বন্ধ হচ্ছে সূর্যের হাসি ক্লিনিক,চাকরি হারানোর আশংঙ্কায় ২ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী
শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জ থেকেঃ মহামারী করোনাভাইরাসের ফলে উদ্ভূত সংকটজনক পরিস্থিতির মধ্যেই চাকরি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন সূর্যের হাসি ক্লিনিকের ১৫৮টি শাখার প্রায় দুই হাজার স্বাস্থ্যকর্মী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও দিক নির্দেশনায় সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের স্বাস্থ্য কর্মীরা যখন করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, ঠিক সে মুহুর্তে সিলেট বিভাগের ১৮টিসহ ১৫৮টি সূর্যের হাসি ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়ে কর্মীদেরকে বাধ্যতামূলক চাকরিচ্যুত করার পদক্ষেপ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ অবস্থায় চাকরি বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা।
গত ১০ মে সিলেট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে উপশহর সূর্যের হাসি ক্লিনিকের ক্লিনিক ম্যানেজার সুচন্দা দাস,চৌকিদিঘী সূর্যের হাসি ক্লিনিকের ম্যানেজার পপি দে, চাদনীঘাট ক্লিনিকের ম্যানেজার তাইফা ও দক্ষিণ সুরমার ম্যানেজার রুখসানা ও সিলেট জেলা প্রশাসকের কাছে হাসপাতাল বন্ধের আদেশ স্থগিতের আবেদন করেছেন।
আবেদনে বলা হয়, দেশের মানুষ যখন করোনার ভয়াবহ ছোবল থেকে বাঁচার জন্য ঘরে বন্দি, প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের মানুষকে করোনার হাত থেকে মুক্ত করার জন্য দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এবং সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কে স্বাস্থ্য কর্মীরা যখন করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, ঠিক সে মুহুর্তে সিলেট বিভাগের ১৮ টিসহ মোট ১৫৮টি সূর্যের হাসি ক্লিনিক বন্ধ করে এর প্রায় ২ হাজার কর্মীকে বাধ্যতামূলক ভাবে চাকরীচ্যুত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠারে কর্মীদের পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার সদস্য সাধারণ ভাবে খেয়ে পরে জীবন ধারণ করা প্রশ্নের সম্মুখী হয়ে পড়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মধ্যমে বলেছেন করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি বেসরকারি কোন পর্যায়ের কাউকে চাকুরীচ্যুত এবং হয়রানি করা যাবে না।
এবিষয়ে সুচন্দা দাস মেডিভয়েসকে বলেন, সূর্যের হাসি ক্লিনিক দীর্ঘদিন সারাদেশে পরিবার পরিকল্পনা এবং গর্ভবতী মায়েদের সেবা দিয়ে আসছে। তাদের কাজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছে, গর্ভবতী নারী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং আস্থার প্রতীক। অথচ কতৃপক্ষ বলছে বন্ধ ঘোষণা করা ১৫৮ টি হাসপাতালের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের প্রশ্ন রাখে, যা সত্য নয়।
বন্ধের কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা কর্তৃপক্ষের সাথে মেইল এবং ফোনে যোগাযোগ করেছেন। কর্তৃপক্ষ তাদের ফান্ড সংকটের কথা বলেছে যদিও তারা জানতে পেরেছেন আগামী ২০২২ সাল পর্যন্ত ইতোমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক বিকাশ সংস্থার (ইউএসএইড) থেকে ফান্ড চলে এসেছে। করোনা পরিস্থিতিতে সারাদেশে লক ডাউন থাকায় তারা সরাসরি প্রধান কর্যালয়ে যেতে পারছেন না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে স্বারকলিপি এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার জেলা প্রশাসকদের নিকট স্থগিতের আবেদন করছেন উল্লেখ করে এই ক্লিনিক ম্যানেজার বলেন, তারা আশা করেন কর্তৃপক্ষ মানবিক দিক বিবেচনা করবে। তারা এ ব্যাপারে স্বাস্থ ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি কামনা করেন।
উল্লেখ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, গর্ভবতী মায়ের পরিচর্যা, বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে গর্ভবতী মায়েদের সাধারণ প্রসব সেবা, ইপিআইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য ১৯৯৭ সাল ইউএসএইড এর সহযোগিতায় দেশে সূর্যের হাসি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। সারা দেশের ৩৬৯টি উপজেলায় এ ক্লিনিক রয়েছে।কিন্তু গত ৫ এপ্রিল সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আলী দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরের ১৫৮টি ক্লিনিক বন্ধের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে একটি আবেদন করেন। এরও আগে ৭৪টি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া হয়।এ পরিস্থিতে এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করা প্রায় হাজার স্বাস্থ্যকর্মী চাকুরী হারানোর আতঙ্কে রয়েছে। এতে এর সাথে সংশ্লষ্টি আরও ১৫ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পরেছে।
করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম গুলো মেনে চলুন। সর্দি কাশি জ্বর হলে হাসপাতালে না গিয়ে স্বাস্থ্য সেবা দানকারী হটলাইন গুলোতে ফোন করুন।