মাতাল বাঁশি

 হামিদ মোহাম্মদ

(সাহিত্যের বহু শাখায় বিচরণ হামিদ মোহাম্মদ-এর। কবিতা,গল্প, উপন্যাস এমনকি মননশীল সাহিত্য কোনটাই বাদ যায়নি। লিখেন সমান সৃজনশীলতা নিয়ে, সমান উজ্জ্বলতায়। সত্যবাণী প্রতি রোববার ধারাবাহিক প্রকাশ করবে তাঁর লেখা উপন্যাস ‘মাতাল বাঁশি’। সাম্প্রতিক নানা বিষয় থেকে শুরু করে ধর্মীয় মৌলবাদী উত্থান, প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলন, চিকিৎসাবাণিজ্য, বাঙালি, বাংলাদেশ এবং বিলেতের অভিবাসী প্রেক্ষিত—সব একসুত্রে গেঁথেছেন লেখক। পাঠক পড়তে থাকুন,আমরা আছি আপনাদের সঙ্গে।)

॥নয়॥

বাংলাদেশে একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের হোতাদের ২০১০ সালে বিচার যখন শুরু হয়, তখন স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রচণ্ড দাপট। বিচার কাজকে বাধাগ্রস্ত করতে দেশকে টালমাটাল করে তোলে জ্বালাও-পোড়াও লাগাতার আন্দোলনে তারা। প্রচার করা হয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ইসলামিক স্কলারদের নিশ্চিহ্ন করতে সরকার বিচারের নামে ফন্দিফিকির করছে।
প্রচণ্ড এই মিথ্যা প্রচারণার সময়েই জঘন্য অপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় না হয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দান করে আদালত। কিন্তু তরুণ সমাজ প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে। ফাঁসির দাবীতে জেগে ওঠে সমগ্র বাংলাদেশ। ‘গণজাগরণ মঞ্চ‘ নামে একটি ব্যানারে ঢাকার শাহবাগে ফাঁসির দাবীতে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে তরুণরা। স্থানটির নামও দেয়া হয় ‘প্রজন্ম চত্বর‘। নতুন প্রজন্মের একটানা এ অবস্থান ধর্মঘট অল্পদিনেই রূপ নেয় জনসমুদ্রে। সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়ে এ আন্দোলন। উপজেলা পর্যায়েও গণজাগরণ মঞ্চ কর্মসূচী সম্প্রসারিত হয়। এই আন্দোলনের ঢেউ দেশে থেমে থাকেনি। বিদেশেও যেখানে বাঙালিরা আছে সেখানে আছড়ে পড়ে। বিলেতে বিভিন্ন শহরে গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ। লন্ডনে গণজাগরণ মঞ্চ গঠনে এগিয়ে আসে এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী। এর আগে থেকেই লন্ডনে উদীচী, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ অনেক সংগঠন প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক কাজে যুক্ত রয়েছে। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও সংহতি সাহিত্য পরিষদ প্রগতিবাদী সাংস্কৃতিক কাজে নিয়মিত কর্মোদীপ্ত থাকলেও গণজাগরণ মঞ্চ নতুন উদ্দীপনা নিয়ে আসে। আরও আছে সাংস্কৃতিক সংগঠন সৌধ। সৌধের মাধ্যমে কবি টি এম আহমেদ কায়সার বাংলা পোয়েট্রি এন্ড ইন্ডিয়ান মিউজিক নিয়ে কাজ করছেন। রাধারমণ, শাহ আবদুল করিম, পঞ্চকবির গানের উৎসবের আয়োজন করছেন প্রতিবছর। বাংলা গানের ধ্রুপদী ধারাকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে এ সংগঠন ক্রিয়াশীল। সংস্কৃতিকর্মী লিসা গাজী ‘কমলা কালেক্টিভ‘ নামক প্রতিষ্ঠান থেকে মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনা নারীদের নিয়ে ডকুমেন্টারি নির্মাণ করে আর্ন্তজাতিক মহলে নাড়া দিয়েছেন। সাংবাদিক সৈয়দ আনাস পাশার স্ক্রীপ্ট ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ও মইনুল ইসলাম মুকুলের পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মিত ‘বিজয়ের মহানায়ক‘ ডকুমেন্টারিও ব্যাপক সাড়া জাগায় আন্দোলনকারীদের মধ্যে।
