ব্রিটিশ-বাংলাদেশী গণমাধ্যমকর্মীদের বার্ষিক আনন্দ ভ্রমণ
সারওয়ার-ই আলম
অতিথি লেখক, সত্যবাণী
লন্ডন: তীব্র তাপদাহের পূর্বাভাস সেদিন সমুদ্র বিলাস থেকে নিরস্ত করতে পারেনি ব্রিটিশ বাংলাদেশী গণমাধ্যমকর্মীদেরকে। দিনব্যাপী প্রচণ্ড উত্তাপের আশংকাকে উপেক্ষা করে ১৪ই আগস্ট রবিবার দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের নয়নাভিরাম ক্ল্যাকটন অন সী সৈকতের দখল নেন তারা। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে ইচ্ছেমত দাপাদাপি করে, একে অপরের দিকে জল ছুঁড়ে অনাবিল আনন্দে মেতে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সদস্যবৃন্দ তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে উপভোগ করেন বার্ষিক আনন্দ ভ্রমণ।
ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল সাড়ে ন’টা। গ্রীষ্মের গনগনে সূর্য ধীরে ধীরে তার উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। চারদিকে রোদেলা দিনের হাতছানি। পূর্ব লণ্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত হোয়াইট চ্যাপেল এলাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জড়ো হতে থাকেন লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সদস্যবৃন্দ। গরমে স্বস্তির কথা বিবেচনা করে নারী-পুরুষ সকলেই বেছে নেন হালকা ও আরামদায়ক পরিধেয়। চারদিকে ছিল রঙ-বেরঙের টিশার্ট আর চোখে চোখে সানগ্লাসের বাহার।
সকাল সাড়ে দশটায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দুটি বাসে চড়ে প্রায় দেড়শ’ জনের বহর নিয়ে সমুদ্রের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু হয়। গন্তব্য লন্ডন থেকে ৭৫ মাইল দূরের ক্ল্যাকটন অন সী’র বিস্তীর্ণ সৈকত।
বাস দুটির যাত্রীদেরকে ততক্ষণে সমুদ্র বিলাসের দারুণ উত্তেজনা পেয়ে বসেছে। একেবারে হৈ হৈ রৈ রৈ অবস্থা। এক নম্বর বাসের সার্বিক তত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ ও অনুষ্ঠান সম্পাদক রেজাউল করিম মৃধা। তাদের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় কবিতা, গান ও কৌতুক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে হাস্যরসে মেতে ওঠেন সহকর্মীবৃন্দ। অনেকটা যেমন খুশী তেমন গাও অবস্থা। যাত্রাপথের ক্লান্তি ভোলাতে সদস্যবৃন্দ ও তাদের স্ত্রী-সন্তানদের অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত হয় কবিতা, গান ও কৌতুক প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় তিনটি শাখায় স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশগ্রহন করে সবাইকে আনন্দে মাতান সৈয়দ আনাস পাশা, ফেরদৌসী পাশা কলি, তাইসির মাহমুদ, রেজাউল করিম মৃধা, আহমেদ শামীম, শেলী আহমেদ, মোস্তফা জামান নিপুণ, খিজির হায়াত খান কাওসার, রুমি হক, আলাউর খান শাহীন, মাহবুব আলী খানসুর, সাহারা খানসুর, খাদিজা, সায়ান ও আরাফাত রহমান শুভ প্রমুখ। কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে পুরস্কার জিতে নেন মোস্তফা জামান নিপুণ, গানে রুমি হক, কৌতুকে তাইসির মাহমুদ।
দ্বিতীয় বাসটিতে সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করেন ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ সালেহ আহমেদ ও কার্যনির্বাহী সদস্য আহাদ চৌধুরী বাবু। তাদের সাবলীল সঞ্চালনায় আগ্রহীরা কবিতা, গান ও কৌতুক পরিবেশন করে আনন্দ ও মু্গ্ধতা ছড়ান। কবিতা পাঠ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন কবি শাহনাজ সুলতানা, কৌতুকে শামসুল তালুকদার , গানে হাসান শোয়াইব খান অনন্ত।
