বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অব:প্রাপ্ত গ্রুপ ক্যাপ্টেনের মৃত্যুতে শোকের ছায়া জর্দান, ফিলিস্তিন ও পাকিস্তানে
নিউজ ডেস্ক সত্যবাণী
ঢাকা: বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজম সুজার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে জর্দান, ফিলিস্তিন ও পাকিস্তান। তিন দেশের সরকারের পক্ষেই শুধু নয়, ফিলিস্তিনের ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবিসহ দেশটির জনগনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট দিয়ে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের এই অবসরপ্রাপ্ত আকাশ সৈনিকের মৃত্যুতে।
গত রোববার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ইন্তেকাল করেন অব:প্রাপ্ত গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজম সুজা। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন। গত সোমবার জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শাহীন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
বাংলাদেশের একজন আকাশ সৈনিকের মৃত্যুতে ভীন দেশের সরকার ও জনগনের মধ্যে কেন এই শোকের মাতম, এটি খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক ভাবে প্রয়াত সাইফুল আজম সুজার পেশাগত বিভিন্ন বীরত্বের কাহিনী। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইলের ৬ দিনের যুদ্ধে সাইফুল আলম সুজাই একমাত্র ফাইটার পাইলট, যিনি একাই ভূপাতিত করেছিলেন ইসরাইলের ৪টি এয়ারক্রাফ্ট। বাংলাদেশী এই আকাশ সৈনিক ফাইটার পাইলট হিসেবে যুদ্ধ করেছেন জর্দান, ইরাক ও পাকিস্তানের আকাশে, বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন বিভিন্ন দেশের সম্মানজনক খেতাব।
আল জাজিরাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমও ফলাও করে প্রচার করেছে বাংলাদেশী এই সৈনিকের মৃত্যু খবর ও মৃত্যু পরবর্তী ফিলিস্তিন, জর্দান ও পাকিস্তানে শোকের আবহের কথা।
পাকিস্তান বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মুজাহিদ আনোয়ার খান সাইফুল আজমের ইন্তেকালে আন্তরিক শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে এবং ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় সাইফুল আযমের বীরত্বের কথা স্মরণ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি একজন ব্যতিক্রমী যোদ্ধা পাইলট ছিলেন যিনি সর্বদা তার বীরত্ব এবং পেশাদারিত্বের জন্য স্মরণীয় থাকবেন বলে মন্তব্য করেন পাকিস্তানের এয়ার চিফ মার্শাল। জর্দানের যুবরাজ আল-হাসান বিন তালাল সোমবার সাইফুল আজমের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
সাইফুল আজমের ইন্তেকালে শোক প্রকাশ করেছেন ফিলিস্তিনের নাগরিকরাও। ফিলিস্তিনের প্রকৃত বন্ধু উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন তারা। ফিলিস্তিনের ইতিহাসবিদ ওসামা আল আশকার সাইফুল আজমকে অসাধারণ প্রতিভাধর বিমান সেনা উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেন, ‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের হয়ে আল-আকসা মসজিদ রক্ষায় তিনি আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ রেখে লড়াই করেছেন।’ ফিলিস্তিনের অধ্যাপক নাজি শাউকরি টুইটারে সাইফুল আজমের ইন্তেকালে শোক প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, ‘সাইফুল আজম ফিলিস্তিনকে ভালোবাসতেন এবং জেরুজালেমের স্বার্থে লড়াই করেছিলেন।’ এছাড়া ফিলিস্তিনের খ্যাতনামা সাংবাদিক তামের আল-মিশাল সাইফুল আজমকে ‘আকাশের ঈগল’ বলে উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য, গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজম (অব.) একমাত্র সামরিক পাইলট, যার চারটি দেশের বিমান বাহিনীর (বাংলাদেশ, জর্দান, ইরাক ও পাকিস্তান) হয়ে কাজ করার কৃতিত্ব রয়েছে। তিনি প্রশিক্ষণে কৃতিত্বের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ‘টপ গান’ এবং ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ মিলিটারি অ্যাওয়ার্ড ‘সিতারা-ই-জুরাত’ উপাধিতে ভূষিত হন। তার বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে জর্দান সরকার তাকে ‘হুসাম-ই-ইস্তিকলাল’ সম্মাননায় ভূষিত করে। ইরাক সরকার ভূষিত করে ‘নাত আল-সুজাহ’ সামরিক সম্মাননায়। ২০০১ সালে সাইফুল আজমকে বিশ্বের ২২ জন ‘লিভিং ইগলস’-এর একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনাইটেড স্টেটস এয়ার ফোর্স।
তিনি তিনটি দেশের সামরিক খেতাবে ভূষিত হন, যা একটি বিশ্ব রেকর্ড। স্বাধীনতার পর তিনি ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৭৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি পাবনা-৩ আসনে বিএনপি দলীয় সাংসদ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
সূত্র : পাকিস্তান ট্রিব্রিউন, আনাদোলু এজেন্সি