তাহিরপুরে যাদুকাঁটা নদীতে বালু খেকোদের আগ্রাসন থামছেনা রাতের অন্ধকারে চলছে হরিলুট
শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জ থেকেঃ সুনামগঞ্জের যাদুকাঁটা নদীর তীরবর্তী সরকারী ভূমি অবৈধভাবে জবর দখল করে বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা হরিললুট করছে একটি বালুখেকো সিন্ডিকেড চক্র। অভিযোগ উঠেছে সরকারি নির্দেশাকে বৃদ্ধাংগুলী দেখিয়ে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল পাথর উত্তোলনের কোয়ারি নামক গভীর গর্ত তৈরি করে নদীর তীর কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে।এতে নদী তীরবর্তী কয়েক হাজার পরিবার বাড়িঘর হারিয়ে ইতিমধ্যে নিঃস্ব হয়েছে।অসহায় গ্রামবাসী বাঁধা দিয়েও তাদের বাড়িঘর রক্ষা করতে পারছেনা। আর সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, যুগযুগ ধরে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে আসছে বালুখেকো সিন্ডকেড চক্র। হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হলেও ক্লান্ত হয়নি প্রভাবশালী বালি খেকোরা। উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের গাগটিয়া জালরটেক হতে অদৈত মহাপ্রভুর বাড়ির পশ্চিমপাড় পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার ও উত্তর বড়দল
ইউনিয়নের শিমুল বাগান হয়ে মানিগাঁও, মাহারাম, শান্তিপুর, চাঁনপুর পর্যন্ত আরো ২ কিলোমিটারসহ কলাগাঁও, চারাগাঁও এলাকায় চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রির তা-ব। এই স্থানগুরোতে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত শতাধিক ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে প্রায় ১৫লক্ষ টাকা মূল্যের বালি অবৈধ ভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি নৌকায় বোঝাই করা হয় ৭শত থেকে ১হাজার ফুট বালি। আর অবৈধ বালি বোঝাই ইঞ্জিনের নৌকাগুলো যাদুকাটা নদী হয়ে রক্তি, পাটলাই ও সুরমা নদীপথ দিয়ে জামালগঞ্জ হয়ে কুমিল্লা, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ ও ঢাকায় যাচ্ছে। প্রশাসনের যতাযত নজরধারী না থাকার কারণে রাজস্ব বিহীন ২০টি অবৈধ কোয়ারি থেকে বালুখেকোচক্রের আগ্রাসন কিছুতেই থামছেনা। ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হতদরিদ্ররা আর অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে প্রভাবশালীরা ভুক্তভোগীদের এ অভিযোগ।
তবে স্থানীয় অনেকেই এই প্রবাবশালী বালুখেকোচক্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ।নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগী জানান, ইঞ্জিন চালিত নৌকায় অবৈধভাবে বালি বোঝাই করার সময়-বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ক্যাম্পের সোর্স পরিচয় দিয়ে গাগটিয়া গ্রামের আলীম উদ্দিন অবৈধ কোয়ারি থেকে উত্তোলিত প্রতিফুট বালু থেকে ১ টাকা, কামড়াবন্দ গ্রামের ইব্রাহিম মিয়া যাদুকাটা নদীর অবৈধ বালু থেকে প্রতিফুটে ১টাকা ও মানিগাঁও গ্রামের জালাল মিয়া প্রতিফুট বালু থেকে ১টাকা চাঁদা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে প্রতিফুট বালি থেকে ২ টাকা চাঁদা নিচ্ছে স্থানীয় একজন সংবাদকর্মী। তার বিরুদ্ধে মাদক ও চাঁদাবাজির একাধিক মামলা রয়েছে। কিন্তু প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিলেও উল্লেখিত ব্যক্তিদের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে উল্লেখিত ব্যক্তিদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি।
বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ক্যাম্পের ইনর্চাজ এসআই মাহমুদুল জানান, অবৈধ ভাবে বালি-পাথর বিক্রি কিংবা চাঁদা উত্তোলনের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমার ক্যাম্পের কোন সোর্স নেই। তবে এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখবো। তাহিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যারা অবৈধ ভাবে বালি ও পাথর উত্তোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।সুনামগঞ্জ জেলা প্রসাশক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিব করেননি।অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলনকারী প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন নদী তীরবর্তী অসহায় মানুষজন।