দু’ঘণ্টার যাত্রা শেষে বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ সৈকতে পৌঁছানোর পর পরিবেশন করা হয় সুস্বাদু দুপুরের খাবার। খাবার পর্ব শেষে আনন্দ ভ্রমণের স্মৃতি ধরে রাখতে গ্রহন করা হয় দলীয় আলোকচিত্র। আলোকচিত্রী শেখ মহিতুর রহমান বাবলু ও চৌধুরী মুরাদ ঘুরে ঘুরে আনন্দ ভ্রমণের স্মৃতিকে ক্যামেরায় ধারণ করেন।
বেলা সাড়ে তিনটায় নির্ধারিত ছিল সব বয়েসীদের জন্য নানা রকম প্রতিযোগিতার। তার আগের কয়েকঘণ্টা সমুদ্র সরোবরে অবগাহনের ঘোষণা দেয়া হলে পোষাক বদল করে সকলে ছুটতে থাকেন ঢেউয়ের টানে। সময়টা ছিল দারুণ অনুকূলে। জোয়ারের সময় বলে চারদিকে জল থৈ থৈ অবস্থা। শোঁ শোঁ শব্দে দূর থেকে ধেয়ে আসা উন্মাতাল উর্মিমালায় দল বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়েন আকবর হোসেন, ব্যারিষ্টার তারেক চৌধুরী, সালেহ আহমেদ, আহাদ চৌধুরী বাবু, আব্দুল কাইয়ুম, আলাউর খান শাহীন, আহমেদ শামীম, হেফাজুল করিম রাকীব, সৈয়দ আনাস পাশা, মাহবুব আলি খানসুর, চৌধুরী মুরাদ, রিয়াজ, আবদুল হান্নান, শামসুল তালুকদার, এ রহিম, আনোয়ার শাহজাহান, তবারুকুল ইসলাম প্রমুখ। প্রাণখুলে সাঁতার কাটেন তারা। মনের আনন্দে দাপাদাপি করেন। এ সময় সমুদ্রতটে আবক্ষ বালিতে ঢেকে বিবিসি বাংলার সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেনের রৌদ্র স্নান সকলের কৌতূহলী দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
বেলা সাড়ে তিনটায় শুরু হয় সব বয়েসীর জন্য খেলা। বড়দের পর্বে দড়ি টানাটানি প্রতিযোগিতার এক পর্যায়ে দড়ি ছিঁড়ে গেলে উপস্থিত সকলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন। অগত্যা দুই পক্ষকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নারীদের জন্য ছিল হাড়িভাঙ্গা প্রতিযোগিতা। এ পর্বে শুরুতে হাড়িভাঙ্গার পরিবর্তে লাঠিই ভেঙ্গে যায়। আয়োজকেরা লাঠি ভাঙ্গার সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে আরেকটি লাঠির ব্যবস্থা রাখাতে প্রতিযোগিতা যথা নিয়মে সম্পন্ন হয়। চোখ বাঁধা অবস্থায় হাড়িভেঙ্গে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে পুরস্কার জিতে নেন যথাক্রমে মিসেস হান্নান, মিসেস হামিদা ও পলি রহমান। ছোটদের লজেন্স দৌড় প্রতিযোগিতা শিশুদের মধ্যে ব্যাপক আনন্দের সঞ্চার করে। বিপুল উৎসাহে তারা এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে। এ পর্বে দৌড়ে গিয়ে মুখ দিয়ে রশি থেকে ঝুলন্ত লজেন্স ছাড়িয়ে নিয়ে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার জিতে নেয় যথাক্রমে সাহির আলম, মাহাদি জাহারা ও জায়াদ। শিশুদের মার্বেল দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে পুরস্কার জিতে নেয় যথাক্রমে মোসাদ্দেক, খাদিজা ও সিয়াম। টেনিস বল নিক্ষেপ প্রতিযোগিতায় যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে পুরস্কার জিতে নেয় খাদিজা, জিব্রাইল ও লিবান।
পুরুষ সদস্যদের জন্য ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’ প্রতিযোগিতার আয়োজনের চিন্তা থাকলেও সীমাবদ্ধতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। আয়োজন করা হয় অনুরূপ বল হস্তান্তর প্রতিযোগিতা। এ আয়োজন সকলে উপভোগ করেন। তাইসির মাহমুদ বাঁশি বাজিয়ে এ পর্ব পরিচালনা করেন। প্রতিযোগিতা শেষে ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। রাত সাড়ে সাতটায় একটি আনন্দমুখর আনন্দ ভ্রমণের আমেজ নিয়ে বাড়ী ফেরেন ক্লাবের সদস্যবৃন্দ।
ভিডিও: ⬇️