এক যুগ সম্মেলন না হওয়া যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগে গতিহীনতা,নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
সত্যবাণী
লন্ডনঃ ২০১১ সালের ২৯ জানুয়ারি লন্ডনের হিলটন হোটেলে সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছিলো ৭১ সদস্য বিশিষ্ট আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য কমিটি। সভাপতি বর্ষীয়ান নেতা সুলতান মাহমুদ শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কমিটির এক যুগ চলছে। এতে নেতৃত্বে নতুন মুখ না আসায় সংগঠনে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। এছাড়া করোনায় কমিটির পাঁচ জন সহসভাপতিসহ বেশ কয়েকজন নেতা মৃত্যুবরণ করেছেন। খালি হওয়া পদগুলো পূরণ করা হয়নি। অন্যদিকে, কমিটির কেউ কেউ নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে দায়িত্ব পালন করতে যুক্তরাজ্য ছেড়ে বাংলাদেশে স্থায়ী হয়েছেন। আরো কয়েকজন শীর্ষনেতা বাংলাদেশে রাজনীতিতে যুক্ত হতে বা নির্বাচন করার প্রত্যাশা নিয়ে ঘন ঘন দেশে যাওয়া আসা করে চলছেন। এতে নেতৃত্বে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
ফলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কার্যত কোনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি বহাল নেই। বিগত কয়েক বছর যাবত যখনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য আসেন, তখনই যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সম্মেলন ও নতুন কমিটি নিয়ে নতুন করে আগ্রহ দেখা দেয়। প্রধানমন্ত্রীর এবারের আগমন ঘিরেও একই রকম প্রত্যাশা ও উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাধারণত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবার নিজে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করেন। তার সিদ্ধান্ত ছাড়া কখনোই কমিটি হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, দলের মধ্যে গণতন্ত্রের স্বার্থে সম্মেলন ও নতুন কমিটি হওয়াটা জরুরি। দলের মধ্যে যোগ্য অনেকেই আছেন সুযোগ পেলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগকে নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে দলের জন্য ভালো ভূমিকা রাখতে পারবেন। কারণ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ৬৫টি শাখা সংগঠনের মধ্যে গত ১৩ বছরে হাতে গোনা কয়েকটি শাখার সম্মেলন করা হয়েছে। বাকীগুলোতে সম্মেলন না হওয়ায় সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে দ্বন্ধ ও স্থবিরতা বিরাজ করছে। নেতাকর্মীদের অভিযোগ- একটি গ্রুপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করারও সুযোগ দেন না। তাদের মতে, নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার এবং কথা বলার সুযোগ পেলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগকে আরো শক্তিশালী করাসহ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নানামুখী সমস্যা তুলে ধরতে পারতেন নেত্রীর কাছে। তাই অধিকাংশ নেতাকর্মীর দাবি, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করতে দীর্ঘদিন থেকে বঞ্চিত, দলের জন্য নিবেদিত মাঠের কর্মীদের নিয়ে নতুন কমিটি করা হোক। এদিকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলে নতুন কমিটিতে কারা দায়িত্ব পেতে পারেন তা নিয়েও চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। নতুন সভাপতি হিসাবে যাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে তাদের মধ্যে আছেন বর্তমান কমিটির প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট আলহাজ্জ্ব জালাল উদ্দিন, ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক আবুল হাশেম, ভাইস প্রেসিডেন্ট মজম্মিল আলী, বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি হরমুজ আলী, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক ও বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমেদ চৌধুরী।
এছাড়া সুলতান শরীফ আরেক মেয়াদ বহাল থাকার গুঞ্জন রয়েছে।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে এতদিন বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। ফলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় পদে তাঁর আর থাকার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যার ফলে সাধারণ সম্পাদক পদে এখন যাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে তাদের মধ্যে আছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নঈম উদ্দিন রিয়াজ, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী, দফতর সম্পাদক শাহ শামীম আহমেদ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আ স ম মিসবাহ। তবে দলের নেতা-কর্মীরা তুলনামূলক তরুণ এবং যিনি সার্বক্ষণিক দলকে সময় দিতে পারবেন এমন কাউকে দলের শীর্ষ দুইপদে দেখতে চান।