অব্যাহত এই ধারার পাশাপাশি গণজাগরণ মঞ্চের সৃষ্টি হয় লন্ডনে। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির ঢাকার শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের আদলে পরের দিনই পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে শুরু হয় প্রতিবাদী জমায়েত। ঝড়ের বেগে একদল সংস্কৃতিকর্মী ছুটে আসেন আলতাব আলী পার্কে। হাতে প্রতিবাদী নানান ব্যানার, ফ্যাস্টুন। মুখে ‘কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই‘ আওয়াজ।
আমার মা এবং বাবাও ছুটে যান আলতাব আলী পার্কে। আন্দোলনে নামেন আটগাট বেঁধেই। আমি তখন বাংলাদেশে হাসপাতাল চালাতে ব্যস্ত। তাই, এ সম্পর্কিত লন্ডনে অনুষ্ঠিত হওয়া নানা কর্মসূচীর তথ্য আমাকে নিয়মিত সরবরাহ করেন আমার মা। খবরগুলো আমাকে রীতিমত শিহরিত করে, আমি আন্দোলিত হই।
মা’র নিকট থেকে শোনা তথ্যগুলোর মধ্যে শিহরিত হওয়ার মত নানা তথ্য পেতে থাকি। মা তিনিও প্রথম সারির সংগঠক, সে সুবাদে বেশি করেই পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর পাই। তার কাছ থেকে বিস্ময়ের সাথে শুনেছি, মুর্হূমুর্হূর শ্লোগানে সমাবেশকে তেজদীপ্ত রাখে অজান্তা দেব রায়। সবার দৃষ্টি কাড়ে সে। কী যে অনন্য ভূমিকা তার। সকলেরই চোখে পড়ে সে। তার দৃপ্ততা ও সাহসী শ্লোগানে বাংলাদেশের ‘শ্লোগানকন্যা’ লাকী আখতারের মত।
যুক্তরাজ্য গণজাগরণ মঞ্চ প্রথমেই ঢাকার গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচীর প্রতি সংহতি জানিয়ে কর্মসূচী নেয়। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবীতে পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে প্রথম সমাবেশ ছিল এটি। দিনটি ছিলো শুক্রবার। আলতাব আলী পার্কের কাছেই একটি মসজিদ। মসজিদে জুমার নামাজের পর জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বেনামে আলতাব আলী পার্কে গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশে হামলা চায়। সাধারণ মুসল্লিদেরও তারা ফুসলিয়ে শরিক করে। এ ন্যাক্কারজনক হামলায় না বুঝেও অনেকে হামলে পড়ে। কিন্তু বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটতে দেয়নি ব্রিটিশ পুলিশ। সামলিয়ে নেয় সব।
জামায়াত শিবিরের এ আক্রমণের খবরে বিলেতবাসীরা আরো ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। গণজাগরণ মঞ্চকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন জানান এবং বিভিন্ন প্রতিবাদী অনুষ্ঠানে যোগদান করেন সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী। চলমান কর্মসূচীতে সমর্থন জানান ও লেখালেখি করেন বিলেতের বিভিন্ন শহরে বসবাসরত কবি লেখক ও সাংবাদিকরা। অন্যান্য শহরেও প্রতিবাদী সমাবেশ আয়োজন চলতে থাকে।
যুক্তরাজ্য গণজাগরণ মঞ্চ প্রায় নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচী পালন শুরু করলে আরও ব্যাপক হারে তরুণ সমাজ যুক্ত হতে থাকে। লন্ডনে গড়ে ওঠা এ আন্দোলনে অল্পদিনেই যুক্ত হন হাজারখানেক একটিভিস্ট, সংস্কৃতিকর্মী ও শিল্পীসাহিত্যিক সাংবাদিক।
দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর রায়ের একদিন আগ থেকেই একইভাবে এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী গণজাগরণ মঞ্চ-এর ব্যানারে আলতাব আলী পার্কে কর্মসূচী পালন শুরু করে। সেমিনার, সভা ও জাগরণমূলক গণসাংস্কৃতিক কর্মসূচী নেয় উদীচী ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রসহ সমমনা সংগঠনসমূহ। পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টার, মন্টিফিউরি সেন্টার, টয়েনবি হলসহ বিভিন্ন হলে লাগাতার কর্মসুচী পালিত হয়। এছাড়া ১০ নং ডাউনিংস্ট্রিট, ট্রাফালগার স্কয়ার, পার্লামেন্ট স্কয়ারে মানববন্ধন এবং ব্রিটিশ এমপিদের সাথে লবিং করে আর্ন্তজাতিক সমর্থন লাভে তৎপর থাকে সংস্কৃতিকর্মীরা। এতে প্রতিটি কর্মসূচীতে যোগ দেয় প্রবাসী সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। বিলেতে আমাদের এসব কাজের মধ্যে আরেকটি অভিজ্ঞতা হয়। আমরা দেখতে পাই বিলেতের আন্দোলনে ভিন্ন চিত্রও।
