ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথ গবেষনা করবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের সাথে যৌথ গবেষনা শুরু করতে যাচ্ছে ভারতের ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এই বিশ্ববিদ্যালয়টির বাংলাদেশ সফররত মাননীয় উপাচার্য্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। উল্লেখ্য তিন দিনের সফরে বাংলাদেশ এসেছিলেন ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য্য অধ্যাপক গঙ্গা প্রসাদ প্রাসেইনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। অন্যন্যের মধ্যে এই প্রতিনিধি দলে অর্ন্তভূক্ত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক শ্যামল দাস, রুরাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক জয়ন্ত রায়, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আশিষ নাগ এবং ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক সমির কুমার শীল। সফরকালে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথেও একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন প্রতিনিধি দলটি।
সফররত ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দলটির সন্মানে ঢাকা ক্লাবে একটি রিসিপসনের আয়োজন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের ডিভিশন প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, মাননীয় সাংসদ এ্যারোমা দত্ত এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দসহ বিশিষ্টজনেরা।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলকে উত্তরীয় পড়িয়ে সন্মানীত করেন অধ্যাপক গঙ্গা প্রসাদ প্রাসেইন। অধ্যাপক প্রাসেইন তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন এবং ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওলজি বিভাগের মধ্যে সামনে যে যৌথ গবেষনা কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে তা চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রসারে এবং পাশাপাশি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষনা সহযোগীতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হারবাল ওষুধসমূহের লিভার রোগে কার্যকারিতা সংক্রান্ত যৌথ গবেষনা পরিচালনা করতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন এবং ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওলজি বিভাগ। আগামী বছর থেকে এই গবেষনা সমূহের ফলাফল আসতে শুরু করলে তা বাংলাদেশের আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের হৃত গৌরব পূনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
উল্লেখ্য গত বছরের ৭ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এক আদেশবলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর প্রতিষ্ঠাতা ডিভিশন প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই লিভার রোগীদের জন্য আধুনিক চিকিৎসা প্রচলনের পাশাপাশি লিভার বিষয়ক গবেষনা প্রসারে ডিভিশনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। এরই মধ্যে ডিভিশনটিতে লিভার ফেইলিওরের চিকিৎসায় লিভার ডায়ালাইসিস ও প্লাজমা এক্সচেঞ্জ, লিভার সিরোসিস রোগীদের জন্য অটোলোগাস হেমোপয়েটিক স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন, লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসায় ট্রান্সআর্টারিয়াল কেমোএম্বোলাইজেশন এবং পিত্তনালীর রোগ নির্নয়ে স্পাই গ্লাস কোলাঞ্জিওস্কোপি শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন শহরে ডিভিশনটির ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের সহযোগিতায় অটোলোগাস হেমোপয়েটিক স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন এবং ট্রান্সআর্টারিয়াল কেমোএম্বোলাইজেশনের মত আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি চালু করা সম্ভব হয়েছে।
এ বছরের ৭ জুলাই ডিভিশনটির প্রথম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বাণী প্রদান করেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিভিশনটির উদ্যোগে স্পাই গ্লাস কোলাঞ্জিওস্কোপি ও ট্রান্সআর্টারিয়াল কেমোএম্বোলাইজেশন লাইভ ডেমন্সট্রেশনের ব্যবস্থা করা হয়।
পাশাপাশি চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষনায় জোড় দেয়া হচ্ছে ডিভিশনটিতে। এরই মধ্যে ডিভিশনটিতে চালু করা হয়েছে বাংলাদেশে যৌথভাবে উদ্ভাবিত হেপাটাইটিস বি’র ইমিউনথেরাপী ন্যাসভ্যাকের আরো একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়েল। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের সাথে ডিভিশনটির বেশ কয়েকটি গবেষনা প্রকল্প চলমান আছে। বাংলাদেশে উদ্ভাবিত বাংলাদেশের নিজস্ব কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ‘বঙ্গভ্যাক্সের’ ফেইজ-১ হিউম্যান ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালটিও সামনে এই ডিভিশনেই শুরু হতে যাচ্ছে। বানর এবং মানুষের শরীরে বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যিাল ট্রায়ালগুলোর প্রধান গবেষক হিসেবে আছেন ডিভিশনটির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।