্রাপ্ত রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ চন্দ্র সিংহ রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত এবং বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ সকল আন্দোলন সংগ্রাম এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল অগ্রগামী। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোর অনেক উন্নতি হয়েছে সত্যি, কিন্তু বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় উম্মাদনার ছোঁয়ায় এখন অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ নেই। তিনি বলেন, ষাটের দশকে তখনকার সরকার ছিল সাম্প্রদায়িক, আর মানুষ ছিল অসাম্প্রদায়িক। বর্তমানে সরকার অসাম্প্রদায়িক, কিন্তু মানুষগুলো বদলে গেছে। সকল আ্যালামনাইকে এর প্রতিকারে কাজ করতে হবে।

সুভাষ চন্দ্র সিংহ রায় উল্লেখ করেন, অনেকে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বলেন, ‘নোবেলজয়ী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময়ে বিরোধিতা করেছেন‘, কিন্তু এটা সঠিক নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময়ের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে সুভাষ চন্দ্র আরো বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডক্টর অব লিটারেচার বা ডি-লিট উপাধি দেওয়া হয়েছিল এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন সংগঠন তাঁকে সংবর্ধনাও দিয়েছিল। এছাড়া, আরো তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, এটা প্রমাণিত হয় যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা তো করেননি, বরং এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁর আমৃত্যু অটুট বন্ধন ছিল।

মতবিনিময়কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য এবং জগন্নাথ হল সংসদের সাবেক সহসভাপতি সুভাষ চন্দ্র তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথাও তুলে ধরেন।

ঢাবি আ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আ্যলামনাই এসোসিয়েশনের যুগ্ম মহাসচিব সুভাষ চন্দ্র সিংহ রায় বলেন, আপনারা অনেক ভাল কাজ করছেন, সৎভাবে সত্য কথা আপনারা বলতে পারবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বৃত্তি দিচ্ছেন, আপনাদের অনেক অবদান। আপনাদের সংগঠনের সাথে আমরা যৌথভাবে কাজ করবো।
সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী ও জাতির জনকের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আ্যলামনাই ইন দ্য ইউকের পক্ষ থেকে চারমাসব্যাপী দ্বৈত শতবার্ষিকীর আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে ভার্চ্যুয়াল সেমিনারের কথা উল্লেখ করেন। যেখানে অন্যান্যদের সাথে বক্তা হিসেবে সুভাষ চন্দ্র সিংহ রায়ও যুক্ত হয়েছিলেন। তিনি সংগঠনের কার্যক্রমও তুলে ধরেন। সমাপনি বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রশান্ত পুরাকায়স্থ অতিথী সুভাষ চন্দ্র সিংহ রায়ের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ের তাঁর মধুর স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, সুভাষ তখন ছিল স্নেহাস্পদ আর এখন তিনি শ্রদ্ধার পাত্র। উপস্থিত সংগঠনের সকল সদস্যকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ধন্যবাদ জানান।

সভার শুরুতে অতিথীকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁকে ক্রেস্ট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রকাশিত ম্যাগাজিন উপহার দেয়া হয়। সুভাষ চন্দ্র সিংহ রায় তাঁকে নিয়ে মতবিনিমিয় সভার আয়োজন করায় উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

মতবিনিময় সভায় সংগঠনের পক্ষ থেকে আরো উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, সহসভাপতি মেসবাহ উদ্দিন ইকো, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু আকবর আহমেদ ইকবাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহারুন আহম্মেদ মালা, কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ হামিদুল হক, শিক্ষা এবং গবেষণা সম্পাদক এরিনা সিদ্দীকি সুপ্রভা, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সৈয়দ এনামুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রীপা রাকীব, কার্যকরী কমিটির সদস্য সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান, মারুফ আহমেদ চৌধুরী, বাসিত চৌধুরী কামরান, এম কিউ হাসান, সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুর রাকীব, মোস্তফা কামাল মিলন, ড. কামরুল হাসান ও সৈয়দ আনিসুজ্জামান প্রমুখ। আলোচনা পর্ব শেষে নৈশ ভোজের আয়োজন করা হয়।

You might also like