লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের বিজয় দিবস উদযাপন
সারওয়ার-ই আলম
সত্যবাণী
লন্ডন: মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব গত ১৭ই ডিসেম্বর রৰিবার মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচারণ , মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আলোচনা ও কবিতা পাঠের আয়োজন করে। প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় রণাঙ্গনের স্মৃতি বর্ণনা করে মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক আবু মুসা হাসান বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় মুক্ত বাজার অর্থনীতি বেছে নেয়ার কারণে সামাজিক বৈষম্য বেড়েই চলেছে । যেভাবে দেশ চলছে এই বৈষম্য দূর হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তবে অর্থনীতিতে দেশ যেভাবে এগোচ্ছে তা আমাদেরকে আশান্বিত করে। তিনি দুঃখ করে বলেন, এটা অত্যন্ত হতাশার যে আমাদের সংসদে এখন রাজনীতিকের চেয়ে ব্যবসায়ী বেশী। তিনি আরও বলেন, দু:খজনক হলেও সত্য যে, সাম্প্রতিককালে আমাদের নাটক, সিনেমাগুলোতে মহান মুক্তিযুদ্ধকে অত্যন্ত খণ্ডিত আকারে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এই ধারা বন্ধ না হলে নতুন প্রজন্মের কাছে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলভাবে উপস্থাপিত হবে।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান ২০১১ সালে তাঁর ছবিসহ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত চল্লিশ টাকার একটি স্মারক নোট উপস্থাপন করেন এবং নোটটি সভাপতির মাধ্যমে লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবকে উপহার দেন।
ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তাইসির মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী। বিজয়ের ৫৩তম বার্ষিকীতে বাংলাদেশে বিদ্যমান বাস্তবতা, সামাজিক অসঙ্গতি, মানবিক সূচকে দেশ পিছিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করে বক্তব্য রাখেন ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মহিব চৌধুরী, ক্লাবের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা, ক্লাবের সহসভাপতি রহমত আলি, ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাসন, সংবাদ পাঠক ডাক্তার জাকী রেজওয়ানা আনোয়ার, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আকবর হোসেন, সাংবাদিক চৌধুরী মুরাদ প্রমুখ।
সৈয়দ নাহাস পাশা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অনুষ্ঠানসূচীতে অন্তত একজন মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচারণ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ হাই কমিশন ও কমিউনিটির অন্যান্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতি দাবী জানান।
রহমত আলি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে আমাদের মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে পরবর্তীতে দেশদ্রোহীতার অপরাধে অপরাধী হতে হতো।
নজরুল ইসলাম বাসন বলেন, এটা খুবই দু:খজনক অভিজ্ঞতা যে দীর্ঘ নয় বছর কাজ করার পরও আমরা আমাদের এলাকায় মাত্র ৬৫ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম-পরিচয় সংগ্রহ করতে পেরেছি।
ডাক্তার জাকী রেজওয়ানা আনোয়ার বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানকে খুবই খাটো করে উপস্থাপন করা হয়। প্রায়শ বলা হয় তিরিশ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। একথা বলে নারীর অবদানকে খুবই সংকীর্ণ করা হয়। সম্ভ্রম হারানো ছাড়াও অনেক নারী সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন। সুতরাং দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বলা বন্ধ করে বরং আমাদের বলা উচিত বত্রিশ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধার ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
আকবর হোসেন তাঁর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পিতা আকলু মিয়ার আত্মত্যাগের স্মৃতিকথা তুলে ধরে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে আমাদেরকে আরও সক্রীয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
কবিতা পাঠ পর্বে স্বরচিত তিরিশ লক্ষ কবিতা পাঠ করেন কবি সারওয়ার-ই আলম, দেশকে দেখি প্রিয়তমার চোখে কবিতা পাঠ করেন কবি সৈয়দ রুম্মান, দেশাত্মবোধক কবিতা পাঠ করেন আমিনুল আহসান তামিম। সাংবাদিক আলাউর খান শাহীন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্বরচিত গীতিকাব্য পাঠ করে শোনান। এছাড়াও সংবাদ পাঠক ও কণ্ঠশিল্পী রূপি আমিন দেশাত্মবোধক গান ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার, সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার’ পরিবেশন করেন। এই গানটি দর্শকদেরকে এতটাই আবেগাপ্লুত করে যে তারা শিল্পীর সঙ্গে সমবেতভাবে কণ্ঠ মিলিয়ে একাত্ম হয়ে যান। ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ সালেহ আহমেদ অতিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরীর বক্তব্য শেষে নৈশভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।