বিলেত হল, মত-প্রকাশের মুক্ত জায়গা। তাই জামায়াতীরাও সমান সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে থাকে। সরকার থেকে কোন বাঁধা নেই। জামায়াতিরা শুধু সুযোগ সুবিধা লাভ নয়, দেখে-শুনে মনে হচ্ছেÑজামায়াতীরা বরং ব্রিটিশদের বুঝাতে যেন সক্ষম হয়েছে যে, বাংলাদেশে ইসলামী স্কলারদের ধরে ধরে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে। এমনকি জামায়াতী ও বিএনপির কর্মীরাও ব্রিটেনে এসাইলাম সুবিধা বেশি পাচ্ছে। তারা দেখাচ্ছেÑবাংলাদেশে নিগৃহিত হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে তা মেনে নিচ্ছে না পুরোপুরি।
আমরা জানি, একাত্তর সালেও ব্রিটিশ সরকারের ভূমিকা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল না। যদিও ব্রিটিশ জনগণ মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে সর্বাধিক। ব্রিটেনের বড় রাজনৈতিক দল লেবার পার্টি মুক্তিযুদ্ধে অব্যাহত সমর্থন ছাড়াও বিশ্বজনমত সৃষ্টিতে অনন্য ভুমিকা রেখেছিল। বর্তমানেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় সমর্থন ও আর্ন্তজাতিক সমর্থন আদায়ে সোচ্চার রয়েছে এ দলটি। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কনজার্ভেটিভ পার্টি ছিল ক্ষমতায়, এখনো কনজার্ভেটিভ পার্টির সরকার। সুতরাং তাদের সুর একই। তাই নানা প্রপাগাণ্ডায় এরা কান দিচ্ছে। তবুও বাঙালিরা থেমে নেই। সক্রিয় রয়েছে একাত্তরের মতো আন্দোলন সংগ্রামে।
বাংলাদেশ এবং বাঙালি এক সংকটাপন্ন পরিস্থিতির সম্মুখীন এখন। এ সংকট ও ক্রান্তিকালের ভাষা হলÑবাংলাদেশকে একাত্তরের সংঘটিত অপরাধের পাপমুক্ত করা সময়ের দাবী। তা করতে না পারলে যেভাবে মৌলবাদের উত্থান হচ্ছে, দেশ হাজার বছরের ধর্মনিরেপক্ষতার গৌরব থেকে বিচ্যুত হবে।
অসামাপ্রদায়িক চেতনাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল উপাদান ও শক্তি। এই চেতনাকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। এ লক্ষ্যে, মৌলবাদের এই উত্থানকে ঠেকাতে দেশে বিদেশে শত বিপত্তি সত্বেও তরুণ সমাজ কাজ করছে–দুর্বার শক্তি নিয়ে। কাজ করছে মাঠে ময়দানে, লেখনিতে, শিল্প সাধনায়।
একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধের বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল নায়ক চৌধুরী মঈনুদ্দিন বাস করে লন্ডনে। সে বর্তমানে ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী। ট্রাইবুনালের রায়ে চৌধুরী মঈনুদ্দিন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছে। সবচেয়ে হাস্যকর ব্যাপার– ব্রিটিশ সরকার তাকে বাংলাদেশে ফেরত দিচ্ছে না। বরং তাকে সুরক্ষা দিচ্ছে। তারা নাকি ফাঁসি সমর্থন করে না। অথচ সাদ্দাম ও গাদ্দাফীকে ফাঁসি দিল কে? প্রশ্ন আসতেই পারে, কোন ধরনের অপরাধে ফাঁসি দেয়া হল? মোড়লিপনা কাকে বলে! এসব মোড়লিপনাকে ঠেকাতে অবিরাম যুদ্ধ করতে হচ্ছে এখানে বাঙালির। বিরুদ্ধ¯স্রোতে এই ব্রিটেনেও যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবীতে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতিকর্মীদের। এটাই নির্মম সত্য ?
