পরীমনির ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টা মামলা: নাসির-অমির বিরুদ্ধে চার্জশিট
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ ঢাকাই সিনেমার অভিনেত্রী পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাভার থানায় দায়ের করা মামলায় আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ তিন জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ।সোমবার বিকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন এ চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটভুক্ত অপর আসামি হলেন- শাহ শহিদুল ইসলাম। তিনি পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৮ জুন রাতে সাভারের বিরুলিয়া এলাকায় বোট ক্লাবে চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। এর ৫দিন পর ১৪ জুন নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার মামলা দায়ের করেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। দীর্ঘ ২ মাস ২৩ দিন পর সোমবার বিকালে এই মামলার চার্জশিট দাখিল করেন সাভার মডেল থানা পুলিশ।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, মামলায় এজাহারনামীয় প্রধান আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ (৬০) ও মামলায় তদন্তে আসা ৩ নম্বর আসামী শাহ শহিদুল আলম (৫০) অভিযোগকারী পরীমনিকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে অশ্লীল আচরণ করে। এর পর তাকে মারপিট করে বিভিন্ন প্রকার হুমকি দিয়ে শ্লীলতাহানি করা হয়। এছাড়া মামলার দ্বিতীয় আসামি তুহিন সিদ্দিকী অমি (৩৩) পরীমনিকে কৌশলে বোট ক্লাবে নিয়ে যায় নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও শাহ শহিদুল আলম। এর পর তাকে অশ্লীল কথা বলে শরীরে স্পর্শ করে। এতে মামলার বাদী পরীমনি ক্ষিপ্ত হলে তাকে মারপিট করে বিভিন্ন প্রকার হুমকি দেয়ার দায়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অপরাধ প্রতীয়মান হয় বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন জানান, ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই তিন জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছেন তিনি। এফআইআর-এ অপর আসামি শাহ শহিদুল আলমের নাম না থাকলেও তদন্তের সময় তার সম্পৃক্ততা পাওয়ায় চার্জশিটে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।সাভার মডেল থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণের চেষ্টা মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।পরীমনির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ জুন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তার বন্ধু অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় করা মাদক মামলায় সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গত ১৫ জুন সাভার থানার পুলিশ পরিদর্শক কামাল হোসেন তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। নাসির ও অমি মাদক মামলায় রিমান্ডে যাওয়ায় ওই দিন রিমান্ড শুনানি হয়নি। মাদক মামলায় রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর বিচারক তাদের পরীমনিকে ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার মামলায় করা রিমান্ড আবেদনের শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। ২৩ জুন (বুধবার) ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব হাসান শুনানি শেষে তাদের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এরপর ২৯ জুন (মঙ্গলবার) পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে তাদের ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। তখন মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা। অন্যদিকে তাদের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহজাদী তাহমীদা তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘গত ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি (৩০), অমি (৪০) ও বনিসহ (২০) দুটি গাড়িতে করে তারা উত্তরার উদ্দেশে রওনা হন। পথে অমি বলে বেড়িবাঁধের ঢাকা বোট ক্লাবে তার দুই মিনিটের কাজ আছে। অমির কথামতো তারা সবাই রাত আনুমানিক ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করায়। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। অমি ক্লাবের ভেতরে গিয়ে বলে এখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর, তোমরা নামলে নামতে পারো।’
এজাহারে আরও বলা হয়, ‘তখন আমার ছোট বোন বনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বোট ক্লাবে প্রবেশ করেন ও বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করেন। টয়লেট থেকে বের হতেই এক নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদের ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন ও কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ এক নম্বর আসামি মদপানের জন্য জোর করেন। আমি মদপান করতে না চাইলে এক নম্বর আসামি জোর করে আমার মুখে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এতে আমি সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাত পাই। এক নম্বর আসামি (নাসির উদ্দিন মাহমুদ) আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ও আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করেন এবং আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তিনি উত্তেজিত হয়ে টেবিলে থাকা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুঁড়ে মারেন। তখন কস্টিউম ডিজাইনার জিমি নাসির উদ্দিন মাহমুদকে বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করে জখম করেন।এজাহারে পরীমনি বলেন, ‘আমি প্রথমে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে ফোন দিতে গেলে আমার ফোনটি কেড়ে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এ সময় দুই নম্বর আসামিসহ অজ্ঞাতনামা চারজন এক নম্বর আসামিকে ঘটনা ঘটাতে সহযোগিতা করেন। আমি অজ্ঞাতনামা আসামিদের দেখলে শনাক্ত করতে পারবো।’
এজাহারে তিনি আরও বলেন, ‘দুই নম্বর আসামি অমি পরিকল্পিতভাবে আমাকে বর্তমান বাসা থেকে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যান। তিনি অজ্ঞাতনামা চারজন আসামি ও নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে ও জোরপূর্বক আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। আমি আমার সঙ্গীদের সহায়তায় ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পাই। রাত আনুমানিক ৩টায় আমি আমার গাড়িতে প্রায় অচেতন অবস্থায় অপর সঙ্গীদের সহায়তায় বাসায় ফিরে আসি।’