বিবিসিএর গালা ডিনার অনুষ্ঠিত

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডন, ১৭ অক্টোবর: করোনা মহামারীসহ চলমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে যুক্তরাজ্যের রেস্টুরেস্ট সেক্টর গত কয়েক বছর যাবত বেশ কঠিন সময় পার করছে। দক্ষ কর্মী সংকট, ভিএটি’র কষাঘাতের পাশাপাশি এখন যোগ হয়েছে গ্যাস-বিদ্যুতের উচ্চমূল্য। রেস্টুরেন্ট মালিক, রাজনীতিক, সরকারের মন্ত্রী, গণমাধ্যমকর্মী এবং কমিউনিটির কর্তাব্যক্তিদের নিয়ে কারি শিল্পের সকল সংকট সমাধানে কাজ করার পাশাপাশি এই শিল্পের উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে ব্রিটিশ বাংলাদেশি ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন (বিবিসিএ)।
গতকাল সোমবার (১৭ অক্টোবর) সংগঠনটির বার্ষিক ডিনার অনুষ্ঠানে এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বিবিসিএ’র নেতৃবৃন্দ। লন্ডনের অভিজাত কেনজিংটন এলাকার ফাইভস্টার কোপথ্রোন তারা হোটেলে এ অনুষ্ঠান হয়। বিবিসিএ’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম ইয়াফর আলী এবং ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ডসের প্রতিষ্ঠাতা এনাম আলীসহ কারি শিল্পের প্রয়াত গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয় এ আয়োজনে।
ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের পাশাপাশি জমকালো এই ডিনার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য, রাজনীতিক, সাংবাদিক, সেলিব্রেটিসহ ব্রিটিশ সমাজের বিভিন্ন খাতের গণ্যমাণ্য ব্যক্তিরা। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে আসা বিবিসিএ’র সদস্যদের পাশাপাশি ছিলেন কারি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা।
অনুষ্ঠানে ছিল অসাধারণ সব পারফরম্যান্স ও চমৎকার সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অতিথিরা নাচ-গানে ভরপুর মন মাতানো এই অনুষ্ঠানে পুরো সন্ধ্যাই ছিলেন বিমোহিত। কারি শিল্প সংশ্লিষ্টদের এই মিলনমেলায় আনন্দ-উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি ছিল কারি শিল্পের সংকট নিরসনে জোরালো দাবি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিবিসিএ’র সভাপতি কাউন্সিলর সেলিম চৌধুরী। তাঁর আহবানে প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন হলভর্তি অতিথিরা। এরপর সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হয় পরিবর্তিত জাতীয় সংগীত ‘গড সেইভ দ্য কিং’।
সেলিম চৌধুরী বলেন, বিবিসিএ প্রতিষ্ঠার ১০ বছর অতিক্রম করছে। এ সময়ে সংগঠনের সদস্য সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। বিশেষ করে তরুণ কারি উদ্যোক্তারা বিবিসিএ সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, রেস্টুরেন্ট খাতের ভিএটি বাতিল এবং দক্ষ কর্মী সংকটের সমাধানের দাবিতে সাবেক চ্যান্সেলার ঋষি সুনাক ও প্রধানমন্ত্রীর কার‌্যালয়সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেছে বিবিসিএ নেতৃবৃন্দ। বিবিসিএ কারি শিল্পের দাবি-দাওয়া আদায়ে সকলকে নিয়ে কাজ করে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চলমান সংকট কারি শিল্পকে আরও শক্তিশালী রূপে টিকে থাকার অনুপ্রেরণা যোগাবে।
বিবিসিএ‘র সাধারণ সম্পাদক তফজ্জল মিয়া বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিবিসিএ এর সদস্যদের পাশাপাশি কমিউনিটির সুঃখে-দুঃখে পাশে আছে। করোনা মহামারির সময় বিবিসিএ’র সদস্যরা ২৪ হাজার প্যাকেট খাবার বিতরণ করেছেন। এনএইচএসকর্মী ও অসহায় মানুষকে সহায়তা করেছেন। হাজার হাজার পাউন্ডের তহবিল সংগ্রহ করে বাংলাদেশের অসহায় মানুষকেও সহায়তা করেছে। তফজ্জল মিয়া বলেন, যুক্তরাজ্যে কারি শিল্পের বিভিন্ন সংগঠনগুলোর মধ্যে বিবিসিএ হলো অন্যতম সংগঠন যার সদস্য সংখ্যা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে।