অন্যদিকে, বিলেতে বাঙালি সমাজ নানাভাবে নানা ঝুঁকিতে রয়েছে। সিলেটের গ্রাম অঞ্চল থেকে আসা পরিবারগুলোতে নানা পশ্চাদপদতা বিরাজমান। পশ্চাদপদতাকে পুঁজি করে ধান্ধাবাজ কেউ কেউ বিভিন্ন চ্যারিটি সংস্থা খুলে বসেছে। এই পশ্চাদপদ পরিবারগুলোর মেয়েরা প্রকৃত শিক্ষার অভাবে বেশিরভাগই হাইপারটেনশনগ্রস্ত, এটা বিভিন্ন জরিপের মতামত। এরা বালা-মুসিবত থেকে মুক্তির আশায় অনেক কষ্টে জমানো টাকা পয়সা চ্যারিটিতে দান করে দেদারছে। লুকিয়ে, কোন কোন সময় প্রকাশ্যেÑদান খয়রাত করতে দ্বিধা করে না এরা। এই ফাঁকে, আবার একটি গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে ধর্মীয় মৌলবাদকে আকড়ে ধরে। জঙ্গী হয়ে ওঠেছে ছেলেমেয়েরা। হিজাব নেকাব পরে। সিরিয়ায়ও যাচ্ছে জেহাদে। আইএস আইএস-এর পক্ষে জেহাদ করে বেহেশত খুঁজছে রীতিমত। অনেক তরুণীরা যাচ্ছে স্বেচ্ছাযৌনদাসী হতে। এতে বেহেশতে যাওয়া নাকি সহজ। এ পর্যন্ত দশবারো জন সিরিয়ায় চলে গেছে ব্রিটিশ সরকারের কড়া নজরদারি এড়িয়ে। কয়েকজন নিহতও হয়েছে যুদ্ধে।
বিলেতে বাঙালিরা এই কঠিন সময় অতিক্রান্ত করছে। না-ঘরকা, না-ঘাটকা। হারাতে বসেছে নিজেদের অস্তিত্ব। বাঙালি পরিচয় বাদ দিয়ে মুসলিম পরিচয়ে স্বচ্ছন্দ্যবোধ করে অনেকে। ইংলিশরাও অনেক সময় পরিচয় জানতে জিজ্ঞেস করেÑআর ইউ মুসলিম? আগে এক সময় জিজ্ঞেস করতো ইÐিয়ান অর বাঙালি? এখন সোজা মুসলিম পরিচয়। বাঙালিরাও ছুটছে এভাবে। এমতাবস্থায় মুসলিম আইডিন্টিটি খুঁজতে অভ্যস্ত হচ্ছে বা হয়ে পড়ছে। আরও সমস্যা হল, কোন বাঙালি পাকিস্তানি বা ভারতীয়ের সাথে কথা বলতে বাংলাভাষা তো দূরের কথা ইংলিশ জেনেও উর্দু বা হিন্দিতে কথা বলা শুরু করে বা স্বচ্ছন্দ্যবোধ করে। ওরাও তাদের ভাষায় চুটিয়ে কথা বলেই চলে। অথচ উর্দু বা হিন্দি ভাষার কোন এথনিসিটি নেই। অর্থাৎ নৃতাত্তি¡ক পরিচয় বা জাতিগত ভাষা নয়। এ দু’টি ভাষাই বিদেশী শাসকদের তৈরি। অথচ, বাংলাভাষার কয়েক হাজার বছরের নৃ-তাত্তি¡ক পরিচয় রয়েছে। এমনকি বাংলাভাষা জাতিসংঘের হিশেব অনুযায়ী ছয় নম্বর ভাষা। ত্রিশ কোটির ওপরে লোকে কথা বলে বাংলায়। তবুও বিলেতে বাঙালিদের একটি বড় অংশ অজ্ঞতার কারণেই বাংলাকে হেয় করে ফেলেন। অন্যদিকে, বিলেতে জন্ম নেয়া বাঙালির নতুন প্রজন্ম বাংলা তো জানেই না। জানা সম্ভবও নয়। আশঙ্কার কথা হল–যদি, মাইগ্রেণ্ট প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় তবে বাংলাভাষা বিলেতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। যেভাবে মাইগ্রেন্ট প্রবাহকে বন্ধ করে দিতে ব্রিটিশ সরকার মরিয়া হইয়া ওঠেছে, অদূর ভবিষ্যতে বাঙালিদের বাংলাভাষা নিয়ে গর্ব করা নয়, অনেক ভয়ের কারণও রয়েছে। (চলবে)

You might also like