বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব) গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যু, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন

মতিয়ার চৌধুরী
সত্যবাণী

লন্ডনঃ নাফেরার দেশে চলে গেলন জাতির শ্রেষ্ট সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) প্রাপ্ত গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী।গতকাল ১৩ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৫৫মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ‘‘সিএমএইচএ‘‘ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না…..লিল্লাহি……রাজিউন)। মৃত্যূকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। ১৪ ফেব্রুয়ারী সকাল আট ঘটিকায় ঢাকা সেনানিবাস এলাকার ইসিবি চত্তর মানিকদিস্থ তার নিজ বাসভবন চৌধুরী কুঞ্জে প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লাশবাহি এম্বুলেন্সে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের পুরাদিয়া (নূরগাঁও) গ্রামে সেখানে দ্বিতীয় দফা নামাজে জানাজা শেষে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পারিবারিক গোরস্থানে পিতা ইয়াজ উদ্দিন চৌধুরীর কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।

সেখানে নবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে তার কফিনে ফুল দিয়ে সম্মাননা জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী (সেলিম)। উপজেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেয়া হয় রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। জনাব গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন, ১৯৫৭ সালে প্রথম প্রমোশন লাভ করেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা ক্যানটনমেন্টে সিগন্যাল কোরে কর্মরত অবস্থায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি পাঁচ নং সেক্টরের একজন সাবসেক্টর কমান্ডার হিসেবে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। তিনি বেশ কয়েকটি সম্মুখ সমরে অংশ নেন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সুনামগঞ্জের বেরীগাঁও অপারেশন ও খাংলার হাওরের যুদ্ধ । এই সম্মুখ যুদ্ধে কয়েকশ পাক সেনা ও রাজাকার নিহত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের নয়মাস ব্যাপী বালাট সাব সেক্টরের অধিকাংশ এলাকাই ছিল মুক্তাঞ্চল। তাদের প্রতিরোধের কারণে পাকবাহিনী এই অঞ্চলে ঠিকে থাকতে পারেনি। যুদ্ধকালীন সময় দেশের অভ্যন্তরে তামাবিল ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত এলাকায় তিনি মুক্তিযুদ্ধাদের প্রশিক্ষন দিতেন। তার অধীনে দেশের অনেক নামীদামি ব্যক্তিরা যুদ্ধ করেছেন এর মধ্যে রয়েছেন দেওয়ান ওবায়দুর রাজা চৌধুরী ও বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ প্রমুখ।মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তার আরেকটি পরিচয় ছিল জয়বাংলা। উঠতে বসতে বা কোন সামরিক অফিসারকে সম্মান জানাতে মুখে উচ্চারন করতেন জয় বাংলা। তার সম্মানার্থে তাহিরপুর সীমান্তে একটি বাজার প্রতিষ্টা করেন এলাকাবাসী বাজারটির নাম দেন জয়বাংলা বাজার। তিনি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবর গ্রহন করেন। অবসর কালীন সময় তিনি একাধিক সামাজিক ও জনহিতকর কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। ডিফেন্স এক্স-সোলজার্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটি (ডেসওয়াস) এর সম্মানিত উপদেষ্টা ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি এক পুত্র দুই কন্যা নাতি-নাতনি সহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন। মরহুমের মাগফেরাতের জন্য সকলের দোয়া চেয়েছেন লন্ডনে বসবাসরত তার চাচাত ভাই সাংবাদিক মতিয়ার চৌধুরী ও ভাতিজা আক্তার হোসেন চৌধুরী।

You might also like