ফেরদৌস টিপুর অনুবাদ গ্রন্থদ্বয় নিয়ে কবিকণ্ঠের সাহিত্যানুষ্ঠান
সাহিত্য ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডন: ‘আমাদের নিজস্ব অস্থিত্ব জানার জন্য ম্যাকপিস থ্যাকারের ভারতজীবন ও লিন্ডসের ভারতে বঙ্গদর্শন গ্রন্থদ্বয় পাঠ জরুরি‘ বলে সুধীজন মন্তব্য করেছেন। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কবিকণ্ঠ আয়োজিত সৃজন ও মননশীল সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা, কথোপকথন এবং লেখালেখি নিয়ে আলোচনায় আরো উঠে আসে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ নানা বাকবদলের বৃত্তান্ত।
গত ৮ নভেম্বর পূর্ব লন্ডনের জুবিলি স্ট্রিটে সাপ্তাহিক পত্রিকা অফিসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এবারের লেখক ছিলেন অনুবাদক ফেরদৌস টিপু। ফ্রান্সিস ব্রাডলি বার্ট-এর ‘ উইলিয়াম ম্যাইকপিস থ্যাকারের ভারতজীবন‘ এবং রবার্ট লিন্ডসের ব্রিটিশভারতে বঙ্গদর্শন‘ গ্রন্থদ্বয় নিয়ে লিখিত আলোচনা উপস্থাপন করেন ইতিহাস লেখক ফারুক আহমদ। দুটি গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন ফেরদৌস টিপু।
ব্রিটেনে অভিবাসন প্রতিষ্ঠা-আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ও মাইগ্রেট ভয়েসের প্রেসিডেন্ট হাবিব রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গ্রন্থ প্রকাশনা ও বিপনন প্রতিষ্ঠান ‘বাতিঘর‘র কর্ণধার দীপঙ্কর দাশ। কবিকণ্ঠের কর্ণধার কবি হামিদ মোহাম্মদের উপস্থাপনায় গ্রন্থদ্বয় নিয়ে আরো আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষাবিদ সৈয়দ এনামুল ইসলাম, লেখক ও কবি আলমগীর শাহরিয়ার।
এছাড়া ভিডিও সংযোগে লীডস থেকে যুক্ত হন কবি টি এম কায়সার। উল্লেখিত গ্রন্থদ্বয়, অনুবাদ সাহিত্য, বিশ^মাত্রিকতা এবং প্রাচ্য-প্রাশ্চাত্যবাদ নিয়ে বিশ^চিন্তকদের নানা গবেষণা ও কর্ম বিষয়ক তথ্য ও তত্ত¡সমূহ কায়সারের আলোচনায় স্থান পায়। কায়সার ফেরদৌস টিপুর অনুদিত গদ্যে মুগ্ধ হয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, সামান্য ত্রæটিবিচ্যুতি বাদ দিলে টিপুর গদ্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। আলমগীর শাহরিয়ার বলেন, অনুবাদকের সাথে সরাসরি দেখা হয়নি কোনোদিন, কিন্তু তার এ অনুবাদ গ্রন্থদ্বয় অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে। নিজেকে জানার জন্য ইতিহাস পড়া কতটুকু সহায়ক, এ দুটি অনুদিত গ্রন্থপাঠ আমাকে সমৃদ্ধ করেছে।
সৈয়দ এনামুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠকালে ও পরবর্তী কর্মজীবনের বিভিন্ন বাকবদলে যে প্রাচ্য চিন্তা, ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশ, সমাজতাত্তি¡ক বিরল অনেক অবলোকন ব্যাখা করে বই দুটির পাঠ প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, এ অনুষ্ঠানের আয়োজন না হলে আমি টিপুর অনুদিত গ্রন্থদ্বয় সম্পর্কে জানতামই না। এ জন্যে কবিকণ্ঠকে ধন্যবাদ দেন তিনি।
দীপঙ্কর দাশ তার বক্তব্যে বাংলাদেশে পুস্তক প্রকাশনা, বিপনন, সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। তার পরিচালিত বাতিঘর-এ বসে বইপাঠ করার সুযোগ বা ব্যবস্থার নয়া উদ্যোগের উল্লেখ করে বলেন, আমরা লেখক ও পাঠকদের নিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানে মুখোমুখি বসি, সাহিত্যালোচনা করি এবং চেষ্টা করি লেখক ও পাঠকের মেলবন্ধন তৈরী করতে।
অনুবাদক ফেরদৌস টিপু তার বক্তব্যে বলেন, কেন তিনি এ দুটি গ্রন্থ অনুবাদ করতে অনুপ্রাণিত হন। গুণী ব্যক্তিত্বদের বিভিন্ন বক্তব্য, দর্শন এবং প্রাচ্য সম্পর্কে প্রাশ্চাত্যের দৃষ্টিভঙ্গির তীর্যক আলোচনায় করে আরো বলেন, নিজেকে তথা বাঙালিসহ উপমহাদেশীয় আইডেন্টিটি খোঁজার প্রশ্নেই তিনি মনোযোগী হন এর অনুবাদকর্মে। তিনি বলেন, গ্রন্ধদ্বয় পড়ে কেউ যদি সামান্য উপকৃত হন, তবেই তার শ্রম স্বার্থক হয়েছে বলে তৃপ্তি পাবেন।
সভাপতি হাবিব রহমান আলোচনায় বলেন, সিলেট অঞ্চলের নানা ঘটনা উঠে এসেছে বই দুটিতে। ব্রিটিশ ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি ও তার কর্মকর্তারা আমাদের সমৃদ্ধ অঞ্চলটিকে কিভাবে সম্পদহীন করেছে তার ইঙ্গিত বইগুলোপাঠে সন্ধান মেলে। আমাদের নিজস্ব অস্থিত্ব জানার জন্য বই দুটি পাঠ জরুরি।
অনুষ্ঠানে কথোপকথনে আরো অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান,আইটি বিশেষজ্ঞ অনন্ত হিজল, শিক্ষাবিদ অশ্রæ বৈরাগী, নাট্যকর্মী খাদিজা বেগম, আরফুমান চৌধুরী, কবি আবদুল কায়ূউম, তরুণ সমাজকর্মী আবদুল আলীম ও মো. জাহাঙ্গীর আলম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থিত সুধীজনের পরিচয় করিয়ে দেন কবিকণ্ঠের পক্ষে কবি হামিদ মোহাম্মদ। এছাড়া উল্লেখিত গ্রন্থদ্বয় নিয়ে কবি হামিদ মোহাম্মদের লেখা একটি নিবন্ধের প্রিন্ট কপি উপস্থিত সুধীজনের মধ্যে বিতরণ করা হয়।L