বীর মুক্তিযোদ্ধা আমান উদ্দিনের মৃত্যুতে শোকসভা
তিনি ছিলেন একজন সাহসী ও প্রতিবাদী মননের মানুষ
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডন, ২১ জুন: বীর মুক্তিযোদ্ধা আমান উদ্দিনের শোকসভায় বক্তারা বলেছেন, আমান উদ্দিন ছিলেন একজন সাহসী ও প্রতিবাদী মননের মানুষ। জাতির শোষণমুক্তি ছিল তার জীবন সংগ্রামের প্রধান আকাঙ্কা ও স্বপ্ন। একাত্তরে পাক হানাদার বাহিনির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিলেন জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক ন্যায়বিচার ও একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যে।
গত ২০ জুন পূর্ব লন্ডনের মাইক্রো বিজনেস সেন্টারে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যুক্তরাজ্য আয়োজিত শোকসভায় সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার জনাব গিয়াস উদ্দিন। বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীন সাংবাদিক আবু মুসা হাসানের পরিচালনায় শোকসভায় উপস্থিত ছিলেন বিলাত প্রবাসী বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা ও সুধীজন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আমান উদ্দিনের স্মৃতিতর্পন করে বক্তারা বলেন, তিনি ছিলেন একজন স্পষ্টভাষী ও ন্যায়পরায়ন ব্যক্তি। ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অবিচল–থাকা এ মহান পুরুষ ব্যক্তিজীবনেও লড়াই করেছেন দারিদ্রতার বিরুদ্ধে। সামাজিক ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন বন্ধুবৎসল ও অসাম্প্রদায়িক।
সভার শুরুতে ডা. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আমান উদ্দিনের জীবন বৃত্তান্ত পড়ে শোনান। এরপর তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা ও সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আবৃত্তিকার ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব উর্মি মাজহার কবি মহাদেব সাহার স্বাধীনতা নিয়ে লেখা বিখ্যাত কবিতা ‘মুক্তিযোদ্ধার ডায়েরী’ পাঠ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মাহমুদ হাসান এমবিই, আহবাব হোসেন চৌধুরী, লোকমান হোসেন, দেওয়ান গৌস সুলতান, যুক্তরাজ্য জাসদ সভাপতি হারুন রশিদ, আবদুল মন্নান, আবুল কাসেম, ফয়েজুর রহমান, আবদুর রহমান, গোলাম আলী সৈয়দ, ওয়ালি রহমান, মোহাম্মদ আবদুল হাদী ও প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আমান উদ্দিনের ভ্রাতুষ্পুত্র আফসর হোসেন এনামসহ আরো অনেকে। এছাড়া স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন, কবি শামীম আজাদ, টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক মেয়র সয়ফুল আলম, সাংবাদিক ও কবি হামিদ মোহাম্মদ, আমরাএকাত্তর সংগঠনের পক্ষে সত্যব্রত দাস স্বপন, সাংবাদিক মো. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, রাজনীতিক গয়াছুর রহমান গয়াছ, লেখক আবদুল আজিজ তকি, কবি মুজিবুল হক মনি, টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক স্পীকার আহবাব হোসেন, ওয়ালি রহমান, শিক্ষাবিদ ড. আবদুল হান্নান, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যুক্তরাজ্য সংসদের সাবেক সেক্রেটারি আমিনা আলী ও সংস্কৃতিকর্মী সুলতানা রশিদ জলি। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ এ রউফ, মো. মোস্তাক ও আশরাফ ভুইয়া মুকুল। কমিউনিটি নেতাদের মধ্যে ছিলেন, আবদুল বাছির, মো. নুরুল আমিন, কবির আহমদ, সাজাদুল আহমদ, আবদুস ছাত্তার, সংস্কৃতিকর্মী সৈয়দ এনামুল ইসলাম, সাংবাদিক নীলুফা ইয়াসমীন হাসান, আবদুল মুকিত, ফেরদৌস হালিম খান, মো. রেদওয়ান খান, ইসমাইল আহমেদ, সংস্কৃতিকর্মী লেনিন হক, ওয়ার্কাস ইউনিয়নের নেতা শাহরিয়ার বিন আলী, উদীচীর সেক্রেটারি জুবেরআক্তার সোহেল, শাহাব উদ্দিন, রাজনীতিক আনসার আহমেদ খান ও সাংবাদিক শাহ মোস্তাফিজুর রহমান বেলাল।
উল্লেখ্য, গত ৩রা জুন বীর মুক্তিযোদ্ধা আমান উদ্দিন সিলেট শহরের একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৮০ বছর। তাঁর নিবাস গোলাপগঞ্জ উপজেলার চন্দরপুরের বানিগাজীতে। তিনি প্রায় দুদশক আগে বিলাতে আসেন। বসবাস করেন পূর্ব লন্ডনে। লন্ডনে বাঙালি কমিউনিটির বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের সাথে প্রগতিশীল কাজে তিনি যুক্ত ছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আমান উদ্দিন একাত্তরে ৯ মাসব্যাপী রণাঙ্গনের যোদ্ধা ছাড়াও ‘গোলাপগঞ্জ মুক্ত করা’ যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।