সংগঠনের সাবেক প্রেসিডেন্ট কাউন্সিলার শামসুল ইসলাম সেলিম সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশিদের শক্তিশালী মনোভাবের কথা তুলে ধরেন। চিফ ট্রেজারার মতিন মিয়া বিবিসিএ’ সদস্যদের দৃঢ়তার প্রশংসা করেন। অর্গেনাইজিং সেক্রেটারি শাহরিয়ার আহমেদ সুমন আগামীতে আরো বড় পরিসরে আয়োজনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
কারি শিল্পের নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জারিয়া চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম নান্দনিক ডিনার আয়োজনের প্রশংসা করে বলেন, যুক্তরাজ্যের কারি ইন্ড্রাষ্ট্রির নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশিরা। এই শিল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশিরা ব্রিটেনের অর্থনীতিতে বিলিয়ন পাউন্ডের অবদান রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশেও বড় ধরণের অবদান রাখছে। রেমিটেন্স পাঠানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন দুর্যোগে যুক্তরাজ্যের প্রবাসীদের হাত বাড়িয়ে দেয়ার প্রশংসা করেন তিনি। নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে অতীতে একাধিক সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করে হাইকমিশনার বলেন, আলাপে কিং চার্লস তাঁকে বলেছেন যে তিনি কারি খুব পছন্দ করেন। কিং চার্লস এও জানেন যে, বাংলাদেশের বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের লোকজন এই কারি শিল্পে আধিপত্য বিস্তার করছে।
বিবিসি এশিয়ান নেটওয়ার্কের নাদিয়া আলী এবং শাহীন হোসেনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে মরহুম ইয়াফর আলীকে মরোনত্তর লাইফ টাইম এচিভমেন্ট এওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এছাড়া ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ডসের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত এনাম আলী, মরহুম মোঃ আব্দুল মোমেন ও মরহুম কামাল জাহাঙ্গির মিয়াকে দেয়া হয় মরনোত্তর লাইফটাইম কন্ট্রিব্রিউশন টু দ্যা ইন্ড্রাস্ট্রি এওয়ার্ড। মরহুমদের পক্ষে বন্ধু ও পরিবারের সদস্যরা তা গ্রহণ করেন। এছাড়া করোনাকালীন সময়ে কারি ইন্ডাস্ট্রির পাশে থাকার জন্য টক টিভি এবং চ্যানেল এস-কে বিবিসিএ মিডিয়া এওয়ার্ডস প্রদান করা হয়। টক টিভির পক্ষে এন্ড্রি ওয়াকার এবং চ্যানেল এস-এর পক্ষে এর ফাউন্ডার মাহি ফেরদৌস জলিল এওয়ার্ডস গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ক পারমিট ক্লাউডের ব্যারিস্টার লুতফুর রহমান।
এ আয়োজনে বিবিসিএ চ্যারিটি পার্টনার ছিলো ভিটি কুইন্স কমনওয়েলথ ট্রাস্ট। সবশেষে ছিলো আকর্ষণীয় র‌্যাফল ড্র। র‌্যাফল ড্র পরিচালনা করেন কাউন্সিলর আতাউর রহমান।
সাংস্কৃতিক পরিবশেনায় ছিলো নাচের দল তাল তরঙ্গ ও গেটসি গর্লস ড্যান্স গ্রুপ। সংগীত পরিবেশন করেন শারমিন দীপু ও বাংলাদেশ ক্লোজ আপ তারকা রানা খান। কৌতুকাভিনয়ে হাস্যরসে মাতান জনপ্রিয় ইউটিউবার স্ম্যাশ।
অনুষ্ঠানে প্লাটিনাম স্পন্সর ছিলো ওয়ার্ক পারমিট ক্লাউড। সাধারণ স্পন্সর হিসেবে সহযোগিতা করেছে ডেভেরট ইপোস সিস্টেম, কোবরা বিয়ার, কিং ফিশার বিয়ার, কায়সার এসোসিয়েটস, স্কয়ার মাইল ইন্স্যুরেন্স, কানসারাস আফটার কারি মিন্টস, দ্য গ্রান্ড রসুই।

You might also like