লন্ডনে ইনভেষ্টমেন্ট সামিট: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় সহযোগী হওয়ার আহবান শেখ হাসিনার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
সত্যবাণী

কুইন এলিজাবেথ সেন্টার থেকে: এশিয়া প্যাসিফিক অর্থনীতির উদীয়মান শক্তি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় সহযাত্রী হওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার লন্ডনের কুইন এলিজাবেথ সেন্টারের চার্চিল হলে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ইনভেষ্টমেন্ট সামিট’২০২১’- এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই আহবান জানান তিনি।
বাংলাদেশ সিকিওরিটিজ এন্ড একচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালী যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির আন্তর্জাতিক বানিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী পেনি মর্ডান্ট অনুষ্ঠানে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে এম আব্দুল মোমিন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জোনায়েদ আহমেদ পলক, প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপি ও ঢাকা উত্তরের মেয়র মো: আতিকুল ইসলাম উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানের বিভিন্ন সেশনে অংশগ্রহন করেন। এছাড়া প্রিন্স চার্লস এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের একটি ভিডিও বার্তাও অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসে প্রথমে ভার্চুয়ালী বক্তব্য রাখলেও পরে স্বশরীরে এসে যোগ দেন সামিটে।
চলতি বছর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাজ্যের সহযোগীতার কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ব্রিটেন-বাংলাদেশের পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ঐতিহাসিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের জন্ম সংগ্রাম থেকে শুরু করে আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ঘনিষ্ট সহযোগী হিসেবে বিরামহীন ভূমিকা পালন করে আসছে যুক্তরাজ্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্মের সুবর্ণ জয়ন্তীর এই মুহূর্তে ব্রিটেন বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহৎ রপ্তানী গন্তব্য এবং দ্বিতীয় বৃহৎ বিনিয়োগকারী দেশ। বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের সাফল্য কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশিয়া প্যাসিফিক অর্থনীতির উদিয়মান শক্তি বিনিয়োগ বান্ধব বাংলাদেশে নিজেদের ব্যবসা বানিজ্য সম্প্রসারিত করে ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এই নিশ্য়তা আমি দিতে পারি। শেখ হাসিনা একক অর্থনৈতিক অঞ্চলেরও প্রস্তাব দেন, যেখানে একটি নির্দিষ্ট দেশের কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করতে পারবে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীরা এ ধরনের একটি অঞ্চল নিজেদের জন্য নিতে পারেন। দেশে প্রায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৮টি হাইটেক পার্ক বিদেশি ও দেশীয় বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, জনসংখ্যার সুফল এবং বিনিয়োগকারীরা যাতে প্রতিযোগিতামূলক দামে দক্ষ মানবসম্পদ পায়, তা নিশ্চিতের ওপর আমাদের দৃষ্টি রয়েছে।
তিনি বলেন, বিগত দশকব্যাপী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বাংলাদেশকে বিশ্ব বানিজ্যের অন্যতম আকর্ষনের কেন্দ্র হিসেবে নতুন পরিচয় এনে দিয়েছে। এই কেন্দ্রে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা যেমন লাভবান হবেন, বাংলাদেশও তেমনি পাবে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার সহযোগী শক্তি। ভিশন-২০৪১ এর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নশীল থেকে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার সংগ্রামে বাংলাদেশ দ্রুত দৌড়াচ্ছে উজ্জল আগামীর পথে। এই দৌড়ে শুধু বাংলাদেশের জনগন নয়, ব্রিটেনসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে আমরা সহযোগী হিসেবে চাই।
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অনাবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের কারী ইন্ডাষ্ট্রি ব্রিটিশ জাতীর খাদ্যাভাস বদলে যে ভূমিকা রেখেছে, তাতো ইতিহাসের অংশ। এই কারী পরিপূর্ণ সুস্বাদু করে ব্রিটিশদের পাতে তুলে দিতে যেসব উপাদান দরকার তা আজকের দিনে খুব সহজেই বাংলাদেশে তৈরী করা যায়। বাংলাদেশের মানুষ এখন শুধু সিজনে নয়, প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে সারা বছরই শাক সব্জি, মাছ এগুলোর স্বাদ গ্রহন করছে। তিনি বলেন, ব্রিটিশ জাতির খাদ্যাভাস বদলে দেয়া আপনার কারীর আনুসাঙ্গিক উপাদান আপনি আপনার শিকড়ভূমিতে তৈরী করবেন, বাংলাদেশের জনগন নিশ্চয়ই এটি আশা করতে পারে। বাংলাদেশে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তুলার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে, আপনারা ব্রিটিশ ব্যাবসায়ীদের পার্টনার করে বাংলাদেশে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তুলুন। সব ধরনের সুযোগ সুবিধা আপনারা পাবেন। এতে কোন অসুবিধা হলে আমিতো আছিই।
যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বানিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী পেনি মর্ডান্ট বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৫০ বছরপূর্তী ও দেশটির জাতির জনকের জন্ম শতবার্ষিকীতে আমাদের প্রত্যাশা দুদেশের পারস্পরিক সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরো ঘনিষ্টতর হবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় যুক্তরাজ্যের সহযোগীতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা গিয়ে দেশটির আন্তর্জাতিক বানিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী পেনি মর্ডান্ট বলেন, ব্রিটেন ও বাংলাদেশের মধ্যে গত বছর বানিজ্যের পরিমান ছিলো তিন বিলিয়ন পাউন্ডের মতো। গত পাঁচ বছর যুক্তরাজ্য ছিলো বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বিনিয়োগকারী দেশ। ভবিষ্যতে দুদেশের এই অর্থনৈতিক সম্পর্কও আরো উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই আমরা।

You might also like