মাধবপুরে গড়ে উঠেছে অবৈধ সীসা তৈরির কারখানা

সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ হবিগঞ্জের মাধবপুরে একটি অবৈধ কারখানায় পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা তৈরি করা হচ্ছে। উপজেলার ছাতিয়াইন ইউনিয়নের ছাতিয়াইন-বাঘাসুরা রাস্তার পাশে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কারখানাটির অবস্থান। কারখানার ব্যাটারির অ্যাসিডের উৎকট গন্ধে স্থানীয় লোকজন অতিষ্ঠ। এ ছাড়া কারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ এবং কালো ধোঁয়া পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এমএএইচ ইশতাক মামুন বলেন, ‘ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা তৈরির ধোঁয়া মানবদেহে প্রবেশ করলে মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে ক্যানসার, মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিসহ নানা সমস্যা হতে পারে। এমনকি মানসিক বিকৃতি ও রক্তশূন্যতাও হতে পারে। প্রভাব পড়তে পারে লিভার ও কিডনিতেও।’
মাধবপুর থেকে সংবাদদাতা জানান, ছাতিয়াইন-বাঘাসুরা রাস্তার পাশে ছাকুচাইল ও পিয়াম গ্রামের মধ্যে পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা তৈরির কারখানাটি গড়ে উঠেছে। ১৫-২০ জন শ্রমিক ও কর্মচারি পুরোনো ব্যাটারি ভেঙে প্লেট আলাদা করছে। কারখানার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে পরিত্যক্ত ব্যাটারির বর্জ্য-প্লাস্টিক, কার্বন ও ক্ষতিকারক বিভিন্ন ধরণের পদার্থ। শ্রমিকদের কাজের জন্য নেই কোনো নিরাপত্তা সরঞ্জামও। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড, ট্রেড লাইসেন্স, কলকারখানা অধিদপ্তরের অনুমতি, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা তৈরির নিরাপদ চুল্লিও নেই।
কারখানায় কর্মী জমির আলী নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘এখানে অধিকাংশ শ্রমিকের বাড়ি উত্তরবঙ্গে। দিনের বেলায় ব্যাটারি ভাঙা হয়, রাতে পুড়িয়ে সীসা তৈরি করা হয়। আর ব্যাটারি পোড়ানোর কোনো চুল্লি নেই, তাই উন্মুক্ত স্থানেই পোড়ানো হয়। কারখানার মালিকের নাম জাবেদ মিয়া। আমি এর বেশি কিছু আর জানি না। বিস্তারিত জানতে মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’
জাবেদ মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কারখানায় পুরোনো ব্যাটারি ভেঙে ভেতরের অংশগুলো আলাদা করে বিক্রি করি। এসব করতে কোনো অনুমতির প্রয়োজন হয় না।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল খায়ের বলেন, ‘কারখানার মালিক জাবেদ মিয়ার বাড়ি পাশের ছাতিয়াইন গ্রামে। ব্যক্তিগতভাবে তাকে অনুরোধ করেছি এটা বন্ধ করার জন্য। কিন্তু তিনি বন্ধ করছেন না। প্রতিদিন রাত ১২টার দিকে ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা তৈরি করে। এ সময় এলাকাবাসীর শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়। এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছে।’
এলাকাবাসীর অভিযোগ ‘প্রায় ৬ মাস ধরে রাতে ব্যাটারি পোড়াচ্ছে। সে সময় গন্ধে ঘরে থাকা যায় না। এ ছাড়া পোড়ানোর স্থানে কোনো ছাউনি না থাকায় বৃষ্টির পানির সঙ্গে বিষাক্ত বর্জ্য পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। পাশেই ফসলি জমি রয়েছে। এতে জমি ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।’
ছাতিয়াইন  ইউনিয়ন পরিষদের সচিব জগদীশ চন্দ্র দাশ জানান, এ কারখানার কোনো ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয়নি। ট্রেড লাইসেন্স নেয়ার জন্য চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘দেশের সর্বত্রই এমন কারখানা রয়েছে। তারা বিদ্যমান পরিবেশ আইন মানছে না। জনস্বাস্থ্য, প্রাণবৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্র তছনছ করে দিচ্ছে। এসব অবৈধ ব্যাটারি কারখানার মাধ্যমে মানুষসহ প্রাণীর শরীরে ঢুকছে সীসার বিষ, প্রতিবেশ ব্যবস্থায় ঘটছে গোলমাল। সব ব্যাটারি কারখানাই গড়ে উঠেছে বসতি এলাকায়। এ ব্যাপারে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’
সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এমরান আহমেদ বলেন, ‘অবৈধ কারখানার বিষয়ে অবগত নই। তবে এভাবে প্রকাশ্যে ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা তৈরি করলে বায়ুদূষণ ও আশপাশে বসবাসরত প্রাণীর মারাত্মক ক্ষতি হয়। যত দ্রুত সম্ভব এই অবৈধ কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মাধবপুরের ইউএনও মনজুর আহসান বলেন, ‘বিষয়টি জানা নাই। খোঁজ নিয়ে অবৈধ কারখানা উচ্ছেদে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

You might also like